লক্ষ্মীপুরে ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা, ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৯
লক্ষ্মীপুরে ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা, ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

লক্ষ্মীপুরে গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। এতে জেলার ৫টি উপজেলার ৬ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।


২৩ আগস্ট, শুক্রবার সকাল থেকে পানি বেড়েছে আরো ২-৩ ফুট। হু হু করে পানি বেড়ে ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চলের মানুষের বসতঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ। ভেসে গেছে পুকুর ও জলাশয়ের মাছ। আক্রান্ত হয়েছে কৃষকদের ফসল। গ্রাম কিংবা শহর চারিদিকে থই থই করছে পানি।


প্লাবিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কমলনগর, রামগতি, সদর ও রায়পুরে। এসব এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।


২৩ আগস্ট, সরেজমিনে জেলার কমলনগরের চরকাদিরা ইউনিয়ন এবং রামগতি উপজেলার চরবাদাম ও চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পানিবন্দি মানুষের চরম দুর্ভোগ লক্ষ্য করা গেছে।


তবে এসব এলাকার বাসিন্দারা এমন পরিস্থিতির জন্য ভূলুয়া খাল দখল হওয়াকে দায়ী করছেন। এছাড়া বেড়িবাঁধ সড়কের স্লুইস গেট বাজার এলাকায় থাকা ভূলুয়া খালের পাইপের মুখ বন্ধ থাকাকেও দায়ী করছেন অনেকে।


তারা জানায়, বিস্তীর্ণ এলাকার বৃষ্টির পানি ভূলুয়া খাল দিয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।


কমলনগরের ফজুমিয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন, তাদের এলাকার বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে ভূলুয়া খাল। পূর্বে এ খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি মেঘনায় প্রবাহিত হতো। কিন্তু ভারী বৃষ্টিপাতের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না৷ তাই বেড়িবাঁধে পূর্ব অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পশ্চিম অংশে তেমন পানি নেই।


চরকাদিরা ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন রামগতি উপজেলার চর বাদাম। এ এলাকার লোকজনও একই অভিযোগ তুলেছেন।


ওই এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান, মাকসুদুর রহমান, মো. আমির হোসেন বলেন, পুরো এলাকার মানুষ পানিবন্দি। ঠিকমতো ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। পথঘাট সব তলিয়ে গেছে। ঘরের ভেতর পানি ঢুকে পড়েছে। কারো কারো খাটের উপর পানি উঠেছে। রাতে ঘরে শুতে কষ্ট হয়, ভয়ও হয়। ঘরে সাপ ঢোকার ভয়ও থাকে। শিশু সন্তানদের নিয়ে চরম কষ্টে থাকার কথা জানায় ভুক্তভোগীরা।


তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী মহল খালটি দখল করে অবৈধ স্থাপনা তুলেছে। খালের উপর দিয়ে ইটভাটার জন্য সড়ক তৈরি করা হয়েছে। যার কারণে পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।


মারজান বেগম বলেন, চুলোয় পানি থাকায় রান্না করতে পারি না৷ বাহির থেকে খাবার কিনে আনতে হয়৷ শুকনো খাবারও খেয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে আর্থিক সংকটে আছি।


এমন পরিস্থিতিতে জানতে চাইলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুছ মিয়া বলেন, ১৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৬৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের শুকনো খাবার বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রিত রয়েছে ৮ হাজার ৫০০ জন মানুষ।


জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে জেলায় প্রায় ২৫ হাজার পুকুর-জলাশয় ভেসে গেছে, ১৫ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।


এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন জানান, বন্যায় আমন ধানের বীজ তলা প্রায় ২ হাজার হেক্টর, রোপা আমন ধান, আউশ ধান ও শরৎকালীন সবজি আক্রান্ত হয়েছে। কৃষকদের জন্য বীজ সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।


লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, বিভিন্ন বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে। বৃষ্টি নাহলে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে বলে জানান তিনি।


লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, বিভিন্ন খালে প্রতিবন্ধকতা থাকায় বৃষ্টির পানি ঠিকমতো নামতে পারছে না। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জেলার ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসনের উপস্থিতিতে স্থানীয়রা খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণ করছে। দুর্গত এলাকায় অসহায়দের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।


বিবার্তা/সুমন/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com