খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
আড়াই লাখ মানুষের ভরসার ঠিকানা
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:১০
আড়াই লাখ মানুষের ভরসার ঠিকানা
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলার মধ্যবর্তী ও প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পাকেরহাটে অবস্থিত। পুরো উপজেলার মানুষ সহ পাশ্ববর্তী জেলা-উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষের ভরসা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জনবল সংকট থাকা স্বত্বেও আউটডোর, ইনডোর, ইমারজেন্সি, অবস্থানরত রোগীদের সেবা, নরমাল ডেলিভারী, সিজারিয়ান অপারেশন,এএনসি, পিএনসি সেবা দিয়ে রোগীদের আস্থা উপজেলা পর্যায়ের এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।


তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই সীমিত জনবল দিয়েই উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২১ সালে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও দেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল। হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যা অনুযায়ী যে জনবল নিয়োগ দেয়ার কথা, তা এখনো দেয়া হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই।
আবার সেই ৩১ শয্যার জনবলের মধ্যেই রয়েছে অনেকগুলো শূন্য পদ। জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থিসিয়া) এই চার পদের বিপরীতে আছে শুধু জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থিসিয়া) ও গাইনী।


মেডিকেল অফিসার ০৪টি পদের মধ্যে ০১টি শূন্য ও মেডিকেল অফিসার (ইউনানী) একজন থাকার কথা থাকলেও সে পদটিও বর্তমানে শূন্য রয়েছে। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ০৬টি পদের মধ্যে ০৩টি পদ শূন্য, সিনিয়র স্টাফ নার্সের ৩০টি পদের মধ্যে ০৫টি শূন্য,স্বাস্থ্য সহকারী ২৫টি পদের মধ্যে ০৯টি পদ শূন্য, স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ০২টি পদের মধ্যে ০২টিই শূন্য, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ০৫টি পদের মধ্যে ০২টি পদ শূন্য, অফিস সহকারীর ০২টি পদের মধ্যে ০১টি পদ শূন্য, ক্লিনারের ০৫টি পদের মধ্যে ০১টি পদ শূন্য, নিরাপত্তা প্রহরীর ০২টি পদের মধ্যে ০২টিই শূন্য, এমএলএসএস ০৫টি পদের ০৩টি পদ শূন্য, আয়া ০২টি পদের ০১টি শূন্য রয়েছে।


এছাড়াও ডেন্টিস্ট প্রেষণে থাকায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে ডেন্টাল ইউনিটের যন্ত্রপাতি। তবে আলট্রাসনোগ্রাফি, এক্স-রেসহ বিভিন্ন প্যাথলোজিক্যাল সেবা চালু রয়েছে।


স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র আরো জানিয়েছে, গত বছর সকল সেবা মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার রোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আউটডোরে ৮১ হাজার ৫২০ জন, ইনডোরে ৯ হাজার ৬৫৫ জন, ইমারজেন্সি ২৫ হাজার ৬১৫ জন, হাসপাতালে অবস্থানরত রোগী ২২ হাজার ১০৯ জন, এএনসি সেবা ১৩ হাজার ৭৩৭ জন, পিএনসি সেবা ৪ হাজার ৩৫৫ জন রোগীকে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ১ হাজার ১৫৬ প্রসূতি মায়ের নরমাল ডেলিভারী ও ২৫৬টি সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীর স্বজনরা চিকিৎসা সেবা পেয়ে খুশি। তারা বলছেন, এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল।


স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউটডোর এ সেবা নিতে আসছেন ফাতেমা আক্তার (৬০) বলেন, হামরা গরীব মানুষ বাবা। বাইরত যায়া (বাইরে গিয়ে) চিকিৎসা করার মতোন টাকা হামার নাই। অসুখ হলে এইঠে আসি ডাক্তার দ্যাখে ফ্রি ওষুধ নিয়া যাই। আইজও ডাক্তার দ্যাখে ওসুধ নিনু (নিলাম)।


নরমাল ডেলিভারী হওয়া প্রসুতি আফরোজা বলেন, আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল। গর্ভাকালীন সময়েও আমি প্রয়োজনীয় সুবিধা হাসপাতালে পেয়েছি। দ্বিতীয়বারের মতো এখানে আমার নরমাল ডেলিভারী সম্পন্ন হয়েছে।


উপজেলার আংগারপাড়া ইউনিয়নের যুগীপাড়া এলাকা থেকে সেবা নিতে আসা ফারজানা আক্তার (৩২) বলেন, এখন আর সব রোগীকে চিকিৎসার জন্য রংপুর-দিনাজপুর যেতে হয় না। পাঁচ টাকা টিকিটের বিনিময়ে চিকিৎসকের পরামর্শসহ বিনামূল্যে ঔষধ পাওয়া যায় হাসপাতালে।


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, সীমিত জনবল নিয়েই আমরা রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কাজ করছি। তবে জনবলের ঘাটতি পূরণ হলে উপজেলাবাসীকে আরো ভালো মানের সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।


খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মলয় কুমার কুন্ডু বলেন, ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই ৫০ শয্যার কার্যক্রম চলছে। ৩১ শয্যার জনবলেও বেশ কিছু পদ শূন্য আছে। এই সীমিত জনবল নিয়েও আমরা সাধ্যমতো জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। জনবল নিয়োগের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চলমান আছে। জনবল বাড়লে স্বাস্থ্য সেবার মান আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।


ইউএনও মো.তাজউদ্দিন বলেন, জনবল সংকটেও উপজেলা পর্যায়ের এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন সাধারণ রোগীর নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হয়ে উঠেছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের দিক নির্দেশনা, কর্মরত চিকিৎসক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সর্বোপরী সকলের সহযোগিতায় মানুষের দ্বোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিচ্ছে কতৃপক্ষ।


বিবার্তা/জামান/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com