
তরুণদের এই দলটি মূলত মুঠোফোনে বিভিন্ন ভিডিও ধারণ করে সেটি টিকটকে পোস্ট করে। আরও ভালো মানের ভিডিও করার জন্য তাদের একটি উন্নত ক্যামেরা প্রয়োজন ছিল। এ জন্য তারা উন্নত মানের ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। তাই ফেসবুকে ফটোগ্রাফার নুরুল ইসলামের পেজ ঘুরে তাঁকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। তারপর বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলার জন্য নুরুল ইসলামকে অনুরোধ জানানো হয়। নুরুল রাজি হওয়ার পর তরুণেরা বিকাশে ৫০০ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করে। পরদিন সন্ধ্যায় তাঁকে একই মুঠোফোন নম্বর থেকে যোগাযোগ করে ধানমন্ডির শংকর চৌরাস্তায় আসতে বলা হয়। এরপর তাঁকে কুপিয়ে হত্যার পর দুটি ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় তারা।
ঢাকার হাজারীবাগের জাফরাবাদ এলাকায় এই হত্যার ঘটনাটি ঘটে ১৬ মে সন্ধ্যায়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকা থেকে ১০ তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম।
ফটোগ্রাফার নুরুল ইসলাম হত্যার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মাসুদ এ কথাগুলো বলেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তরুণদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নুরুল ইসলামের কাছ থেকে উন্নত মানের ক্যামেরাটি ছিনিয়ে নেওয়া। নুরুল ইসলাম তাঁর সহকারীকে (ইমন) নিয়ে রিকশায় করে যখন জাফরাবাদে যান, তখন তরুণদের দলটি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ক্যামেরাটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ইমন রিকশা থেকে নেমে দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। আর নুরুল ইসলাম ক্যামেরাটি দিতে চাননি। এ সময় তরুণদের দলটি তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ক্যামেরাটি ছিনিয়ে নেয়।
ঘটনাস্থলের আশপাশের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে নুরুল ইসলামের হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয় বলেও জানান ডিসি মাসুদ আলম। তিনি বলেন, হত্যায় জড়িতদের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। তাদের কাছ থেকে নুরুল ইসলামের দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা একটি চাপাতি, একটি রামদা ও একটি বড় ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নাঈম আহম্মেদ, শাহীন আকন্দ, শাহীন চৌকিদার, রহিম সরকার, নয়ন আহম্মেদ, রিদয় মাদবর, আব্দুর রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও মো. আরমান। এই দলের মূল নেতা হচ্ছেন নাঈম আহম্মেদ।
যেভাবে ফাঁদে ফেলে হত্যা করা হয়
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফটোগ্রাফার নুরুল ইসলামের ‘Nurislam Photographer’ নামে একটি ফেসবুক পেজ আছে। এই পেজে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবি তুলে পোস্ট করেন। এই পেজের মাধ্যমেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। টিকটকে আসক্ত তরুণদের দলটি নুরুল ইসলামকে এই পেজের মাধ্যমেই খুঁজে পায়। ১৫ মে একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে নুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তরুণদের একজন। তারপর একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলার জন্য নুরুল ইসলামকে অনুরোধ জানানো হয়। নুরুল ইসলাম রাজি হওয়ার পর তরুণেরা বিকাশে ৫০০ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেন। পরদিন ১৬ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁকে একই মুঠোফোন নম্বর থেকে যোগাযোগ করে ধানমন্ডির শংকর চৌরাস্তায় আসতে বলা হয়।
ডিসি মাসুদ আলম বলেন, বিয়ের ছবি তুলতে নুরুল ইসলাম ও তাঁর সহকারী মো. ইমন মতিঝিলের এজিবি কলোনির বাসা থেকে শংকর চৌরাস্তায় আসেন। ওই মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন তরুণ দলটির দলনেতা নাঈম আহম্মেদ। তিনি নুরুল ইসলাম ও ইমনকে একটি অটোরিকশা নিয়ে জাফরাবাদ পুলপার ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে যেতে বলেন। রাত ৮টার দিকে জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় এলে তরুণদের দলটি অটোরিকশার গতিরোধ করে। এ সময় ইমন রিকশা থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যান। তরুণ দলটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে নুরুল ইসলামের মাথা, ঘাড়, বাহু ও হাতের আঙুলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় নুরুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাজারীবাগ থানা-পুলিশ জানায়, গত ১৭ মে শনিবার নুরল ইসলামের বড় ভাই ওসমান গনি বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]