
ভেতরে কিংবা বাইরে সব জায়গায় ময়লা। দেয়ালে দেয়ালে বাসা বেধেছে তেলাপোকা। হাসপাতাল যেন তেলাপোকাদের বাড়িঘরে পরিণত হয়েছে। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই ২৫০ শয্যা ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছেন। রয়েছে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ারও অভিযোগও।
বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, বিছানার চাদরের নিচে অসংখ্য তেলাপোকা বাসা বেঁধেছে। খাবার থেকে মেঝে সবখানে যেন তেলাপোকার রাজ্য। শুধু তাই নয় এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন রোগী ও স্বজনকে তেলাপোকা কামড় দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে ছেড়েছে হাসপাতাল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালটি ১৯৮৭ সালে পঞ্চাশ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরুর পর ১৯৯৭ সালে একশ শয্যা এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে আড়াইশ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এ হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন সাত-আটশ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন।
গ্রামাঞ্চলের অসহায় দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল ২৫০ শয্যা ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল। জেলার ৫টি উপজেলার রোগীরা ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি জেলার রোগীরাও ছুটে আসছেন আড়াইশ শয্যার এ হাসপাতালটিতে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা। নিদিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেই চোখে পরবে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে খাবারের উচ্ছিষ্ট পরে আছে। পরিস্থার পরিচ্ছন্নতার অভাবে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ সেবা প্রত্যাশীরা।
শুধু তাই নয়, হাসপাতালটির মেডিসিন, গাইনীসহ অধিকাংশ বিভাগের শয্যায় সেবা নেয়া রোগীর আশপাশ অপরিচ্ছতার পাশাপাশি সংলগ্ন ওয়াল কিংবা সংরক্ষিত জিনিসপত্র রাখার জায়গাগুলোতে বাসা বেধেছে তেলাপোকা। এ অবস্থায় সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করছে। একই সাথে অভিযোগ তুলছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার।
সেবা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ বলেন, চিকিৎসা সেবা কাঙ্ক্ষিত নয়। তবুও মানুষের ভরসাস্থল হাসপাতালটি। কারণ অভাবের তাড়নায় সরকারের দেয়া সেবা নিতে আসেন রোগীরা। জেলা শহরের বাসিন্দা হওয়ায় এ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চাকুরি করছেন ডাক্তাররা ছাড়াও অনেকে। বদলির কোন নামগন্ধ নেই। হাসপাতালের পাশেই নিয়মিত প্রাইভেট ক্লিনিকে বসে পরামর্শ দিচ্ছেন। এসব চিকিৎসক হাসপাতালে এসে কীভাবে ভালো চিকিৎসা সেবা দিবে? তাহলে তো বাড়তি আয় কমে যাবে। বিষয়টি সরকারকে কঠোরভাবে দেখা দরকার। সেই সাথে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় অপরিচ্ছন্নতা চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে নিয়মিত। তাই বাধ্য হয়েই সেবা নিতে আসছেন জানান তারা।
আরিফ নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, অসুস্থ রোগী থাকা বেডে যদি তেলাপোকা থাকে তাহলে মানুষ কিভাবে সুস্থ হবে? বিশেষ করে রাতের বেলায় রোগী ও তার স্বজনরা ঘুমাতে গেলে তেলাপোকা কান বা মুখে ঢোকার চেষ্টা করে। এতে আমরা বেশ আতঙ্কিত।
হাসপাতালে ভর্তি নাজমা নামে এক রোগী জানান, একটু বাতাস হলে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে পেটের নাড়িভুঁড়ি উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। আরেক রোগী জানান, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলার জ্বলন্ত প্রমাণ হাসপাতালের নোংরা অবস্থা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, সবখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা আর নোংরা পরিবেশের কারণে নাক-মুখ বন্ধ করে হাসপাতালে ঢুকতে হয়। কিন্তু কারও যেন কোনো দায় নেই। হাসপাতাল যেন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। যদিও রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা মানুষদের অজ্ঞতা এবং বহুল ব্যবহারের কারণে ওয়ার্ডসহ ওয়াশ রুমগুলো দ্রুতই নোংরা হয়ে যায়। তাই স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।
হাসপাতালটির শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো. সাজ্জাদ হায়দার শাহীন জানান, অপরিচ্ছন্ন অবস্থার কথা বরাবরেই বলা কথা বলা হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। তারা চেষ্টাও করছেন। তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আরো প্রয়োজন বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।
আর জেনারেল হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহা. ফিরোজ জামান, এমন অবস্থার কথা স্বীকার করে জনবল সংকটের কারণেই এমন পরিস্থিতি বলে জানান। তিনি বলেন, নিজেদের সাধ্যমতো সেবা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীকে সেবা দিতে হলে অবশ্যই এ হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজে রূপান্তরিত করতে হবে।
বিবার্তা/মিলন/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]