৩৫ বয়সসীমার আন্দোলনে হামলা, প্রতিবাদসহ ৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ১৩:০০
৩৫ বয়সসীমার আন্দোলনে হামলা, প্রতিবাদসহ ৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার আন্দোলনে পুলিশের হামলার প্রতিবাদসহ ৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ।


২৫ মার্চ, শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।


মানববন্ধনে চাকরিপ্রার্থীরা বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫, অবসরে বয়সসীমা বৃদ্ধি, চাকরিতে আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদে বঙ্গবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেক্স (বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং একটি ম্যুরাল) স্থাপনের দাবিসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য গেল ১৮ মার্চ, শনিবার দুপুর ২টায় জাতীয় প্রেসক্লাব,ঢাকায় শিক্ষার্থী সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে যখন শিক্ষার্থীরা সমাবেশস্থল থেকে ফিরে আসছিলেন তখন পেছন থেকে পুলিশ অতর্কিত হামলা করে শিক্ষার্থীদের উপর। গুরুতর আহত হয় নারী শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী। পুলিশের এহেন আচরণের প্রতিবাদসহ আগের ৩ দফা দাবিতে তাদের মানববন্ধন।


তারা বলেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত চাকরি প্রার্থীরা বিগত প্রায় ১০ বছর যাবৎ সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে আসছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ এর পাতা ৩৩ এবং শিক্ষা,দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে বলা আছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


২০১১ সালে সরকারি চাকরি হতে অবসরের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি এবং চাকরি শেষে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ স্বাভাবিক চাকরি প্রক্রিয়া ক্ষেত্রে অন্তরায়।


বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কমিশনে (বিসিএস) আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর হলেও জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে (বিজেএস) আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর, সরকারি নার্সিং এ ৩৫ বছর এবং বেসরকারি স্কুল/কলেজে ৩৫ বছর। দুঃখজনক হলেও সত্যি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংস্থাগুলো তাদের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা সরকারি মানদন্ড অনুযায়ী ৩০ বছরকেই অনুসরণ করে।


তারা আরও বলেন,বাংলাদেশের জাতীয় যুব নীতিতে ১৮-৩৫ বছর বয়সীদের যুবক বলা হলেও ৩০ বছর হলেই তাদেরকে চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩২ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীতকরণ করা হয়, যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৫৭ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর হলেও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি।


পার্শ্ববর্তী দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তারা বলেন, বিশ্বের ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর, কোনো কোনো দেশে তা উন্মুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশেগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিভিন্ন রাজ্য ভেদে চাকরিতে আবেদনের বয়স সীমা ৩৫-৪৫ বছর, মালদ্বীপে ৪৫ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৩৫ বছর,নেপালে ৩৫ বছর, আফগানিস্তানে ৩৫ বছর। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদশে এবং পাকিস্তানেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর।


তারা বলেন,কোভিড-১৯ মহামারির সময় প্রায় সকল প্রকার চাকুরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি/পরীক্ষা বন্ধ ছিল। পৃথিবীর অনেক দেশ চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর বা তার বেশি থাকার সত্ত্বেও করোনা মহামারির কারণে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আরো ২-৩ বছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে।


এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ৭১ বার বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিটি উত্থাপিত হয়েছে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি লিখিত ভাবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য সুপারিশ করলেও কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।


তাই লক্ষ লক্ষ চাকরি প্রার্থীদের প্রাণের দাবি অনতিবিলম্বে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছর এবং অবসরে বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হোক।


এছাড়া চাকরির আবেদন ফি সর্ব্বোচ ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে (১ম শ্রেণীতে ২০০ টাকা, ২য় শ্রেণীতে ১৫০ টাকা, ৩য় শ্রেণীতে ১০০ টাকা, ৪র্থ শ্রেণীতে ৫০ টাকা) প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকির উদ্যোগ নিতে হবে। একই তারিখে একই সময়ে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।


এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী, আইন অনুষদের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এর নামে বঙ্গবন্ধু ল’ কমপেক্স, বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং একটি ম্যূরাল নির্মাণসহ দাবির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে স্থান নির্ধারণের জন্য আইন বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অর্থাৎ ‘বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেক্স’ এর কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পুনরায় দৃষ্টিও আর্কষণ করেন তারা।


মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক শরীফুল হাসান শুভ এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব মোহাম্মদ রাসেল। বক্তব্য রাখবেন ঢাবি শাখার আহ্বায়ক সানোয়ারুল হক সনি,ঢাবি শাখার সদস্য সচিব এ আর খোকন,কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তা সুলতানা,যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম জনি,সদস্য এসএম ইমনসহ প্রমুখ।


বিবার্তা/ফারুক/রাসেল/এমএ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com