ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের উদ্বেগ
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ১৮:২৫
ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের উদ্বেগ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ফিলিস্তিনের রাফায় ইসরাইল বাহিনীর আগ্রাসন ও নিপীড়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বিশ্বের মানবতাবাদীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ।


২৬ মে, রবিবার সকালে এক যৌথ বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের রাফাতে আশ্রয় নেয়া লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যূত নিরীহ মানুষের উপর ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর আক্রমণ, নিপীড়ন এবং ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের (বাবিপ) সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমান এবং কোষাধ্যক্ষ (বাবিপ) ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশিদ ভূঁইয়া।


ফিলিস্তিন নাগরিকদের মৌলিক অধিকার, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন বারবার লঙ্ঘন করে ইসরাইলি বাহিনী যুদ্ধের নামে যে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করাসহ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন আবাসভূমির জন্য ফিলিস্তিনের জনগণের অনস্বীকার্য অধিকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এবং এ লক্ষ্যে ফিলিস্তিন সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য সংলাপ ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তা ফলপ্রসূ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংস্থাসহ সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।


বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ইসরাইলি বাহিনী দীর্ঘ সাত দশক ধরে যুদ্ধের নামে নিপীড়ন, গণহত্যা, আগ্রাসন, জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ফিলিস্তিনে। যার সাম্প্রতিক বর্বরোচিত অধ্যায় চলছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফায়। গাজায় ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত প্রকৃত অর্থে যুদ্ধ নয়, তা আসলে জাতিগত নিধন ও গণহত্যা। গাজায় হাজার হাজার সাধারণ নাগরিকসহ নারী, শিশু, বৃদ্ধ প্রাণ হারাচ্ছে, ধ্বংস করা হয়েছে বেশিরভাগ ঘরবাড়ি। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফা শহরে যে কোনো ধরনের সামরিক হামলা ও আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)।


ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের এই আদালত। রাফায় ইসরাইলি হামলায় উদ্বেগ জানিয়ে এটিকে ‘আরো মানবিক বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস। সর্বোপরি গাজার বাসিন্দাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না এবং এই ভূখণ্ডটি চরম দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে চলেছে।


সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সূচনালগ্ন থেকেই ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এসেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম দিক ছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জন। তিনি ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বাংলাদেশ মেডিক্যাল টিম ও ত্রাণ পাঠিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এই নিপীড়ন, আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরামে বক্তব্য রেখেছেন। এসব আন্তর্জাতিক ফোরামে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে জাতিসংঘের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য তিনি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাচ্ছেন ও জোরালো ভূমিকা রাখছেন।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি তাঁর দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে, গাজায় নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার মানুষকে হত্যা এবং হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, সামরিক উপায় এই সংঘাতের সমাধান সম্ভব নয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) আদেশের উপর ভিত্তি করে চলমান সংকট সমাধানের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সময় এসেছে, যা শুধু ফিলিস্তিনি ও পাশাপাশি বসবাসকারী ইসরাইলিদের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে। গাজায় খাদ্যের তীব্র সংকটের সম্মুখীন ক্ষুধার্ত মানুষের জীবন রক্ষার্থে মানবতার জননী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মিশরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে। অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য দেশের কিছু রাজনৈতিক দল তাদের বিদেশি প্রভুদের খুশি করতে নিরব ভূমিকা পালন করে চলেছে। ইসরায়েলী আগ্রাসন ও গণহত্যার বিষয়ে বিশেষ করে স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র বিরোধী গোষ্ঠী ও তাদের সমর্থিত দলগুলো যে নিরব ভ‚মিকা পালন করছে, তা প্রকারান্তে ইসরায়েলকে সমর্থনের নামান্তর। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।


বিবৃতিতে ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় যারা নিহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা এবং তাঁদের শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়। এছাড়া ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুক্তিকামী মানুষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করা হয়।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com