
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় প্রতিপক্ষের আগুনে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৭ বসতঘর পোড়ানোর ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
২৬ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার ভোরে বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান আলীর নেতৃত্বে গোয়েন্দা শাখার একটি টিম লামা থানা পুলিশের তৎপরতায় সরই ইউনিয়নের টংগঝিরি ও আশপাশ এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ছবিচন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা জগমন ত্রিপুরার ছেলে স্টিফেন ত্রিপুরা (৫০) ও জগমন ত্রিপুরার ছেলে যোয়াকিম ত্রিপুরা (৫২), টংগঝিরি পাড়ার বাসিন্দা গবিন্দ্র ত্রিপুরার বাসিন্দা মসৈনিয়া ত্রিপুরা (৪৪) ও বাগানের কেয়ারটেকার ইব্রাহীম (৬৫)।
অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহাদাৎ হোসেন।
এদিকে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বান্দরবান পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রূপায়ণ দেব ও থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. শাহাদত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন পুলিশ সুপার। প্রেস ব্রিফিং এ বান্দরবান পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, গ্রেফতারকৃত ৪ আসামিসহ অন্যরা গুঙ্গামনি ত্রিপুরা সহ পাড়ার লোকজনের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে পাড়ার লোকজন ঘরে না থাকার সুবাদে মাচাং ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় স্টিফেনরা। এতে ১৬টি মাচাংঘর আগুনে পুড়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
পরে এ ঘটনায় গুঙ্গা মনি ত্রিপুরা বাদী হয়ে স্টিফেন ত্রিপরা সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলার করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।
জায়গা দখল কর্তৃত্ব নিয়েই ত্রিপুরা সম্প্রদায় নিজেরা নিজেদের মধ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন বলে প্রাথমিকভাবে উঠে এসেছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
সূত্র জানায়, গত তিন মাস আগে উপজেলা ও পাশের আলীকদম উপজেলা থেকে ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার উপজেলার সরই ই্উনিয়নে বসতি শুরু করেন। পাড়ার নাম দেন পূর্ব বেতছড়া পাড়া। বড়দিন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার দিনগত রাত ১টার দিকে এসব পরিবারের লোকজন পাশের টংগঝিরি পাড়ার গীর্জায় প্রার্থনা করতে যান। এ ফাঁকে কাঁচাঘরগুলোর মধ্যে ১৬টি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয় প্রতিপক্ষ।
এর আগে হুমকির সম্মুখীন হয়ে গত ১৭ নভেম্বর পাড়ার বাসিন্দা গুঙ্গা মনি ত্রিপুরা বাদী হয়ে স্টিফেন ত্রিপুরা সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন- গুঙ্গা মনি ত্রিপুরা, সিয়ান্দ্র ত্রিপুরা, চন্দ্র মনি ত্রিপুরা, বিদ্যাচন্দ্র ত্রিপুরা, অজারাম ত্রিপুরা, রুমানিক ত্রিপুরা, গ্রেন ত্রিপুরা, বিজয় ত্রিপুরা, মার্ঝেল ত্রিপুরা, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা, গুংগারাং ত্রিপুরা, তিফরাম ত্রিপুরা, অনসারাই ত্রিপুরা, জানালি ত্রিপুরা, তারাসিং ত্রিপুরা, বাষিচন্দ্র ত্রিপুরা ও ওবদিয় ত্রিপুরা। ক্ষতিগ্রস্তরা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানায়, পূর্ব বেতছড়া পাড়ায় বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি পলাতক বেনজির আহমেদের একটি বাগান বাড়ি ছিল, যা এসপি’র বাগান নামে পরিচিত। বেনজির আহমেদের সেই জায়গায় বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কিছু ত্রিপুরা পরিবার গিয়ে ছোট ছোট কাঁচা জুমঘর করে বসবাস শুরু করেন। ওই জায়গার দখল কর্তৃত্ব নিয়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায় নিজেদের মধ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে পাড়ার বাসিন্দা গুংগা মনি ত্রিপুরা জানান, গত একমাস আগে স্টিফেন ত্রিপুরা সহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে দীর্ঘদিন যাবৎ অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোট অঙ্কের অর্থ দাবি করেন, দাবিকৃত অর্থ না দিলে পাড়াবাসীকে হুমকিও দেন। এ প্রেক্ষিতে আমরা হুমকি দাতাদের বিরুদ্ধে থানায় ডায়েরি করি। মূলত তারাই সুযোগ বুঝে আমাদের পাড়ার বসতঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়ে দেয়। ঘটনার সময় পাড়ার লোকজন ঘরে না থাকায় কোনো মালামাল রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের চাল ডাল তেল ও কম্বল প্রদান করা হয় বলে জানান লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ.দা) রূপায়ণ দেব।
বিবার্তা/আরমান/এনএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]