চরবাসীদের সম্মিলিত উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে দেড় কিলোমিটার রাস্তা
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ১৮:২৯
চরবাসীদের সম্মিলিত উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে দেড় কিলোমিটার রাস্তা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভেরখাষ ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামের মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়। অসময়ের বন্যা বৃষ্টিতে বছরের বড় একটি সময় জনপদগুলো হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন।


বল্লভেরখাষ ইউনিয়নের তেমনি একটি এলাকা চর কৃষ্ণপুর। শিক্ষা-চিকিৎসা-ব্যবসাসহ যেকোনো প্রয়োজনেই উপজেলা শহর নাগেশ্বরীই কেবল নয় পাশের কুমুদপুর বাজারে যাতায়াতে শুকনো মৌসুমে এই চর কৃষ্ণপুরবাসীর পায়ে হাঁটার বিকল্প নেই। আবার অসময়ের বন্যা বৃষ্টিতে পায়ে হাঁটার সেই রাস্তাটুকু তলিয়ে থাকে বছরের বড় একটি সময়। এভাবেই উঁচু একটি সড়কের অভাবে জীবন-জীবিকার গতি থমকে আছে এই এলাকায়।


বহু বছর অপেক্ষার পরও যখন এখানে একটি সড়ক নির্মাণের দাবি পূরণ হয়নি তখন স্থানীয়রাই উদ্যোগ নেন সড়কটি তৈরির। চর কৃষ্ণপুর গ্রামের অধিবাসীরা জানেন এরকম দীর্ঘ একটি রাস্তা তৈরি করতে তাদের বহু টাকা লাগবে। তারপরও তারা নেমে পড়েছেন নিজেদের যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে। মনোবল আর শ্রমকে পুঁজি করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে গ্রামবাসী দীর্ঘ এই রাস্তার যতটুকু কাজ করে ফেলেছেন সেটাই এখন চরম এক বিস্ময়।


গ্রামবাসী উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের শ্রম আর টাকায় রাস্তাটির কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয়দের নিয়ে সড়ক নির্মাণ কমিটি তৈরি করেছেন তারা। এই কমিটিই আস্থার সাথে তত্ত্বাবধান করছে কাজটি। কমিটির সদস্যদের মাঝে বিভিন্ন স্তরে কাজ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। সদস্যের কেউ টাকা তুলছেন আবার কেউ খরচের হিসেব রাখছেন। সড়কটি তৈরি হলে বহুমুখী সুবিধা পাবেন এলাকাবাসী।


স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। এই গ্রামে যাতায়াতে কোন প্রকার রাস্তা নেই। বছরের বেশিরভাগ সময় আমাদের বন্যা আর বৃষ্টিতে কষ্ট করতে হয়। সে সময় যাতায়াতের কোন প্রকার ব্যবস্থা থাকে না। শুকনো মৌসুমেও কষ্ট করতে হয় মানুষ কোন রকমে ক্ষেতের আইল পথ ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পাকা সড়কে উঠতে হয়।


এ পথে আমাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য কিংবা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা নেয়া বড়ই কষ্টের। এ চরের ছেলে-মেয়েরা যোগাযোগের অভাবে লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে। বহু বছর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং উপর মহলের সাথে যোগাযোগ করেও একটি সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থা হয়নি। তাই আমরা গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে নিজেদের সড়ক নিজেরাই তৈরি করছি।


চরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুব আলী জানান, সড়কটি তৈরির জন্য বহুজনের কাছে গেছি সবাই কথা দিয়েছেন কিন্তু কাজ করেনি। তাই আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা জানি একটা সড়কের জন্য আমাদের কত কষ্ট করতে হয়। বন্যা এবং বৃষ্টির মৌসুমে আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। প্রসূতি মায়ের জরুরি চিকিৎসা করাতে পারি না। সড়কটি নির্মাণ হলে সব সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া সড়কটি বন্যার সময় বাঁধের কাজ করবে। ফসলহানি রোধ হবে।


খোকন মিয়া জানান, সড়কটি নির্মাণে গ্রামবাসীদের একত্রিত করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সবাই সাধ্য মতে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। কেউ শ্রম দিচ্ছেন। সড়ক নির্মাণ একটা কমিটি করেছি। এই কমিটি আস্থার সাথে সড়ক নির্মাণ বাস্তবায়ন করছে। কমিটির কোষাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক জানান, গ্রামের বাসিন্দারা নিম্নে দুই হাজার হতে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। তবে এই টাকা খুব নগণ্য। সড়কটি নির্মাণে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ হবে।


বল্লভেরখাষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি তৈরিতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয়। তাই চরের বাসিন্দাদের জোটবদ্ধ হয়ে কাজটি শুরু করার পরামর্শ দিয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।


কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, চর কৃষ্ণপুরবাসী সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করছেন। এটি প্রশংসনীয় কাজ। আমরা তাদের কাজে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। পরিদর্শন করে সেখানে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।


বিবার্তা/বিপ্লব/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com