চিলমারীতে চলছে রমরমা বালুর ব্যবসা, হুমকির মুখে ডানতীর রক্ষা প্রকল্প
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪০
চিলমারীতে চলছে রমরমা বালুর ব্যবসা,  হুমকির মুখে ডানতীর রক্ষা প্রকল্প
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জমাটবাঁধা চর কেটে অবাধে চলছে রমরমা বালুর ব্যবসা। ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে উপজেলার রমনা ইউনিয়নের নন্দিরমোড় ও জোড়গাছ বাজার এলাকায় প্রভাবশালীরা কাউকে তোয়াক্কা না করে নদের তীর থেকে অবৈধভাবে এসব বালু কেটে বিক্রি করছে। ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ওই সব এলাকা নদীতে পরিণত হয়ে যাবে বলে এলাকাবাসীর দাবি। এতে হুমকির মুখে রয়েছে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর রক্ষা প্রকল্প, ঐতিহ্যবাহী জোড়গাছ বাজার, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন স্থাপনা ও নদী তীরবর্তী জনপদ এবং আবাদি জমি। প্রতিকার না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী এলাকাসমূহে অসহায় মানুষ।


শনিবার (২ মার্চ) সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার রমনা ইউনিয়নের নন্দিরমোড় এবং জোড়গাছ বাজার এলাকায় পাউবো বাঁধের ভিতরে ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের সামনে বিভিন্ন জায়গায় নদীর তীর কেটে সারিবদ্ধ ট্রলিতে বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের পিচিং এর উপর দিয়ে চলছে এসব ট্রলি (ট্রাক্টর)। ছবি তুলতে গেলে ট্রাক্টর (ট্রলি) নিয়ে পালিয়ে যায় অনেকে। এভাবে বালু কাটা অব্যাহত থাকায় নদীর তীর সংলগ্ন এলাকা সমূহ নদীর পানির সমান হয়ে যাচ্ছে। এতে সামান্য পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে এসব জমি নদীর সাথে মিশে গোটা এলাকা নদীতে পরিণত হবে মর্মে এলাকাবাসীর অভিযোগ।


অপরদিকে ব্লক পিচিং এর উপর দিয়ে গাড়ি চলায় বিভিন্ন স্থানে ব্লকে ফাটল দেখা দিয়েছে। এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, নন্দিরমোড় পয়েন্ট থেকে হাফিজুর রহমান, ফারুক মিয়া ও হামিদুল ইসলাম এবং জোড়গাছ পয়েন্ট থেকে লাল মিয়া ও তুহিনের নেতৃত্বে বালুর ব্যবসা চলছে। তারা প্রতি গাড়ি বালু মাত্র ১০০টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন কয়েক শত গাড়ি বালু বিক্রি করে দিচ্ছে।


ট্রলিতে মাটি কাটার ছবি উঠাতে দেখে এলাকাবাসী সুমন মিয়া, হাবিব, সোহাগ, লাভলু ও আ.মতিনসহ অনেকে এগিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেন, নদীর এই তীরটি আমাদের গ্রামের প্রটেকশন হিসাবে কাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় পিচিং এর উপর দিয়ে অবৈধ বালুর ব্যবসা চলতে থাকলেও দেখার কেউ নেই।


তারা আরও বলেন, প্রভাবশালীরা সবাইকে ম্যানেজ করেই অবৈধ ব্যবসা করছে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের হুমকি দেয়া হয়। এভাবে তীর থেকে মাটি কেটে নিলে নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারনসহ হুমকির মুখে পড়বে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রহ্মপুত্রের ডানতীর রক্ষা প্রকল্প, বিভিন্ন স্থাপনাসহ নদী তীরবর্তী জনপদ ও সরকার ঘোষিত নৌ-বন্দর পুনঃস্থাপনের পরিকল্পনা।


এছাড়াও গ্রামের ভিতর দিয়ে সারাদিন গাড়ি চলায় রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়াসহ ঘটছে বিভিন্ন রকমের দুর্ঘটনা। ওই এলাকায় অবস্থিত জোড়গাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত গাড়ি চলায় বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং যে কোন মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে যে কোন রকম দুর্ঘটনা বলে অনেকে জানায়। এলাকাবাসী বালু কাটা প্রতিরোধ কল্পে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও প্রতিকার না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী ওই এলাকার মানুষ।


বালু ব্যবসায়ী হিসাবে অভিযুক্ত রমনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. লাল মিয়া বলেন, আমি বালু উত্তোলনের সাথে সম্পৃক্ত নই।


চিলমারী বন্দর নৌ-ফাড়ির আইসি মো.নাজমুল হক বলেন, জোড়গাছ বাজার এলাকার বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু নন্দিরমোড় এলাকার কথা আমার জানা নেই। বিকেলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিনহাজুল ইসলাম জানান, বালু উত্তোলন বন্ধ করতে আমি গিয়েছিলাম। যখন যাই তখন তারা পালিয়ে যায়। সব সময় তো যেতে পারি না। এলাকাবাসী মামলা করে দিলে তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হবে।


বিবার্তা/রাফি/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com