চট্টগ্রামে পানগাঁও ও লালদিয়া টার্মিনালও পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে বিদেশিরা
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৯
চট্টগ্রামে পানগাঁও ও লালদিয়া টার্মিনালও পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে বিদেশিরা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব ৩৩ বছরের জন্য বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই দায়িত্ব পাচ্ছে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস। আগামী সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার চুক্তি হবে।


গতকাল বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় টার্মিনালটি নির্মাণ ও পরিচালনায় ৩৩ বছরের জন্য বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এই মেয়াদ আরও ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে এই চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।


লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ছাড়াও ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনালও সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএর হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু সরকারি অনুমোদনের। চালু থাকা টার্মিনালটি হস্তান্তরের চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে প্রথম ধাপে দুটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার চুক্তি হচ্ছে।


এ ছাড়া নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বা এনসিটি পরিচালনা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে দর-কষাকষি শুরু হয়েছে। আগামী মাসে (ডিসেম্বর) এই টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া বে টার্মিনাল প্রকল্পের দুটি টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কাজ চলছে। এর বাইরে বন্দরের চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালেও (সিসিটি) বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে বিদেশিরা। এটিও যদি বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে বন্দরের হাতে থাকবে শুধু একটি টার্মিনাল, জেনারেল কার্গো বার্থ বা জিসিবি।


এদিকে বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তির আগে বন্দর এলাকায় মিছিল, সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। গত মঙ্গলবার এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তির আগে-পরে বন্দর এলাকায় কোনো সভা-সমাবেশের সুযোগ নেই।


বিদেশিদের হাতে একের পর এক টার্মিনাল ছেড়ে দেওয়া নিয়ে এ বছরের শুরু থেকে নানা সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। শুরুতে এনসিটি বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামে বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। এরপর পেশাজীবী ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এই উদ্যোগের আপত্তি জানায়। এ ছাড়া বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বন্দর মাশুল বাড়ানোর অভিযোগ তুলে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামও কর্মসূচি পালন করে।


চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সদস্য জাফর আলম এ বিষয়ে বলেন, লালদিয়া টার্মিনালে যেহেতু কোনো অবকাঠামো নেই, তাই সেখানে টার্মিনাল নির্মাণে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। এ ধরনের গ্রিনফিল্ড প্রকল্প বৈশ্বিক অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত। তবে নিউমুরিং টার্মিনালসহ চালু টার্মিনাল বৈশ্বিক অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সময় চিন্তাভাবনা করা উচিত।


সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) আওতায় জি টু জি ভিত্তিতে (সরকারি পর্যায়ে) লালদিয়া টার্মিনাল ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসকে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের পক্ষে মধ্যস্থতা (ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার) করছে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। তাদের মধ্যস্থতায় এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে বন্দরের প্রায় এক মাস ধরে চলা দর-কষাকষি গত সোমবার শেষ হয়েছে।


দর-কষাকষির পর এখন যা দাঁড়িয়েছে, তাতে মূল কনসেশন চুক্তি ৩৩ বছরের। এর মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণে কম-বেশি তিন বছর সময় লাগতে পারে। এ ছাড়া শর্তপূরণ সাপেক্ষে চুক্তির মেয়াদ ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে ৪৮ বছরের জন্য লালদিয়ার চর পাচ্ছে এপিএম টার্মিনালস। প্রতিষ্ঠানটি পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। টার্মিনালের তিনটি জেটিতে বছরে আট লাখ কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সক্ষমতা থাকবে। টার্মিনালটি নির্মাণে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এপিএম টার্মিনালস।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালকেন্দ্রিক যেসব সেবা দেওয়া হবে, সেগুলোর বিপরীতে মাশুল আদায় করবে এপিএম টার্মিনালস। বিদেশি অপারেটর যা আদায় করবে, সেখান থেকে বন্দরকে কত ডলার দেওয়া হবে, তা ঠিক হয়েছে। তবে তা এখনো প্রকাশ করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদেশি অপারেটরটির কাছ থেকে এককালীন অর্থও পাবে।


লালদিয়া টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে গতকাল ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক চৌধুরী বলেন, এপিএম টার্মিনালস এই প্রকল্পের নকশা, অর্থায়ন, নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। তবে বন্দরটির মালিকানা থাকবে চট্টগ্রাম বন্দরের হাতে। চুক্তির আওতায় এপিএম টার্মিনালস পুরো মেয়াদে ৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। এটি চালু হলে বন্দরের কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সক্ষমতা আট লাখ একক বাড়বে।


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com