
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়ন পরিষদে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ১% বরাদ্দ থেকে নেওয়া ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তীর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউনিয়ন প্রশাসক রয়া ত্রিপুরার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসক রয়া ত্রিপুরা নিয়ম-বহির্ভূতভাবে প্রকল্প গ্রহণ করে নামমাত্র কিছু রঙের কাজ দেখিয়ে পুরো বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন। প্রকল্পের কাগজপত্র এখন আর ইউনিয়ন অফিসে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ ওঠার পর সংশ্লিষ্ট নথিপত্র গায়েব করে ফেলা হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি।
জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন পরিষদের ভবন ও আসবাবপত্রে রঙ করার কথা বলা হলেও বাস্তবে শুধুমাত্র ভবনের সামনের দেয়ালে রঙ করা হয়েছে। পরিষদের অভ্যন্তরে মাত্র চারটি টুল-চেয়ার রঙ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পরিষদের পেছন ও পাশের দেয়াল, চেয়ারম্যানের কক্ষসহ অন্য কোথাও রঙ করার কাজ হয়নি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভবনের সামনের অংশে হালকা হলুদাভ রঙের প্রলেপ দেওয়া হলেও সেটি কসমেটিক সংস্কারের বাইরে কিছু নয়। পরিষদের ভিতরে সংস্কার কার্যক্রম নেই বললেই চলে। পরিষেবা নিতে আসা কয়েকজন নাগরিক জানান, ভেতরে চারটি টুল চেয়ার আর ভবনের সামনে ছাড়া আর কিছুই রঙ করা হয়নি।
প্রকল্পে ব্যয়ের অনিয়ম সম্পর্কে একটি অডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে, যেখানে প্রশাসক রয়া ত্রিপুরা প্রকল্পের বরাদ্দের ৩০% অর্থাৎ ৯৭,২০০ টাকা “কাটমানি” হিসেবে রেখে বাকি অর্থ ভাগ করে নেওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন। অডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ১ লাখ টাকার ভেতরে সামান্য কিছু রঙ করার কাজ শেষ করতে হবে এবং বাকি অর্থ বিভিন্ন খাতে মিথ্যা খরচ দেখিয়ে সমন্বয় করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জুলধা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সাবেক সচিব) মিলটন চৌধুরী প্রকল্পের ঠিকাদার, মিস্ত্রির নাম বা কোনো বিল ভাউচার দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, 'উর্ধ্বতন নির্দেশনায় এসব তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। আপনারা এলজিইডি অফিসে যোগাযোগ করেন। কিন্তু এলজিইডি প্রকৌশলী তাসলিমা জাহান তথ্য দিতে নারাজ। এতে প্রকল্পের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগ আরও জোরালো হয়।
প্রকল্প সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকা ইউপি সদস্য মো. ওসমান জানান, 'ইউনিয়ন পরিষদ ভবন রঙ করণের প্রকল্পে আমাকে সভাপতি করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পুরো কাজটি করেছেন এসিল্যান্ড, সচিবের মাধ্যমে। বর্তমানে সচিব মিলটন চৌধুরী কাজটি সম্পন্ন করেছেন। আমাকে এসিল্যান্ড বলেছিলেন, এক লাখ টাকার মধ্যেই কাজটি শেষ করতে হবে।''
এ বিষয়ে পরিষদের প্রশাসক এসিল্যান্ড রয়া ত্রিপুরার বক্তব্য জানার জন্য বারবার মুঠোফোনে কল করা হলেও ফোন কেটে দেন। কিছুতেই সাড়া দেননি। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তাতেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে, একই কর্মকর্তার কাঁধে একসাথে তিনটি ইউনিয়নের প্রশাসক, এসিল্যান্ড এবং ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল। কর্ণফুলীর শিক্ষানুরাগী নাগরিকরা জানান একজন কর্মকর্তার উপর এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে প্রকৃত নাগরিক সেবা ব্যাহত হয়। দ্রুত অন্য কাউকে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)-এর মহাসচিব ও বিশিষ্ট কলামিস্ট অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, 'জনগণের স্বার্থে প্রশাসনিক দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রাখতে হবে। একজন কর্মকর্তাকে একাধিক ইউনিয়নের দায়িত্ব দিলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সংকটে পড়ে। দরকার দ্রুত স্থানীয় নির্বাচন দেওয়া। না হয় দুই দিকেই ক্ষতি হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে গিয়ে প্রশাসন তাঁর নিজ কার্যালয়ের কাজ করতে পারছে না।'
চট্টগ্রাম জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপসচিব) মো. নোমান হোসেন বলেন, 'আমি বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।'
প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, কাগজপত্র গায়েব, কাজ না করেই বরাদ্দ আত্মসাৎ এবং অডিও ক্লিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ—সব মিলিয়ে এডিপির ১% বরাদ্দ অপব্যবহারের চিত্র প্রকটভাবে সামনে এসেছে। এ দায়িত্ব থেকে প্রশাসক কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে স্থানীয়দের দাবি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যেন কর্ণফুলীর পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ ও এলজিইডি অফিসে অভিযান চালায়।
বিবার্তা/জাহেদ/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]