
গত ২৫ ডিসেম্বর বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি পূর্ব বেতছড়া ত্রিপুরা পাড়ায় সংঘঠিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
২৭ ডিসেম্বর, শুক্রবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থানজামা লুসাই, জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ কাওছার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রিমন চাকমা, সহকারী পুলিশ সুপার মো. নুরুল আনোয়ার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ. দা) রুপায়ন দেব, জেলা পরিষদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, নাছির উদ্দিন ও রাজু ময় তংচংগ্যা, থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. শাহাদাৎ হোসেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ক্ষতিগ্রস্ত গুঙ্গা মনি ত্রিপুরা উপদেষ্টার কাছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরী ও মামলার কাগজপত্র উপস্থাপন করেন।
একই সময় সরই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফরিদ উল আলম, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. নাছির উদ্দিন ও মোহাম্মদ হোসাইন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল হালিম, স্থানীয় রফিকুল ইসলাম, রায়হান উদ্দিন এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
এতে বহিরাগত বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে ভূমি জবর দখল ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি উঠে আসে। এসব ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। শেষে বান্দরবান জেলা পরিষদের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারকে ২ বান করে ঢেউ টিন, ২৫ কেজি করে চাল ও ২টি করে কম্বল প্রদান উদ্বোধন করেন উপজেলা সুপ্রদীপ চাকমা।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত চন্দ্র মনি ত্রিপরা এক প্রশ্নের জবাবে জানান, এক সময় আমরা এ জায়গায় জুম চাষ করতাম। ১০ বছর আগে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ এ জায়গা দখল করে বাগান সৃজন করেন। সরকার পরিবর্তনের পর আমরা এসব জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণসহ বসতি শুরু করি। আমাদের মূল বাড়ি পাশের টংগঝিরি পাড়ায়।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, আমরা পাহাড়ি বাঙালি যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাস করছি, সবাই আমরা ভাই ভাই। সবাই এক সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবো। কোন অবস্থাতেই সংঘাতে যাবো না।
ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, আপনারা আপনাদের অধিকার হাতছাড়া করবেন না। আপনাদের অধিকার নিয়েই আপনারা থাকবেন। এ জায়গা কামড়ে থাকবেন। কারণ এই জায়গা ছাড়া আপনাদের কোন কূল নাই। অগ্নিকাণ্ডে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই আপনাদেরকে ঘর, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল ও পানির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলেও পাড়াবাসীকে আশ্বস্ত করেন এ উপদেষ্টা।
প্রসঙ্গত, মূলত জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরা সম্প্রদায় নিজেরা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। এ প্রেক্ষিতে হুমকির সম্মুখীন হয়ে গত ১৭ নভেম্বর পাড়ার বাসিন্দা গুঙ্গা মনি ত্রিপুরা বাদী হয়ে স্টিফেন ত্রিপুরা সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। ডায়েরী করার এক মাস যেতে না যেতেই গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে পাড়ার ১৭টি ঘর আগুনে পুড়ে দেয় প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় গুঙ্গা মনি ত্রিপুরা বাদী হয়ে স্টিফেন ত্রিপুরাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ এজাহারভুক্ত ছবিচন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা জগমন ত্রিপুরার ছেলে স্টিফেন ত্রিপুরা (৫০) ও জগমন ত্রিপুরার ছেলে যোয়াকিম ত্রিপুরা (৫২), টংগঝিরি পাড়ার বাসিন্দা গবিন্দ্র ত্রিপুরার বাসিন্দা মসৈনিয়া ত্রিপুরা (৪৪) ও আইজিপি জেনজির আহমেদ এর বাগান কেয়ারটেকার ইব্রাহীমকে (৬৫) গ্রেফতার করেন। অন্য আসামীদের গ্রেফতার অভিযান চলছে বলে জানান থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. শাহাদাৎ হোসেন।
বিবার্তা/আরমান/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]