১৮ মাসের কাজ ছয় বছরেও না হওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪, ২২:৪৮
১৮ মাসের কাজ ছয় বছরেও না হওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের নতুন দুটি ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় ছয় বছরেও শেষ হয়নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভবনের কাজ করছেন ধীরগতিতে। বাকী কাজ শেষ হবে কবে জানে না কেউ। যদিও এই কাজ ১৮ মাসে শেষ হবার কথা ছিল। কাজ শেষ না হওয়ায় একদিকে যেমন দুর্ভোগে পড়ছে রোগীরা তেমনি চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চিকিৎসকদেরও।


গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালকে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও দীর্ঘ দিন থেকে হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে পুরাতন ১০০ শয্যার বিল্ডিংয়ে। হাসপাতালটিতে নিয়মিত ভর্তি থাকে প্রায় ৩০০ রোগী। ফলে মেঝে আর বারান্দায় বিছানা করে রাখতে হচ্ছে রোগীদের। এছাড়াও বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসে এক থেকে দেড় হাজার রোগী। বহির্বিভাগে এত রোগীর সেবা দেবার জন্য প্রয়োজনীয় ডাক্তারের বসার ব্যবস্থাও নেই বর্তমানে হাসপাতালটিতে।


রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে তাই আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধাসহ ৯ তলা ও ৬ তলা দুটি ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যে ভবনে থাকবে পর্যাপ্ত কেবিন, ১৫০শয্যার ওয়ার্ড, বহির্বিভাগে রোগীদের সেবা দেবার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, আইসিইউ, ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা, আধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ আধুনিক সব চিকিৎসা সুবিধা। এ ভবন নির্মাণের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয় ১৮ মাস। কিন্তু কাজ শুরুর প্রায় ৬ বছর হয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি এ ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ। এতে দুর্ভোগে পড়ছে রোগীরা।


অনেকের অভিযোগ, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের যথাযথ তদারকি না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১০০ শয্যার হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে তিনটি ভবন নিমার্ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের আবাসন থেকে শুরু করে কর্মচারীরে জন্য আবাসিক ভবনসহ রোগীদের আধুনিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া জন্য। দ্যা ইঞ্জিনিয়ারস এন্ড আর্কিটেকস লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যৌথ উদ্যোগে হাসপাতালের ভবনের কাজ পান মো. মতলুবর রহমান ও আব্দুল হালিম মন্ডল।


২০১৮ সালের ৭ জুন সাড়ে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভবন গুলো কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল।


তবে এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কারো কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নেই।


সরেজমিনে দেখা যায়, পুরানো ভবনের রোগীরা বেড না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছে। টয়লেটের দুর্গন্ধে রোগীর আত্মীয় স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। এমনকি অনেকেই চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নতুন ভবনের কাজ চলছে তার আপন গতিতে। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। নাম মাত্র কয়েকজন মিস্ত্রি দিয়ে চলছে ঘষা-মাঝার কাজ।


হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মোছা. মিনি বেগম বলেন, এই হাসপাতালের যে অবস্থা। রোগী তো দূরের কথা স্বাভাবিক মানুষ কয়েক ঘণ্টা থাকলেই তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে যাবেন।


রোগীর স্বজন রোকাইয়া হাসনাত বলেন, এই হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা মানে রোগীকে আরও রিস্কের মধ্য ফেলার মত হবে। বিল্ডিং থেকে সব সময় বালু খসে পড়ছে। এখানেই রোগীদের সেবা দেওয়ার মত নার্স ও চিকিৎসকদের তেমন কোনো দায়িত্ববোধ মনে করেন না তাঁরা।


আরেক রোগীর স্বজন মো. বেলাল মিয়া বলেন, এই হাসপাতালের বর্তমান যে অবস্থা। তাতে চিকিৎসা পাওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। মানুষ হাসপাতালে আসে চিকিৎসা নিতে আর এখানে আসলে রোগ বৃদ্ধি করে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।


রোগী মুন্নাফ কামাল বলেন, ৩০ লাখ লোকের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র এই জেনারেল হাসপাতালটি। যদিও হাসপাতালটি ১০০ শয্যার কথা বলা হয়। কিন্তু ৫০ শয্যার বেশি কোন কিছুর কার্যক্রম নেই এখানে। পাশেই যে নতুন ব্লিডিংয়ে কাজ চলমান রয়েছে, এটি দ্রুত সম্পন্ন করে আধুনিক চিকিৎসা সেবার দাবি করেন তিনি।


গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো: মাহাবুব হোসেন বলেন, হাসপাতালের এই স্বল্প পরিসরে ২৫০জন রোগীকে ওয়ার্ডে রাখা সম্ভব না। ভবনের জায়গার অভাবে রোগী সেবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক্সরে-আলট্রা করার মত কোনো ঘর নেই। পাশাপাশি চিকিৎসকরা বসে যে, রোগীদের সেবা দিবে সেই রকম যথেষ্ট রুম নেই। নতুন ভবন দ্রুত বুঝে পেলে রোগীদের আধুনিক চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন বলে দাবি এই কর্মকর্তার।


গাইবান্ধা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম রফিকুল হাসানের কাছে হাসপাতালের ভবন গুলো হস্তান্তরের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, এ বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নাই।


এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহ্ সরোয়ার কবির বলেন, খুব শীঘ্রই ভবন হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হবে। রোগীরা যাতে করে সঠিক সেবা নিতে পারেন, সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।


হাসপাতালের নতুন বিল্ডিং উদ্বোধন করে আধুনিক চিকিৎসা চালুর পাশাপাশি, চিকিৎসা সেবায় হয়রানি বন্ধের দাবি সচেতনমহলের।


বিবার্তা/শামীম/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com