দৌলতপুরে
একই ক্লিনিকে এক মাসে দুই প্রসূতির মৃত্যু : ক্লিনিক বন্ধ ঘোষণা
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৩:৪৫
একই ক্লিনিকে এক মাসে দুই প্রসূতির মৃত্যু : ক্লিনিক বন্ধ ঘোষণা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাত ১১টার দিকে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক এক প্রসূতি সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।


পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুরে সিভিল সার্জনের নির্দেশে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন ক্লিনিকটি আজ বুধবার দুপুরে বন্ধ করে দেন।


সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।


নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জুর হোসেন মঞ্জুর মেয়ে। অপর নিহত আখি খাতুন ফিলিপনগর পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।


মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার্ড করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হন। কিন্তু রাত ১১টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।


এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেন।


অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রæত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।


এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যান্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”


এবিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হুদা বলেন, গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পুলিশ পাঠায়। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রæত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।


এরপর দুই প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে ২জন রোগীর মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনা কর্তৃপক্ষকে বলেছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।


একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।


বিবার্তা/শরীফুল/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com