শতশত মুসল্লির ইফতার করানো হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৭:৫৯
শতশত মুসল্লির ইফতার করানো হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মুসলমান ধর্মালম্বীদের সমাজিক ঐক্য বাড়াতে রমজান মাসে বিভিন্ন স্থানে সকল পেশা শ্রেণির মানুষের ইফতার আয়োজন করে থাকে। সম্প্রীতি আর মেল বন্ধনে আবদ্ধ হতে করেন ইফতারের নানা আয়োজন।


তবে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পুরো রমজান মাস জুড়ে একটি মসজিদে এক সাথে গড়ে প্রায় দুই/তিন শতাধিক মানুষের প্রতিদিনের ইফতারের আয়োজন খুবই ব্যতিক্রম। যা সচরাচর চোখে পড়ে না। কিন্তু ব্যতিক্রমী ইফতার আয়োজনের চোখে পড়বে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পুরাতন অনন্তপুর বাজার জমে মসজিদে।


রমজান এলেই এখানে প্রতিদিন ইফতারের সময় মসজিদে বসে রোজাদারদের মিলন মেলা। এই মসজিদে ইফতারি করতে দাগারকুটি, বাবুরচর, চরগুজিমারী চর হাতিয়াসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল আর প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ থেকে ছুটে আসেন শত শত নানা বয়সী মুসল্লী। শ্রেণি বৈষম্য ভুলে সকল পেশার মানুষজন বসেন এক কাতারে।


ইফতারের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মসজিদের এক ছাদের নিচে বিনামূল্যে মুসল্লীদের ইফতারি খাওয়ান উলিপুরের পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতি এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটির যৌথ উদ্যোগে। এই আয়োজনকে দৃঢ় করতে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে এগিয়ে আসেন স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিরাও। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন এবং দূর দূরান্তের রোজাদারদের মুখে হাসি ফুটাতে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে খুশি সকলেই।


সরেজমিনে দেখা যায়, আসরের নামাজের পর শুরু হয় ইফতারির প্রস্তুতি। মসজিদের মুসল্লী ও পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতি কমিটির সভাপতি, স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন ইফতার তৈরিতে।


প্লাস্টিকের বড়ো বড়ো গামলায় ইফতার সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। জায়নামাজে বসে সারিবদ্ধভাবে থাকা রোজাদারদের সামনে প্লেটে করে ইফতার,পানি পৌঁছে দিচ্ছেন সেচ্ছাসেবীরা। কলা, বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, শরবত, আঙুর এবং খিচুড়ি সহ নানা পদের খাবার।


সকলেই ইফতার ও পানি নিয়ে আজানের অপেক্ষায়। আজান দিলে একসাথে শুরু হয় ইফতার খাওয়া। এমন সুন্দর আয়োজন পুরো রমজান মাস জুড়ে থাকে বলে জানান মুসল্লীরা।


ইফতারি করতে আসা অনন্তপুরের ভিক্ষুক নুর আলী জানান, আমি প্রতিদিনই পুরাতন অনন্তপুর বাজার জামে মসজিদে ইফতার করি। সারা দিন ভিক্ষা করে যে আয় হয় তা থেকে কেনো রকমে সংসার চলে যায়। ইফতার কিনে কীভাবে খাবো? তাই বিনামূল্যে এখানে ইফতার করতে ছুটে আসি।


হাতিয়া বাজার থেকে আসা রনি বলেন, আমি প্রায় দিনই এখানে ইফতার করতে আসি। আমি একা নই। আমার মতো অনেক পথচারী, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা এবং আশপাশের ফুটপাতের দোকানদারাও এই মসজিদে ইফতার করতে আসেন। এক সাথে শতাধিক মুসল্লী ইফতার করার সুযোগ পাই।


দাগারকুটি চর থেকে আসা বৃদ্ধ মোজাম্মেল বলেন, হাতিয়া হাটে আসছি। শেষ বিকেলে হাট করে বাড়ি যেতে চরের মধ্যে ইফতারের সময় হয়ে যায়। তাই এখানে ইফতার খেয়ে, নামাজ আদায় করে হাটে খরচ করে বাড়ি ফিরে যেতে পারি।


মকবুল হোসেন বলেন, আমরা মসজিদে সবাই মিলে ইফতার করে যে আনন্দ পাই। সেটা বাড়িতে একা হয় না। ছোট, বড়, বৃদ্ধ সহ নানা বয়সের নানা পেশার মানুষ একসাথে ইফতার করার আনন্দ অন্য রকম। আমরা চাই আমাদের পরের প্রজন্মরাও এই কার্যক্রম ধরে রাখুক।


পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভুট্টু বলেন, আমরা দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এমন আয়োজন করে আসছি।বাজারে অনেক অসহায় দুঃস্থ মানুষজন থাকে সামর্থ্য না থাকায় বাইরে ইফতার করতে ইতস্তত বোধ করেন। আমরা মূলত আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সবার সহযোগিতায় প্রতি বছর সারা রমজান মাস ধরে ইফতারের আয়োজন করে থাকি।এটি দেখে পরের প্রজন্ম যেন এই ইফতার আয়োজনটি ধরে রাখে এই প্রত্যাশা আমাদের।


সাবেক হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম আবুল হোসেন বলেন, নদী ভাঙন আর চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ হাতিয়া হাটে আসেন। কিন্তু রমজান মাসে তারা রোজা রেখে হাট করে বাড়ি ফিরে যেতে পথিমধ্যে ইফতারের সময় হয়ে যায়। আবার অনেক বাজারের দোকানে ইফতার কিনে খাবার সামর্থ্যও থাকে না। এসব চিন্তা করে বিগত ৫ বছর ধরে মসজিদে বিনামূল্যে ইফতারের আয়োজন করা হয়।


প্রতিদিন এক সাথে দুই/তিন শত মুসল্লী ইফতার করে থাকেন। এটি যেন আগামীতে অব্যাহত রাখতে সকলের সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।


বিবার্তা/বিপ্লব/সউদ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com