জাল দলিল করে পাগলের জমি আত্মসাৎ, সাব-রেজিস্ট্রারসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:০১
জাল দলিল করে পাগলের জমি আত্মসাৎ, সাব-রেজিস্ট্রারসহ ৬ জনের  বিরুদ্ধে মামলা
গাইবান্ধা থেকে আনোয়ার হোসেন শামীম
প্রিন্ট অ-অ+

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কামালের পাড়া ইউনিয়নের নশিরার পাড়া গ্রামে নবজ আলী (৬৫) ওরফে নবর আলী পাগলা নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির জমি সাব-রেজিস্টার, দলিল লেখক, সাক্ষী ও গ্রাহকের যোগসাজশে দলিল সম্পাদনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাব-রেজিস্ট্রারসহ ৬ জনকে আসামি করে গত মঙ্গলবার সাঘাটা সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।


মামলার আসামীরা হলেন, সাব-রেজিস্ট্রার মিরাজ মোর্শেদ, জমি গ্রহীতা হাফিজুর রহমান, দলিল লেখক মাহমুদুল হাসান, সাক্ষী রাহায়ন পারভেজ নিয়ন, আশরাফুল আলম ও ইমরান হোসেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি, বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করছেন কোটের নাজির শাহিন মিয়া। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।


এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার নশিরার পাড়া গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের একমাত্র সন্তান নবজ আলী (৬৫) ওরফে নবর আলী পাগলা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় চিরকুমার। ভাই-বোন না থাকায় পিতা-মাতার মৃত্যুর পর নবজ আলীর জমি-জমাসহ সকল সম্পত্তি স্বজনরা ভোগদখল করে আসছে। সেই সুবাদে সাব-রেজিস্ট্রার, দলিল লেখক ও সাক্ষীগণের যোগসাজশে সুকৌশলে নবজ আলীর চাচাতো ভাইয়ের (ওমর আলীর) ছেলে হাফিজুর রহমান গত ২২ জানুয়ারি ১ একর ৩৬ শতক জমি একা ভোগ করার উদ্দেশ্যে গোপনে নবজ আলীর টিপ জাল করে নিজের নামে লিখে নেন। গোপনে জমি লিখে নেয়ার ঘটনা স্থানীয় লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে পাগলের স্বজনরা গত রোববার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে জাল দলিলের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। পরে নবজ আলীর চাচাতো ভাই নবির হোসেন পক্ষে অভিভাবক হিসেবে বাদী হয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সাব-রেজিস্ট্রার মিরাজ মোর্শেদসহ ৬ জনকে আসামি করে সাঘাটা সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন।


স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, নবজ আলী একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি। তিনি ছোটবেলা থেকেই নবর আলী পাগলা নামে এ উপজেলার সর্বত্রই পরিচিত ও সমাজসেবা অধিদফতর এর আওতায় সূবর্ণ কার্ডধারী নাগরিক। তিনি স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না। দলিল সম্পাদন বা লিখে দেয়ার বিষয়ে তার কোনো জ্ঞান নেই। তাই কি ভাবে দলিল সম্পাদন হলো তা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।


জমি গ্রহীতা হাফিজুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জমি লিখে নেয়ার কথা স্বীকার করে বিবার্তাকে বলেন, নবজ আলী আমার চাচা, জেনে-বুঝেই জমি দলিল করে দিয়েছে।


এবিষয়ে উপজেলার কামালের পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম সাজু মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত বিবার্তাকে বলেন, পাগলের জমি দলিল সম্পাদনের সাথে জড়িতরা হীনমানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। এর একটা সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত।


দলিল লেখক মাহমুদুল হাসান বিবার্তাকে বলেন, জমিদাতা এবং গ্রহীতাকে এর আগে সেভাবে চিনতাম না। পরে জানতে পেরেছি জমি দাতা একজন পাগল।


গ্রহীতার সাথে যোগসাজশে দলিল সম্পাদনের বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মিরাজ মোর্শেদ বিবার্তাকে বলেন, জমি দাতা পাগল না কি বুঝতে পারেননি। নবজ আলীর মানসিক প্রতিবন্ধীর কার্ডও তারা দেখাননি। আমার কাছে তখন পাগল মনে হয়নি। দেখে শুনেই দলিল সম্পাদন করা হয়েছে।


বিবার্তা/শামীম/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com