সাভারে সাবেক সেনা প্রধানের যত সম্পত্তি
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৪, ১৮:৫১
সাভারে সাবেক সেনা প্রধানের যত সম্পত্তি
সাভার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আজিজ আহমেদ। বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান। ডাক নাম ফারুক। এক সময়ের মহাপরাক্রমশালী জেনারেল। কাজ করতেন খেয়াল-খুশি মতো। তিনি আদর্শ ভাইও বটে। শীর্ষ সন্ত্রাসী ভাইদের বাঁচাতে আজিজ আহমেদের ভূমিকা ছিল অভাবনীয়। সন্ত্রাসী ভাইদের অনৈতিক সুবিধা, ফাঁসি থেকে বাঁচানো, ব্যবসায়িক সহায়তা, সন্ত্রাসীর তালিকা থেকে বাদ দেয়া, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ গায়েব, নাম পরিবর্তন, ভুয়া এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তা, ফ্ল্যাট, প্লট, বাড়ি, গাড়ি, হোটেল-রিসোর্ট এমনকি বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনে ভাইদের সহায়তা করেছেন এই দাপুটে জেনারেল।


আলোচিত ছিলেন নিজের কর্মগুণেও। শুধু ভাইদের জন্য নয়- নিজেও রিসোর্ট, বাংলোবাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, শত বিঘা জমি কিনে তেলেসমাতি দেখিয়েছেন। তিনি শুধু সাভারের আনাচে-কানাচেই শতাধিক বিঘা জমি কিনেছেন। তাই তাকে সাভারের জমিদারও বলা চলে। অনিয়ম ও পদ ব্যবহার করে দুর্নীতির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন আজিজ। দেশ জুড়ে তাকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।


সাভারে নামে-বেনামে যত সম্পদ


আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। রাজধানীর তুরাগ নদ ঘেঁষা আমিনবাজার বড় বরদেশী মৌজায় সিলিকন সিটি হাউজিংয়ে আরএস ১৩০৩নং দাগে ৭৫ কাঠা, ১৩১১নং দাগে ৩০.৬ কাঠা, ১৭৬১নং দাগে ৮০ কাঠা জমি রয়েছে আজিজ আহমেদের। ওই জমিতে তার একটি বাংলো বাড়ি রয়েছে। উঁচু দেয়ালে ঘেরা বাড়িতে হরেক রকম গাছ ও পশুপাখি লালনপালন করা হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন আনসার সদস্যরা। সময় পেলেই এই বাড়িতে ছুটে যান আজিজ আহমেদ। মাঝেমধ্যেই বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেন ওই বাড়িতে। সিলিকন সিটি হাউজিংয়ে আজিজ আহমেদের বড় ছেলে ইরফান আহমেদ সাদিব পরিচালক পদে রয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি হাইকোর্ট সিলিকন সিটির সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া সিলিকন সিটিতে আজিজ আহমেদের ছোটভাই তোফায়েল আহমেদ জোসেফের নামে প্রায় ২০০ কাঠা জমি আছে। অভিযোগ রয়েছে, জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় সিলিকন সিটি হাউজিংয়ের এমডি সরোয়ার খালেদকে জমি দখলে সহায়তা করায় আজিজ ও তার পরিবারকে এই সম্পত্তি উপহার দেয়া হয়। সিলিকনের ম্যাপেও আজিজ পরিবারের সম্পত্তির নির্দেশিকা দেখা গেছে।


এছাড়া আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের মনোসন্তোষপুর মৌজায় পূর্ণিমারচালা এলাকায় আরএস ১৭১ ও ১৭২নং দাগে আজিজ আহমেদের প্রায় ২১ বিঘা জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালের স্থানীয় ঈমান আলী, আব্বাস উদ্দিন, খোরশেদ আলম ও ফারুকের মাধ্যমে এই জমি কেনেন আজিজ আহমেদ। ১৭১নং দাগের জমিতে উঁচু প্রাচীরঘেরা একটি বাংলোবাড়ি রয়েছে।


