মাদ্রাসা অধ্যক্ষের কাণ্ড
নাজিরপুরে বিনামূল্যের সরকারি বই কেজি দরে বিক্রি!
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১১
নাজিরপুরে বিনামূল্যের সরকারি বই কেজি দরে বিক্রি!
নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বিনামূলের সরকারি বই ফেরিওয়ালাদের কাছে কেজি দরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে বৈঠাকাটা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ সুমন সরকার বইগুলো জব্দ করেন। বইগুলার ওজন প্রায় ১৪ শত কে‌জি যাহার যারমূল্য আনুমানিক ১ লাখ টাকা।


শুক্রবার (৩১জানুয়ারি) সকা‌লে উপজেলার ৩ নং দেউলবাড়ী ইউনিয়‌নের বিলডুমুরীয়া গ্রামের ডুমু‌রিয়া নেছা‌রিয়া বা‌লিকা (আলিম) মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।


জানা যায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একেএম ফজলুল হক তার মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এর মাধ্যমে ৩০ (জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে গোপনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত ২০২২-২৩-২৪ ও ২৫ শিক্ষাবর্ষের বি‌ভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের সরকারি বিনামূল্যের বই কেজি দরে ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করেন। স্থানীয়রা ফেরিওয়ালাদের কাছে সরকারি বই দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জবাবে ফেরিওয়ালারা জানান, মাদ্রাসা অধ‌্যক্ষের কাছ থেকে বইগুলো কিনেছেন তারা।


ফেরিওয়ালা মামুন জানান, বইগুলো ডুমু‌রিয়া নেছা‌রিয়া বা‌লিকা আলিম মাদ্রাসা থেকে কিনেছেন। এছাড়া আরো ৫ টি পুরাতন টিউব‌য়েল এবং আয়রন ব্রিজের লোহার পাত কে‌জি দ‌রে কি‌নে‌ছি ওই একই মাদ্রাসা থেকে।


নাইমুল হাসান নামের এক স্থানীয় জানান, গতদিন রাত সা‌ড়ে ৮ টায় বরিশাল থেকে বাড়িতে আসি দেখি একটি ট্রালারে বই রাখা উপরেও আছে কিছুক্ষন পরে দেখি ছেড়ে গেছে। তার কিছুক্ষন পরে দেখি দপ্তরি, তার কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন কিছু বই বিক্রি করি ১৫ টাকা দরে।


মাদ্রাসার দপ্তরি নুরুল হক বলেন, প্রিন্সিপাল হুজুর দরদাম করেছে। আমাকে বলেছে মাইপা দিতে। দুটি চাবি রুমের একটা শরীফ ও আর একটা অফিস সহকারীর কাছে। শরিফ ভাই আসতে দেরি হওয়ায় আমি মাদ্রাসার চাবি এনে বই বের করে দেই । বই, খাতা, সাদা কাগজ, লোহা পচিশ হাজার তিন শত টাকায় বিক্রি করি।


মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: একে এম ফজলুল হক জানান, বই ওগুলো পুরান, কিছু বন্যায় ভিজা আছে। আমাদের পরিক্ষার খাতা এগুলো বিক্রির জন্য বলেছি। তারপর কি হইছে আমি বলতে পারি না। পরে থাকা টিওবয়েল বিক্রির জন্য বলেছি। ২৫ সালের অল্প কয়ডা বই পাইছি তা শিক্ষার্থী‌দের মা‌ঝে বন্টন ক‌রে দি‌য়ে‌ছি। এটা বিক্রির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। ইউনও স্যার, ম্যাধমিক অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি, যে স্যার আমি অনুমতি ছাড়া বই বিক্রি করেছি আমাকে ক্ষমা করে দেনে।


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহিদুল ইসলাম বলেন, সকালে আমার কাছে খবরটা পৌছে, পৌছার পরে অধ্যক্ষকে রিন দিলাম অধ্যক্ষ বলেন পুরান খাতাপত্র, একটা কলের মাথা, কয়টা পুরান বই। সরকারি কোনো বই বিক্রি করতে পারেন না। আপনার যদি অতিরিক্ত বই থাকে সেটা আপনি উপজেলায় জমা দিবেন। যদি বিক্রি করতে চান তাহলে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিক্রি করতে হবে। বিক্রি সকল টাকা সরকারি কোষাগরে জমা দিতে হবে। না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বই ক্রেতা মামুন বলেন, আমাকে প্রিন্সিপাল হুজুর ফোন দিছে। আপনি ভাঙ্গাড়ির ব্যবসা করেন আমি বলছি করি। আমাগো (অধ্যক্ষ) কিছু পুরান বই আছে নিলে চারটা দিকে আসবেন। ১২- ১৪ কেজি মাল হবে। পাচঁটি কল কিনছি ৫০ টাকা কেজি ধরে। মোট দাম হয়েছে ২৫ হাজার ৩শত টাকা।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুপ রতন সিংহ জানান, বিনা অনুমতিতে পাঠ্যপুস্তকসহ কিছু মালামাল বিক্রির অভিযোগ আসে, অভিযোগটা তদন্ত করার জন্য থানা পুলিশকে বলে দি। থানা পুলিশ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।


নাজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহমুদ আল ফরিদ ভূইয়া বলেন, এবিষয়ে বৈঠাকাটা তদন্ত কেদ্রর অফিসার গেছে। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রীয়াধীন।


বিবার্তা/ম‌শিউর/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com