
নওগাঁয় জেলায় উৎপাদিত আমের ৬০ শতাংশই আম্রপালি জাতের। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ২০ জুন থেকে আম্রপালি আম পাড়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাজারে আম্রপালি আমের সরবরাহ যখন বেড়ে যায়, তখনই মনে করা হয় নওগাঁয় আমের ভরা মৌসুম। সে হিসেবে গত দু-দিন ধরে নওগাঁর বাজারে উঠতে শুরু করেছে সুস্বাদু ও বিখ্যাত রুপালি (আম্রপালি) আম।
নওগাঁর সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহার আমের হাট। এছাড়া পোরশা উপজেলার নোচনাহার, সারাইগাছী ও মিনাবাজার এলাকাতেও আমের হাট বসে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ, আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে ফলন কম হলেও দাম প্রায় দ্বিগুণ।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৮ হাজার টন। গত বছর ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৯৫ হাজার টন আম উৎপাদন হয়েছিল, যা ছিল সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
২২ জুন, শনিবার সকালে সাপাহার আমের হাটে গিয়ে আমের প্রচুর সরবরাহ দেখা গেছে। সাপাহার উপজেলা সদরের জিরো পয়েন্ট থেকে গোডাউনপাড়া পর্যন্ত সাপাহার-নজিপুর সড়কের দুই ধারে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুধু আম আর আম। রাস্তার দুই ধারে সারি সারি চার্জার (ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত) ভ্যানগাড়ি। এসব ভ্যানগাড়ির ওপর ক্যারেট ভর্তি আম রেখে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন আম চাষিরা।
বাজার ঘুরে জানা যায়, বাজারে এখন ল্যাংড়া, নাক ফজলি, হাঁড়িভাঙা ও আম্রপালি আমের সরবরাহ বেশি। ঈদের আগে থেকে ল্যাংড়া, নাক ফজলি ও হাঁড়িভাঙা বাজারে উঠেছে। আর আম্রপালি আম উঠতে শুরু করেছে ঈদের পর থেকে। আম্রপালির দামও চড়া। প্রতি মণ আম্রপালি ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
সাপাহার আমের হাটে পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের রূপগ্রাম থেকে সাইফুল ইসলাম, শিহাড়া ইউনিয়নের হলাকান্দর গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম, সাপাহারের ফুটকইল গ্রামের সাখাওয়াত হোসেনসহ কয়েকজন আমচাষি জানান, এখন আমের ভরা মৌসুম চলছে। তবে বাজার দেখে বোঝা যাবে না আমের উৎপাদন কম হয়েছে, নাকি বেশি হয়েছে। বাগানে গেলে সেটা বোঝা যাবে।
আসলে এবার গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ আম উৎপাদন কম হয়েছে। তবে পোকামাকড়ের উপদ্রব না থাকায় আম দেখতেও সুন্দর হয়েছে। দামও গতবারের চেয়ে বেশি। গত বছর ভরা মৌসুমে প্রতি মণ আম্রপালি আম ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার সেই আম বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।
আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, নাক ফজলি, ক্ষীরশাপাতি, গোপালভোগ আমের সরবরাহ কমে গেছে। এখন চলছে ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা ও আম্রপালি আমের মৌসুম। ঈদের চার-পাঁচ দিন আগে থেকে ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা আম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আর আম্রপালি আম ঈদের পর বাজারে উঠতে শুরু করেছে।
গতবার যেখানে প্রতি মণ ল্যাংড়া ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে এবার ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়।
এবার আমের উৎপাদন কিছুটা কম হবে বলে ধারণা নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদের।
তিনি বলেন, উৎপাদনের পরিমাণ ৪ লাখ টন দাঁড়াবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর বাজারমূল্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
বিবার্তা/শামীনূর/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]