ভারী বর্ষণে প্লাবিত টেকনাফের অর্ধশত গ্রাম, আশঙ্কা পাহাড় ধসের
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৪, ১৮:৪২
ভারী বর্ষণে প্লাবিত টেকনাফের অর্ধশত গ্রাম, আশঙ্কা পাহাড় ধসের
টেকনাফ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কক্সবাজারে দুইদিনের ভারী বর্ষণে এখন পর্যন্ত টেকনাফের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সেখানকার অন্তত ৮ হাজার পরিবার। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কা। প্রাণহানি রোধে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন।


মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাত ৯টার পর থেকে কক্সবাজার জেলায় ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়।


কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপ-সহকারি পরিচালক তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।


টেকনাফে শুধুমাত্র ৬ ঘন্টায় ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ডের তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম।


তিনি জানান, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এই ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।


প্লাবিত হওয়া ৫০টি গ্রামের মধ্যে আছে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম, হ্নীলা ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম, টেকনাফ পৌরসভার ৭টি গ্রাম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম, সাবরাং ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম, বাহারছড়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।


পুরাতন পল্লানপাড়া পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারী রাশেদুল ইসলাম বলেন, যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ভয়ে আছি। নির্ঘুম রাত কাটছে। বুধবার দুপুর থেকে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।


বাহারছাড়া পাড়ার বাসিন্দা শওকত বলেন, ঘরে পানি ঢুকে রান্নার চুলাসহ সবকিছু তলিয়ে গেছে। সকাল থেকে শুধু মুড়ি খেয়ে দিন পার করছি। আশপাশের সবার ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।


হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ভারী বর্ষণে আমার ইউনিয়নের ১২ গ্রামের ৪ হাজার বেশি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এসব গ্রাম হল, জালিয়াপাড়া, সাইটপাড়া, ফুলের ডেইল, আলী আকবর পাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, আলীখালি, চৌধুরী পাড়া, পূর্ব পানখালী, মৌলভীবাজার লামার পাড়া, ওয়াব্রাং, সুলিশপাড়া, পূর্ব সিকদার পাড়া। এসব গ্রামের চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মূলত সীমান্ত সড়কের স্লুইসগেট থেকে বৃষ্টির পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে বের হতে না পারায় এসব এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।


টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, দুইদিনের বৃষ্টিতে কলেজপাড়া, শীলবুনিয়া পাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কেকে পাড়াসহ পৌরসভার ৭ গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি। পানিতে ডুবে আছে টেকনাফ কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পৌরসভার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু ঘরবাড়িসহ চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া উক্ত এলাকায় মাছের ঘেরসহ লবণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।


সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর হোছাইন জানান, শাহপরীর দ্বীপের ৭ গ্রামসহ সাবরাং ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।


হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, তার এলাকার লম্বা বিল, উলুবনিয়া, আমতলি, মিনাবাজার, উনচিপ্রাং, কাঞ্চনপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, রইক্ষ্যং গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। এতে সাড়ে ৩০০ পরিবার সব চেয়ে বেশি প্লাবিত রয়েছে। এর মধ্যে উনচিপ্রাং এলাকার একটি রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বসতবাড়িগুলোতে ১ ফুট পানি উঠেছে।


বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন জানান, তার ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম। এতে করে তার ইউনিয়নের এক হাজার পরিবার খুব খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছেন।


টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণে এখানকার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টি না থামায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই সকাল থেকে পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হচ্ছে। জানমালের নিরাপত্তায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com