
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপক এবং শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।
এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের যে সব বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং এ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে পৃথিবীর দেশে দেশে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন রাজপথে রয়েছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ তামারি, ডার্টমাউথ কলেজের অধ্যাপক আন্যিলিস অর্লেকসহ ৫০ জন অধ্যাপককে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও কারারুদ্ধ করা হয়েছে। এসব শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কারো কারো পাজর ভেঙে গেছে। অমানবিক নির্যাতন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। এ ঘটনায় আজকে আমরা লজ্জিত, ক্ষুব্ধ এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি। কেন ৫০ জন অধ্যাপককে মার্কিন পুলিশের গ্রেফতার করতে হল। নিশ্চয়ই আপনার ব্যবস্থাপনায় এমন ত্রুটি আছে যে কারণে অধ্যাপকরা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
১৪ মে, মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের উদ্যোগে সারাদেশের আইডিজিপ্রাপ্ত ১২০টি সরকারি-বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।
মানবিক ও যুদ্ধহীন পৃথিবী আমাদের কাম্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এমন পৃথিবীর চাই না যেখানে একজন প্রফেসর রাস্তায় পুলিশি নির্যাতন সয়ে চিৎকার করে বলে ‘আই অ্যাম অ্যা প্রফেসর’। অন্তত বাংলাদেশের কোনো প্রফেসরকে একথা বলতে হয় না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কথা বলছি। আমরা বলছি পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে আমাদের উৎকর্ষতা শীর্ষে। সেই সময়ে ২০২৪ সালে ৫০ জন অধ্যাপককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশ গ্রেফতার করে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাস রুম ছেড়ে রাজপথে নেমে আসে। যেই শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ইকুইপ্ট, যাদের ক্লাসরুমে কোনো ঘাটতি নেই, কোনো সংকট নেই। সর্বাধিক আধুনিকতায় সজ্জিত যেই ক্লাসরুম। যেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষকরা পড়ায় সেই ক্লাসরুমের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা রাজপথে। শিক্ষকরা পুলিশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এই যুগে কী তা হওয়ার কথা? কিন্তু হচ্ছে। পৃথিবীর অন্য কোথাও শিশু নির্যাতন, মাকে হত্যা, বাবাকে হত্যা. যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার, মাদকের ব্যবহার চলছে।
উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, সারা বিশ্ব একটি গ্রাম। সেই বিশ্বের যেকোনো জায়গার সমস্যা আপনার ক্লাসরুমকে যে অনিরাপদ করতে পারে তার বড় ক্ষেত্র বা প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আজকের বাস্তবতা। আমাদের সমস্যা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক। অনেক কিছুর সংমিশ্রণ। কিন্তু আমরা সেই ক্লাসরুমও চাই না যেখানে ইসরাইল ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের রাজপথে বেরিয়ে আসতে হয়। শিক্ষককে গ্রেফতার করতে হয়। আমরা সেরকম একটি ক্লাসরুম চাই যেখানে দাঁড়িয়ে একজন শিক্ষার্থী বলতে পারে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার একরাতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে শরণার্থী করে আর বাংলাদেশ মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে তাদের আশ্রয় দেয়। আমরা সেই ক্লাসরুম চাই যেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস পড়ানো হয় এবং প্রাচ্যের আত্মশক্তিকে বলীয়ান করার জন্য নিজেদের ইতিহাস সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়। আমরা সেই ক্লাসরুম চাই যেখানে মানবিক পৃথিবী তৈরির সকল উপকরণ থাকবে। এর কোনো কথা অতিরঞ্জন নয়।
ড. মশিউর রহমান বলেন, আগামী বিশ্বে বাংলাদেশসহ এশিয়া উপমহাদেশে আমাদের যে প্রাচীন ঐতিহ্য সেই ঐতিহ্যের শক্তিতে বলীয়ান করে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী। তাদেরকে মানবিক শিক্ষার্থী হিসেবে তৈরি করতে চাই। ৩০ লক্ষ শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এবং ২ লক্ষ মা-বোন নির্যাতন সয়ে সয়ে যে দেশমাতৃকা এঁকেছেন সেই দেশমাতৃকার শক্তি অপূর্ব হবে। এই উপমহাদেশের অনন্য সৌন্দর্য- আমরা কোথাও যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত না হয়ে একটি ভিন্ন রকমের পৃথিবী সৃষ্টি করতে চাই। চতুর্থ শিল্প বিল্পব শুধু তাই নয় যেখানে শুধু যন্ত্রের ঝনঝনানি থাকবে। আমি মনে করি, আমরা সঠিক ধারায় আছি। আমাদের অর্থাভাব থাকতে পারে কিন্তু আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য হচ্ছে- গ্রামে একজন মানুষ যখন না খেয়ে থাকার উপক্রম হত, তখন একজন অনাত্মীয় পাশের পরিবারটি তাকে আগলে রেখে বড় করেছে। এই যে ঐতিহ্য তার আগামীর পথ চলা নিঃসন্দেহে অপূর্ব, শক্তিমান এবং স্থায়ী হবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য বলেন, নিজেদের মনে অসম্ভব আত্মশক্তি রাখবেন। আমরা যেভাবে যে পথে এগোচ্ছি আমরা অন্যদের জন্য উপমা হতে চাই। নানা সীমাবদ্ধতা আমাদের আছে, প্রতিবন্ধকতা আছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ ধরে যে স্মার্ট বাংলাদেশ সেখানে প্রতিটি সন্তানকে সেভাবে করে বড় করে তুলব যে যুদ্ধ এবং মাদকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শক্তিমত্তার, মানবিকতার এক উচ্চকিত বাংলাদেশ তৈরি করবে। আপনাদের হাত ধরে আমাদের সন্তানেরা তৈরি হবে এ আমার বিশ্বাস। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষাসচিব সোলেমান খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদার, স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম, কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান, সিইডিপির ডিপিডি আব্দুর রহীম, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ শারমিনা পারভীনসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সিইডিপির আইডিজিপ্রাপ্ত ১২০টি কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ।
বিবার্তা/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]