বাক্সবন্দি খানসামার ১৪৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন
নষ্ট হচ্ছে ৪০ লাখ টাকা
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩৮
বাক্সবন্দি খানসামার ১৪৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ১৪৩ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের স্কুলের উপস্থিতি নিশ্চিত ও তদারকি করার লক্ষ্যে বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয় ও স্থাপন করলেও সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানে বাক্সবন্দি অবস্থায় এই ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্র। আবার অধিকাংশ স্কুলে পড়ে আছে অকেজো মেশিন আর কিছু প্রতিষ্ঠানে দেখা মেলেনি এই মেশিনের। যার ফলে প্রায় ৩৫-৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ের এই কার্যক্রম আলোর মুখই দেখেনি।


বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার আংগারপাড়া ময়দান ডাঙা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর দুবুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব ভবকী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর গোবিন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হোসেনপুর ভুল্লী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায় বাক্সবন্দি রয়েছে বায়োমেট্রিক মেশিন। মেশিনগুলো ব্যবহার না করায় কয়েকটি স্কুলে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।


অন্যদিকে অকেজো মেশিনগুলো সংস্কারে তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্লিপ ফান্ডের প্রকল্প থেকে যন্ত্রটি কেনা বাবদ ব্যয় নির্বাহ করা হবে এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্বে যন্ত্রটি কিনে নেবে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন পত্রের মাধ্যমে একাধিক বার নির্দেশনা দেয়া হয় মাঠপর্যায়ে।


উপজেলার কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে উপজেলার ১৪৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের বরাদ্দ থেকে ডিজিটাল হাজিরার বায়োমেট্রিক মেশিন কেনার জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।


তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যাচাই করে যেকোনো মাধ্যমে মেশিন ক্রয়ের কথা থাকলেও শিক্ষা অফিসের নির্দেশনায় অনেকটা চাপে পড়েই একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে মেশিন করছে সকল প্রতিষ্ঠান। সেই সময়ে শিক্ষা অফিসের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি। আর এই বায়োমেট্রিক মেশিনগুলো লাগানোর ৬-৭ মাস পেরিয়ে গেলেই নষ্ট হয়ে যায়।


শিক্ষকরা আরও জানান, এই যন্ত্রটি চালু রাখতে প্রয়োজন হয় বিদ্যুৎ সংযোগ, ইন্টারনেট কানেকশন ও কম্পিউটার। বিদ্যালয়গুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও নেট সংযোগ ও কম্পিউটারের অপ্রতুলতায় ভেস্তে যায় এই কার্যক্রম। এখন ব্যবহার না হতে হতে রীতিমতো জঞ্জালে পরিণত হয়েছে মেশিনগুলো। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকরা অনেক সময় শিক্ষা অফিসে, বিভিন্ন রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ফলে বায়োমেট্রিক হাজিরা থাকলে তাদের এসব অনুষ্ঠানে যেতে সমস্যা হয়।


এদিকে বিভিন্ন স্কুলে ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২০-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে যে মডেলের ডিজিটাল হাজিরা মেশিনটি বিদ্যালয়ে লাগানো হয়েছে তার সঠিক বাজারমূল্য আনুষঙ্গিক খরচসহ সাড়ে ৮-১০ হাজার টাকা। প্রতি মেশিন ক্রয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, করোনার আগে এই মেশিন ক্রয় করা হলেও ব্যবহারে তেমন তদারকি না থাকায় ব্যবহার করা হয় না। অকেজো মেশিন ক্রয়গুলো সংস্কারে তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি।


এই বায়োমেট্রিক মেশিন স্থাপনের উদ্দেশ্য বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে উপস্থিত ও ছুটির সময় শিক্ষকরা হাজিরা মেশিনে আঙুলের ছাপ দেবেন। শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ বিদ্যালয়ের এই মেশিন ৩-৪ মাস যেতেই বিকল হয় আর অন্যগুলো নেই কোনো ব্যবহার। শিক্ষা অফিস ও শিক্ষকদের উদাসীনতায় এই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি বলে দাবি করেছে অভিভাবক ও সুধীজনরা।


এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদুল হক বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিপূর্বে বায়োমেট্রিক মেশিনগুলো স্থাপন করা হলেও সেই মেশিনগুলো অধিকাংশ অকেজো হয়ে গেছে। এগুলা মেরামতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সফলতা আসছে না। মেশিনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে কেবল জানলাম। উপজেলা পরিষদের আগামী মাসিক সভায় এবিষয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিবার্তা/জামান/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com