খানসামায় প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহিদ মিনার
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৪০
খানসামায় প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহিদ মিনার
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ৮৮.৭৭% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো নেই কোনো শহিদ মিনার। যে কারণে ওই সব অধিকাংশ বিদ্যালয়ে জাতীয় দিবস পালন করা হয় দায়সারা ভাবে শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। আবার কোনও প্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালনই করা হয় না।


শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সদিচ্ছার অভাব ও উদাসীনতাকে দায়ী করছে সচেতন মহল।


ভাষা আন্দোলন ও দেশ স্বাধীন হওয়ার এতদিন পরও শহিদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের অনেকেই জানান, উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেই শিক্ষার্থীরা ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না। শুধুমাত্র উপজেলা সদর ও পাকেরহাট এর আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।


কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বও অনুধাবন করতে পারছে না। আবার যে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার আছে সেগুলোও পড়ে থাকে অযত্ন আর অবহেলায়। শুধু দিবস আসলেই পরিষ্কার করে ব্যবহার করা হয়।


তবে উপজেলার ১৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগেই শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, স্কুল এন্ড কলেজ, মাদ্রাসা, কলেজ ও কারিগরি কলেজ মিলে মোট ৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার রয়েছে। উপজেলার কোন মাদ্রাসা ও কারিগরি কলেজে শহিদ মিনার নেই বলে জানা গেছে।


সরেজমিনে উপজেলার পাকেরহাট, ছাতিয়ানগড়, আংগারপাড়া, খানসামা ও খামারপাড়া এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইট-সিমেন্টের মানসম্মত শহিদ মিনার রয়েছে আর অন্যদিকে কিছু স্কুলে রয়েছে লোহার পাইপ দিয়ে বানানো শহিদ মিনার। সেগুলো জং ধরে বর্ণহীন। ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ।


অন্যদিকে উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শহিদ মিনার বিহীন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হলে তারা জানায়, শহিদ মিনার নির্মাণ করতে মোটা অর্থের প্রয়োজন। সরকারি বরাদ্দ না থাকায় স্কুলে শহিদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। অথচ ২০১৬ সালের (১১ ফেব্রুয়ারি) দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দেশের যে-সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই সেগুলোতে অতি দ্রুত শহিদ মিনার নির্মাণ করতে হবে।


এছাড়া যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো সংস্কার করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।


উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদুল হক বলেন, এই উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সেগুলো প্রতি বছর সংস্কারের জন্য প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি।


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনজুরুল হক বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাউশি’র নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শহিদ মিনার তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কমিটির সভাপতিকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজ উদ্দিন বলেন, যে-সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই সেগুলোকে ইতোমধ্যেই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় শহিদ মিনার নির্মাণ করতে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শিক্ষার্থীরা যেন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে।


বিবার্তা/জামান/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com