নারায়ণগঞ্জে নারীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উন্মোচন, গ্রেফতার ২
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:০৬
নারায়ণগঞ্জে নারীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উন্মোচন, গ্রেফতার ২
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নারায়ণগঞ্জ সদরের চর সৈয়দপুর হতে উদ্ধারকৃত বস্তাবন্দি মরদেহের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যার শিকার অনন্যা কর্মকারের (৩৫) টাকা হাতিয়ে নিতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।


এই ঘটনায় মো. জীবন (৩০) ও নুসরাত জাহান মীম (৪০) নামের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


১ এপ্রিল, সোমবার দুপুরে পিবিআই-এর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।


গ্রেফতারকৃত জীবন কুমিল্লার কোতোয়ালি থানা এলাকার মো. ইয়াকুব মিয়ার ছেলে ও নুসরাত জাহান মীম পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানার সাত হাসনাপাড়া গ্রামের মৃত সৈয়দ আ. মান্নানের মেয়ে।


পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আল মামুন শিকদার সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর মডেল থানাধীন চর সৈয়দপুর এলাকায় রাস্তার পাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বাক্সবন্দি একটি মরদেহ পাওয়া যায়। সংবাদ পেয়ে পিবিআই, নারায়ণগঞ্জ জেলা ভুক্তভোগীর আঙুলের ছাপ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অনন্যা কর্মকারের পরিচয় শনাক্ত করে। এ ঘটনায় ৫ মার্চ নিহত অনন্যার ভাই বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।


পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি চৌকস টিম মামলা গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত মো. জীবন ও তার কথিত স্ত্রী নুসরাত জাহান মীমকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা এলাকা থেকে গত ৩০ মার্চ গ্রেফতার করে।


তদন্তে জানা যায়, অনন্যা কর্মকার নারায়ণগঞ্জ সদর থানার চর সৈয়দপুরে বসবাস করতেন। তার স্বামী হরে কৃষ্ণ শাহ সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরিরত অবস্থায় বছরখানেক পূর্বে মারা যান। আসামি নুসরাত জাহান মীমও চর সৈয়দপুরের বাসায় থাকতেন। সেই সুবাদে অনন্যার সঙ্গে নুসরাত জাহান মীমের পরিচয় ঘটে এবং সুসম্পর্ক তৈরি হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নুসরাত জাহান মীম, অনন্যা এবং মামলার প্রধান আসামি মো. জীবনের সহায়তায় ফতুল্লা থানাধীন শিবু মার্কেট সংলগ্ন সাপুড়ে বাসা ভাড়া নেন। মাদকাসক্ত জীবন গানবাজনা করতেন এবং বিভিন্ন মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়াতেন।


ঘটনার দুই দিন আগে দুপুরে অনন্যা বাথরুমে গোসল করতে গেলে আসামি মো. জীবন অনন্যার মোবাইল ফোন চেক করে কিছু কল রেকর্ড ও মেসেজ দেখে বুঝতে পারেন যে অনন্যার ভাই আমেরিকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। জীবন ওই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি আটতে থাকে। পরবর্তীতে ৪ মার্চ সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে আড়াইহাজার থেকে পালাগান শেষে সভাপুরের বাসায় ফেরেন জীবন। ওই দিন সন্তাপুরে গ্যাসের চাপ কম থাকায় জীবনের কথিত স্ত্রী আসামি নুসরাত জাহান মীম রান্না করতে পারেননি।


এই সুযোগে জীবন বাইরে থেকে সবার জন্য খাবার কিনে নিয়ে আসেন এবং সুযোগ বুঝে অনন্যার খাবারের সঙ্গে উচ্চমাত্রার ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। অনন্যা সেই খাবার খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে হয়ে পড়ে। এ সময় জীবনের কথিত স্ত্রী নুসরাত জাহান মীম রান্নাঘরে খাবারের প্লেট পরিষ্কার করতে যায়। সেই সুযোগে জীবন অনন্যার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য দুপুর আনুমানিক আড়াইটায় অনন্যার রুমে প্রবেশ করলে অনন্যা জীবনকে দেখে ফেলায় চিৎকার দিয়ে উঠে। এ সময় জীবন বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে অনন্যার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য মীমকে গ্যাসলাইট নিয়ে আসতে বলে। মীম জীবনের কথামতো অনন্যার পায়ের আঙুলে আগুন দিলে অনন্যা নড়াচড়া না করায় তারা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়।


এরপর আসামিরা মরদেহ গোপন করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মতে মরদেহ ঘরে তালাবদ্ধ করে বাইরে গিয়ে প্লাস্টিকের বড় বস্তা কিনে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে কিনে আনা বস্তায় হাত-পা বেঁধে বালিশ, কম্বল, পরিধেয় বস্ত্র দিয়ে মরদেহ বস্তাবন্দি করে। তারপর তারা বাসা পরিবর্তনের কথা বলে একটি অটো ভাড়া করেন। আসামিরা বস্তাবন্দি মরদেহ অটোতে করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানাধীন চর সৈয়দপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে উভয়ে পালিয়ে যায়।


মামলাটির প্রাথমিক তদন্তকালে আসামিদের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। গত ৩১ মার্চ আসামিদের আদালতে উপস্থাপন করা হলে জীবন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে এবং মীম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মায়দার আলীর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com