তুরস্কে সেনাবাহিনীতে চাকরির নামে প্রতারণা, বাবা-ছেলে গ্রেফতার
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৬:০৫
তুরস্কে সেনাবাহিনীতে চাকরির নামে প্রতারণা, বাবা-ছেলে গ্রেফতার
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

তুরস্কে সেনাবাহিনীর অধীনে লোক নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কখনো তুরস্কের সেনাবাহিনীতে চাকরির কথা বলে আবার কখনো মালয়েশিয়া, কানাডা ও বিভিন্ন দেশের কাজে পাঠানোর নাম করে দেড় হাজার মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা।


৩০ মার্চ, শনিবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।


গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বাবা কামরুল হাসান (৬৫) ও ছেলে মো. ফাহাদ হাসান সিয়াম (২৭)।


গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড, প্যাড সিল, দুটি কম্পিউটার, বিদেশে পাঠানোর জন্য ভুয়া নিয়োগপত্র ও ভিসা জব্দ কর হয়।


৩১ মার্চ, রবিবার রাজধানীর মিন্টু রোড নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।


হারুন অর রশীদ বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে গ্রেফতার দুই জনের সঙ্গে পরিচয় হয় সুনামগঞ্জের ছাতকের বাসিন্দা সহিদুল ইসলামের। পরিচয়ের এক পর্যায়ে কামরুল হাসান সহিদুলকে প্রস্তাব দেয় তুরস্কে সরকারিভাবে সেনাবাহিনীর অধীনে অনেক লোক নিয়োগ করা হবে, তাকে সেখানে তিনি পাঠাতে পারবেন। তুরস্কে গিয়ে সে এই চাকরি করে ভালো বেতন পাবে। কামরুল হাসানের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় সহিদুল। তবে তুরস্কে যেতে সহিদুলকে সাত লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানায় কামরুল হাসান। প্রাথমিকভাবে সাড়ে তিন লাখ টাকা সহিদুল কামরুল হাসান ও তার ছেলে সিয়ামকে দেয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৭ মে কামরুল হাসান ও তার ছেলে সহিদুলসহ এরকম ২০ জনের কাছ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়। টাকা দেওয়ার পর তাদের মেডিকেল করানো হয়। মেডিকেল করানোর কিছুদিন পর কামরুল হাসান ও তার ছেলে এই ২০ জনকে তুরস্কে যাওয়ার ভুয়া জব অফার লেটার দেয়।


তিনি বলেন, এর কিছুদিন পর কামরুল ও সিয়াম সহিদুলসহ বাকি ২০ জনকে বলে এখন তুরস্কে পাঠানো যাবে না। তাই তাদের সবাইকে মালয়েশিয়া ও সার্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে। এই কথা বলে কামরুল ও সিয়াম তাদের কাছ থেকে আরও ৩২ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাউকেই বিদেশ পাঠাতে পারেনি কামরুল ও সিয়াম। একপর্যায়ে তারা ওয়ারীর অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায়। মূলত ওয়ারীর অফিসেই টাকার লেনদেন হয় ভিকটিম ও কামরুলের মধ্যে। পরে সহিদুলের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত বাবা কামরুল ও ছেলে সিয়ামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


যেভাবে প্রতারণা করত তারা


ডিবি প্রধান বলেন, কামরুল ও তার ছেলে সিয়াম ভিকটিমদের কাছে বলতো তারা ৪-৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠানের বৈধ লাইসেন্সধারী। প্রকৃতপক্ষে তাদের কোনো লাইসেন্স নেই। ভুয়া লাইসেন্স নাম্বার ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে তারা। এছাড়াও তিনি বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় অফিস ভাড়া নেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি সরকারিভাবে তুরস্ক, কানাডা, মালয়েশিয়া, সার্বিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য টাকা ও পাসপোর্ট নেওয়ার পর কিছু কিছু পাসপোর্ট তিনি বিভিন্ন বৈধ এজেন্টদের কাছে জমা দেন ভিসা করার জন্য। এগুলো দেখিয়েই পরবর্তীতে অন্যদের কাছ থেকে আরও টাকা নেন। টাকা নেওয়ার পর সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এছাড়াও কেউ টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেন। একপর্যায়ে গোপনে তিনি তার অফিস পরিবর্তন করে ফেলেন।


কামরুলের প্রতারক হয়ে ওঠার গল্প


কামরুল হাসানের দাবি, তিনি শরীয়তপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি ১০ বছর মালয়েশিয়াতে কাটান। দেশে ফিরে ২০০১ সাল থেকে আল রিফাত ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিসে চাকরি নেন। ২০২২ সালে মালিক মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই প্রতিষ্ঠানে এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। মালিক মারা যাওয়ার পর কামরুল ওই প্রতিষ্ঠানের আরএল ও লাইসেন্স নিজের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করে প্রতারণা শুরু করেন। এভাবে প্রতারণা করে তিনি তুরস্ক, কানাডা, সার্বিয়া, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর কথা বলে এই পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি বিদেশে যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে তাদের মেডিকেল করানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নিতেন। ভিসা প্রসেসিংয়ের কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১/২ লাখ থেকে শুরু করে ৩০/৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার তথ্য পেয়েছে ডিবি।


তার নিজের পাসপোর্টে স্থায়ী ঠিকানা শরীয়তপুর উল্লেখ থাকলেও এনআইডিতে স্থায়ী ঠিকানা চাঁদপুর দেওয়া। তিনি গত দুই বছরের প্রতারণালব্ধ টাকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জমি কিনেছেন।


বিবার্তা/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com