
প্রকৃতি যখন গ্রীষ্মের খরতাপে ক্লান্ত, তখন হঠাৎ করেই কোথাও থেকে ফুটে ওঠে জারুল ফুল। তার নরম বেগুনি রঙ যেন রুক্ষ প্রকৃতিকে ছুঁয়ে দিয়ে বলে—‘আছো তুমি, আমি জানি!’ এই ফুল শুধু চোখে নয়, মনেও গেঁথে যায়। এমনই চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যে ধরা দিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
সেখানে সবুজ রাঙা ভ'রে মধুকূপী ঘাসে অবিরল
সেখানে গাছের নাম : কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল
সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ।'
চরণগুলো তিরিশোত্তর বাংলা কাব্যের শক্তিমান কবি, বাংলা সাহিত্যের পঞ্চ পান্ডবদের অন্যতম প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের 'রূপসী বাংলা' কাব্যের 'এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে' কবিতায় তিনি গ্রামবাংলার প্রকৃতি নিপুণ হাতে শিল্পীর তুলিতে এঁকেছেন একান্ত মনে। তার কবিতায় বাদ যায়নি গ্রীষ্মের খরতাপের একটু প্রশান্তি বেগুনি আভার জারুল ফুলও। জীবনানন্দের শহরের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের পাশে পাশে, ছাত্রী হলের রাস্তার পাশে, হতাশা চত্বর, প্রীতিলতা চত্বর, শিক্ষক ডরমিটরি, কাপল রোডে দেখা মিলে এই অপরূপ সুন্দর ফুলের। অস্বস্তিকর গরমে শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের স্বস্তি দিচ্ছে মৃদু বাতাস জারুল ফুলের সৌন্দর্য ও গাছের ছায়া।
জারুলের বৈজ্ঞানিক নাম Lagerstroemia speciosa। এটি একটি মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ, যা বাংলাদেশের শহর ও গ্রাম উভয় অঞ্চলে দেখা যায়। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে এর ফুল ফোটে। প্রতিটি ফুলের ছয়টি পাপড়ি থাকে, যা গুচ্ছাকারে ফুটে গাছকে রঙিন করে তোলে। দূর থেকে মনে হয় যেন রঙের মেঘে ছেয়ে গেছে ডালপালা।
জারুলের সৌন্দর্যই শুধু নয়, এর রয়েছে ওষুধি গুণও। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে জারুল পাতার রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। এর ছাল ও বীজ থেকেও ওষুধ তৈরি হয়। সেই সঙ্গে এটি পরিবেশবান্ধব একটি গাছ—বায়ু পরিশোধন করে এবং শহরের তাপমাত্রা হ্রাসে সাহায্য করে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যস্ত ক্যাম্পাসের রাস্তার পাশে যখন জারুল গাছ ফুলে ফুলে সেজে ওঠে, তখন সেটা যেন প্রকৃতির এক নীরব প্রেমপত্র। সেই প্রেমপত্রে শুধু রঙ নেই, আছে অনুভব, শীতলতা আর নান্দনিকতা।
বিবার্তা/মৃত্যুঞ্জয়/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]