
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য ও ফেনী-২ আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ঢাকার ল্যাব হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরদিন ফেনী শহরের মাস্টার পাড়াস্থ তার নিজ বাড়ি মুজিব উদ্যানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
জয়নাল হাজারীর মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মৃতি পরিষদ ও হাজারী পরিবারের পক্ষ থেকে আজ মাস্টারপাড়া মুজিব উদ্যানে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাচাতো তাঁর ভাই রাসেল হাজারী।
জয়নাল হাজারীর রাজনৈতিক সহচর ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৬ সালের ২৪ আগস্ট ফেনীর মাস্টার পাড়াস্থ হাজারী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি আমৃত্যু দৈনিক হাজারিকা প্রতিদিনের সম্পাদক ছিলেন। ২০১৯ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।
জয়নাল হাজারী ফেনী সদর আসন থেকে তিন বার (১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ এর নির্বাচনে) জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৪-২০০৪ পর্যন্ত প্রায় বিশ বছর ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জয়নাল হাজারী।
৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নোয়াখালী জেলা ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের নেতা ছিলেন। ২নং সেক্টরে তিনি এফএফ ফোর্সের একটি ইউনিটে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
১৯৯৩ সালে থেকে দলীয় কর্মীদের রক্ষার্থে তিনি ছাত্র-যুব নেতা কর্মীদের সমন্বয়ে একটি সুশৃঙ্খল স্টিয়ারিং বাহিনী গঠন করেছিলেন। আওয়ামী লীগের ভাষ্যমতে, জনকল্যাণ ও সন্ত্রাস দমনে কাজ করেছিল জয়নাল হাজারীর স্টিয়ারিং বাহিনী।
রাজনৈতিক কারণে তিনি বারবার জেল খেটেছেন এবং রাজনৈতিক কারণে ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট থেকে ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতে নির্বাসনে ছিলেন। লেখক হিসেবে তার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম হলো ‘জয়নাল হাজারী বলছি’ ‘বিজুর বিচার চাই’ ‘বাঁধনের বিচার চাই’, বাধন আছে বিজু কোথায়?
ব্যক্তিগত জীবনে জয়নাল হাজারী চিরকুমার ছিলেন। জনশ্রুতি আছে, ফেনী সরকারি কলেজের বিজু নামে এক শিক্ষার্থীর সাথে তিনি প্রেম করতেন। তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যুদ্ধকালে বিজুর বিয়ে হয়ে যায়। সে অভিমানে তিনি আর বিয়ে করেননি। জয়নাল হাজারী কলেজ, হাজারী পাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, হাজারীপাড়া জামে মসজিদ, নয়টিলা মাজার মসজিদ ও এতিমখানাসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জয়নাল হাজারী।
কবি নির্মলেন্দু গুন তার এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, ফেনী মহকুমা ছাত্রলীগ নেতা থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর সাথে সখ্যতা ছিল জয়নাল হাজারীর। ওই প্রবন্ধে তিনি বলেছিলেন, ৬৬’র ছয়দফার পক্ষে মিছিল করায় জয়নাল হাজারীকে বহিষ্কার করেছিল ফেনী কলেজ কর্তৃপক্ষ। তখন জয়নাল হাজারীকে ভর্তি করানোর জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এ.আর মল্লিককে চিঠি লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর চট্টগ্রাম বিভাগে একমাত্র জয়নাল হাজারীর নেতৃত্বে ফেনী শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল।
বিবার্তা/মনির/এনএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]