
টেকনাফ থানার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘুষ না দেওয়ায় আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে মারধর ও নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের অভিযোগ, আসামি আব্দুর রহমানকে রিমান্ডে নির্যাতন না করার বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন টেকনাফ থানার পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম। চাহিদা মত ঘুষের টাকা দিতে আসামির পরিবারের লোকজন ব্যর্থ হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রেম সংক্রান্ত একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাদী পক্ষ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে টেকনাফ থানায় পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের ইন্ধনে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। এবং সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়ভারও নেন এসআই মাজরুল ইসলাম। ওই মামলায় গত ৫ই এপ্রিল বাড়ি মিনা বাজার থেকে আসামি আব্দুর রহমানকে আটক করেন পুলিশ। পরে পুলিশ আসামির রিমান্ড চেয়ে কক্সবাজার জেলা বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করলে ২৮শে এপ্রিল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাকিম আদালতে আসামি আব্দুর রহমানের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামির রিমান্ড কার্যকর করতে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে এসআই মাজহারুল ইসলাম থানায় নিয়ে যান। পরবর্তীতে রিমান্ডে নেওয়া আসামির উপর কোন ধরনের নির্যাতন করা হবে না বলে পরিবারের লোকজনের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন পুলিশের এসআই মাজহারুল ইসলাম।
আসামি আব্দুর রহমানের মা বেগম বাহার আদালত পাড়ায় নির্যাতনকারী পুলিশের বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। উচ্চস্বরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন পুলিশ রিমান্ডের নামে কীভাবে আমার ছেলের হাত ভেঙ্গে দিতে পারে? দেশে কি বিচার নাই? এ ঘটনায় সঠিক বিচার চাই।
রিমান্ডে আসামির হাত ভেঙ্গে দেওয়া প্রসঙ্গে আব্দুর রহমানের মা বেগম বাহার বলেন, প্রেম ঘটিত বিষয়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে সাজানো অপহরণ মামলায় আটক করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গত শনিবার আমার বড় ছেলে আব্দুর শুক্কুরের কাছে টেকনাফ থানার পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মাজাহারুল ইসলাম তার সোর্স মারফতের মাধ্যমে রিমান্ডে মারধর না করার শর্তে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। দিনমজুর বাবার পক্ষে পুলিশের চাহিদামতো এত টাকা দেওয়া সম্ভব না বলে অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে টাকা দিতে ব্যর্থ হলে রিমান্ডের নামে ছেলের উপর অমানবিক নির্যাতন করে এ পুলিশ কর্মকর্তা। আমার সন্তানকে রিমান্ডে নিয়ে ঘুষ চাওয়া হয়েছিল, ঘুষের টাকা দিতে পারিনি বলেই কি? পুলিশকে আমার সন্তানের উপর অমানবিক নির্যাতন করতে পারে? কি কারণে ছেলের ডান হাত ভেঙ্গে দেওয়া হলো? দেশে কি গরিবের কোন বিচার নাই?
আসামীর আইনজীবী সেলিমুল মোস্তফা বলেন, আসামিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করার নিয়ম আছে তবে কাউকে শারীরিকভাবে আঘাত করার কোন নিয়ম নেই।
ঘুষ না পেয়ে পুলিশ অফিসার আসামিকে মারধর করে হাত ভেঙে দেওয়া এটা আমরা আদালতকে অবগত করার পরে বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় আসামীর হাত ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি দেখে আসামিকে কক্সবাজার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার নেওয়া ও রিমান্ডে শারীরিক নির্যাতনের সচিত্র প্রতিবেদন দেওয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এব্যপারে টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম বলেন, আসামিকে কোন ধরনের রিমান্ডে এনে কোন মারধর করা হয়নি। তাহলে কীভাবে হাত ভেঙে গেল জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
উল্লেখ্য, এ পুলিশ কর্মকর্তা (এসআই) মাজাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদক সেবনসহ, ইয়াবা কেনা-বেচা ও মাদক কারবারিদের সাথে সখ্যতার মাধ্যমে মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তোলার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রিমান্ডে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া শারীরিকভাবে আঘাত করার কোন নিয়ম নেই। যদি কোন পুলিশ কর্মকর্তা আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের বাহিরে শারীরিকভাবে আঘাত করে তাহলে আদালতের দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
বিবার্তা/ফরহাদ/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]