সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩, স্বজনদের চোখের জলে ভেজা ঈদ আনন্দ!
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৬
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩, স্বজনদের চোখের জলে ভেজা ঈদ আনন্দ!
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

‘বাবা গো, আমার বাবা আমারে রেখে চলে গেছে। আমার বাবা ফ্যামিলিসহ চলে গেছে। আমার বাবা, অসুস্থ বাবা-মা রেখে চলে গেছে। একটা বাচ্চাকে (ছেলে) এতিম করে রেখে চলে গেছে।'


১১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার বিবার্তা প্রতিনিধির কাছে এভাবেই বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ে কথাগুলো বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত লুৎফর রহমানের মা মোছা. হালিমা খাতুন।


প্রতিবছর ঈদের সময় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যান শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামের মো. উহির আলীর ছেলে মো. লুৎফর রহমান। তিনি গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ি এলাকায় একটি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ছিলেন। গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ স্বজনদের নিয়ে একসঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করেন। কখনো এর ব্যত্যয় ঘটেনি। সন্তানরাও দাদার বাড়িতে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকত। এবারও বাড়িতে আসার জন্য স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ রওনা হন লুৎফর রহমান। বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়া লুৎফর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যে আহত অবস্থায় বাড়িতে পৌঁছেছেন শুধু সাড়ে চার বছরের ছেলে মুজাহিদ। লুৎফর রহমান (৩০), তার স্ত্রী শাহনাজ (২৫) এবং শিশু সন্তান মাহিত (২) এই তিনজন বাড়িতে পৌঁছেছেন লাশ হয়ে।


নিহত লুৎফর রহমানের ভাতিজা শামিম ইসলাম বলেন, গত মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে ময়মনসিংহের সদর উপজেলার ল্যাংড়াবাজার এলাকায় টাঙ্গাইলগামী বাসের ধাক্কায় মাহেন্দ্র থ্রি হুইলার দুর্ঘটনার স্বীকার হন। ওই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে আমার চাচাতো ভাই মাহিত এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাচা-চাচি দুইজন মারা যান। অপর চাচাতো ভাই মুজাহিদ আহত হন। আমার দাদা-দাদী এমনিতে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এরমধ্যে এমন ঘটনায় তারাও দুমরে-মুচড়ে গেছে। তাই আমাদের পরিবারে এবার ঈদের আনন্দ নেই। উৎসবের কোনো রঙই ছুঁতে পারে নাই এই পরিবারের সদস্যদের।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনশেড ঘরের ভিতরে নিজ সন্তান, সন্তানের স্ত্রী ও নাতিন হারানোর শোকে আহাজারি করছেন মোছা. হালিমা খাতুন। পাশাপাশি স্বজনেরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন বারবার। এদিকে বাড়ির পাশেই ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতিনের কবরের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে বসে আছেন লুৎফরের বাবা মো. উহির আলী। কবরস্থানটিতে বাঁশের ঘের দেওয়ার জন্য আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিরা কাজ করছেন।


এ সময় লুৎফরের বাবা মো. উহির আলী বলেন, ‘আমার পাঁচজন ছেলে ও একটি মেয়ে ছিল। এরমধ্যে গত মঙ্গলবার সবচেয়ে ছোট ছেলেকে তার স্ত্রী-শিশু সন্তানসহ এ পৃথিবী থেকে আল্লাহ নিয়ে গেছে। এই ছেলেই আমার ও আমার স্ত্রীর ভরণপোষণ করতেন।’


তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাস-কষ্টের রোগী। গত মাসে নতুন করে হাঁটুতে ব্যাথা শুরু হয়েছে। লুৎফরকে জানানোর পরে, সে ঈদে বাড়িতে এসে আমাকে ডাক্তার দেখাতে চেয়েছিলেন। আমার ছেলে বাড়িতে ঠিকই আসলেন, কিন্তু জীবিত নয় লাশ হয়ে। আমার সব শেষ।’


স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আব্দুর রকিব বাদশা বলেন, একদিনে একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনাটি মর্মান্তিক। এ ঘটনায় এই পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।


বিবার্তা/মনির/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com