
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী ও শাশুড়ি নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তের শ্যালকও আহত হয়েছেন।
২৭ মে, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন মৌ আক্তার মিতু (২৫) ও তার খালা আলেয়া বেগম (৬৫)।
মিতু রুবেল হোসেনের স্ত্রী। তাদের বাড়ি আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামে।
এ ঘটনায় ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে অভিযুক্তের শ্যালক নীরব হোসেন (২২) জয়পুররহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পুলিশের ধারণা, শাশুড়ির বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা রুবেল তার স্ত্রীর কাছে চাওয়ার পর তা পাননি। আবার তার স্ত্রী অন্যত্র কোথাও মোবাইল ফোনে কথা বলেন, যা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল। এই দুই কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
পুলিশ, নিহতদের স্বজন ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক যুগ আগে হলহলিয়া গ্রামের মৌ আক্তার মিতুর সঙ্গে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের রুবেল হোসেনের বিয়ে হয়। তাদের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। মৌ আক্তারের মা কমলা বেগম সৌদিপ্রবাসী। কমলা বেগম তার মেয়ে মৌ আক্তারকে হলহলিয়া গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করে দিয়েছেন। পাঁচ বছর ধরে কমলা বেগমের মেয়ে ও জামাতা হলহলিয়া গ্রামে বসবাস করছেন। সংসারে প্রায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। এদিকে সৌদিপ্রবাসী কমলা বেগম তার মেয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে টাকা দেন। এই টাকায় মৌ আক্তার সংসারে খরচ চালানোর পাশাপাশি সঞ্চয় রাখছিলেন। সপ্তাহখানেক আগেও কমলা বেগম তার মেয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান। এরমধ্যে রুবেল তার স্ত্রী কাছে টাকা চেয়ে পাননি।
এসব বিষয় নিয়েই ২৭ মে, সোমবার সকালে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে রুবেল হোসেন ঘর থেকে ছুরি এনে তার স্ত্রী মৌ আক্তারের শরীরে আঘাত করে। তখন মৌ আক্তার স্বামীর হাত থেকে বাঁচতে চিৎকার শুরু করেন। চিৎকার শুনে তার খালা আলেয়া বেগম ছুটে আসলে রুবেল হোসেন তার পেটেও ছুরিকাঘাত করে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন আলেয়ার ছেলে নীরব হোসেন তার মা ও খালাতো বোনকে বাঁচাতে গেলে তার হাতে ছুরিকাঘাত করে রুবেল পালিয়ে যান।
গ্রামবাসীরা এসে রুবেলের স্ত্রী মৌ আক্তার, তার খালা আলেয়া বেগম ও নীরবকে হোসেনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আলেয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। আর মৌ আক্তারকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে নেওয়ার পথেই মৌ আক্তার মারা যান। নীরব হোসেনকে জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তোজাম্মল হোসেন রতন বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া। এরই এক পর্যায়ে ঘর থেকে ছুরি বের করে এসে স্ত্রীকে আঘাত করেন রুবেল। এ সময় স্ত্রীর চিৎকারে পাশের বাড়ি থেকে রুবেলের খালা শাশুড়ি বের হয়ে আসেন। তাকেও ছুরিকাঘাত করে রুবেল। এ সময় শ্যালক এগিয়ে আসলে তাকেও ছুরি মেরে পালিয়ে যান। এতে দুজন মারা গেছে।
আক্কেলপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্ত্রী ও খালা শাশুড়িকে ছুরিকাঘাত করার পর রুবেল পালিয়ে যাওয়ার সময় শ্যালক নীরব তাকে ধরতে এলে তাকেও ছুরি মারা হয়। ঘটনার পর রুবেলের স্ত্রী ও খালা শাশুড়ি মারা গেছেন। তার শ্যালক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের ছুরি মারার পর রুবেল হোসেন পালিয়েছে। তাকে আটক করার চেষ্টা চলছে।
বিবার্তা/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]