পাশের ১৭২নং দাগে ইটের রাস্তার পাশে প্রায় ৫ বিঘা জমি বাউন্ডারি করে রাখা আছে। ভেতরে ছোট্ট একটি ঘরে আজিজ আহমেদের বাসার কাজের লোক সাবেক সৈনিক মাইন উদ্দিন সুমন তার পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তিনি প্রায় ২ বছর ধরে এই সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্বে আছেন।


সরেজমিনে গিয়ে আজিজ আহমেদের জমির নিরাপত্তারক্ষী মাইন উদ্দিন সুমনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার বাড়ি বছিলা ঘাটারচর। আমি আজিজ স্যারের বাসায় কাজ করতাম। তিনি অবসরে যাওয়ার পরে আমারও চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। পরে আমি এখানে চলে আসছি। এই জমির মালিক কে জানি না। তারা (আজিজ) আমাকে এখানে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি দায়িত্ব পালন করছি। আমার কাজ শুধু দেখাশোনা করা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, আজিজ আহমেদ প্রায়ই এখানে আসেন। আশুলিয়া জিরাবোর ফারুক হোসেন তাকে এই জমি কিনে দিয়েছেন। ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর গাড়ি নিয়েই তিনি এখানে আসতেন। এখন কম আসেন। তার ভাই জোসেফ ২-৩ মাস পরপর আসেন। কয়েকটি গাড়ি নিয়ে আসেন। জমি দেখে আবার চলে যান। শুনেছি আজিজ আহমেদ জমিগুলো ফারুক হোসেন ব্যাপারীর নামে কিনেছেন। পরে তার কাছ থেকে পাওয়ার নিয়ে রেখেছেন।


এছাড়া আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের মনোসন্তোষপুর মৌজায় ৫০ বিঘার উপরে জমি আছে। ফারুকের যত জমি সবগুলোই আজিজ আহমেদের।


ভাকুর্তা ইউনিয়নের বাহেরচর এলাকায় শ্যামলাপুর মৌজায় আজিজ আহমেদের নামে বেশ কিছু প্লটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শ্যামলাসি কলাতিয়া পাড়ার পেছনে জমজম হাউজিংয়ের রাস্তার ডান পাশে ৮০ শতাংশের প্লট, এর একটু দূরেই ৫০ শতাংশের আরেকটি প্লট আছে।


এছাড়া শ্যামলাসি দুদু মার্কেট এলাকায় অ্যাকটিভ প্রিক্যাডেট স্কুলের পাশে ১৭ শতাংশের একটি প্লট রয়েছে। ওই জমি বিক্রির চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামলাপুর মৌজার বাহেরচর ও লুটেরচর এলাকায় আজিজ আহমেদের সহায়তায় বিপুল পরিমাণ জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বড় ভাই আনিস আহমেদের ছেলে আসিফ আহমেদের বিরুদ্ধে। সিএস ৩৪৩ ও ৩৪৪, আরএস ২৫০২নং দাগে ৭৮ শতাংশ। জমিটি আগে সেজান জুসের মালিকানায় ছিল।


সাভারের শ্যামলাপুর মৌজায় আরএস ২৬৬৪নং দাগে ৯৮ শতাংশ জমি আছে। জমিটি আগে ছিল লুটেরচর বড় মসজিদ ও বছিলা মসজিদের। এই জমিতে ৩৮টি প্লট তৈরি করে চারদিকে প্রাচীর দিয়ে রাখা হয়েছে। পাশের প্লটেই এসএ ৮২৫, আরএস ২৫০০ ও ২৫০১নং দাগে আজিজ আহমেদের বোন জামাই নুরুল ইসলামের ৩৯ শতাংশ জমি রয়েছে। এই জমির মালিক ছিলেন খোরশেদ আলম। পুরো জায়গাটি ইটের প্রাচীর তৈরি করে ‘জিনি পাওয়ার টেকনোলজি লিমিটেড’ এর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।


এছাড়া চরওয়াশপুরে আসিফের নামে ৫২ শতাংশ জমি আছে। শ্যামলাসি স্কুলের পাশে রাস্তা থেকে নেমে আরএস ২৮৮৬নং দাগে ৫ কাঠা জমিতে আজিজ আহমেদের একটি একতলা বাড়ি আছে। ওই বাড়িটি তিনি তার বোনকে লিখে দিয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।


প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে দফায় দফায় কল করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।


বিবার্তা/শরিফুল/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com