যেভাবে পাল্টে গেল কর্ণফুলী ভূমি অফিস
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:৩৬
যেভাবে পাল্টে গেল কর্ণফুলী ভূমি অফিস
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী’র একান্ত প্রচেষ্টায় ভূমি অফিস এখন সম্পূর্ণরূপে বদলে গেছে। নেই এখন উৎপাত, নেই হয়রানি, নেই উৎকোচের অত্যাচার, নেই দালালের দৌরাত্ম্য। তাই এখন কমেছে জনদুর্ভোগ। যে কেউ সরাসরি কমিশনারের রুমে প্রবেশ করলেই ১৬ আনা সমাধান।


আগে জমির নামজারি, মিস মামলা, তদন্ত, দাগ নম্বর সংশোধন, করণিক ভুলসহ জমি সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে মাসের পর মাস ঘুরতে হতো। এখন নেই হয়রানি। গত দেড় বছরে কমেছে জনদুর্ভোগ। স্বস্তি ফিরে এসেছে সাধারণ ভূমি গ্রাহকদের মাঝে।


উৎকোচ না দিলে ফাইল নড়ে না এমন চিত্র আর এই ভূমি অফিসে নেই। ৭দিনে প্রসেস মতে অটো মেসেজে ফাইল মুভ না করলে জবাবদিহিতায় পড়েন তহসিলদারগণ। এমনকি আগে ১৪৫ ধারার মিছ মামলার প্রতিবেদনে তহসিলদারগণকে ম্যানেজ করে বাদী বিবাদী প্রতিবেদন অগ্রবর্তী করতেন। এখন সে পথও রুদ্ধ। কারণ এসিল্যাণ্ড নিজেই ১৪৫ ধারা মামলার বাদি বিবাদীকে সশরীরে তলব করে শুনানি করেন। ফলে, প্রতিবেদনে অন্দরমহলে কিছু তোলে দেবার সুযোগ নেই। এতে ভূমি সেবা নিতে যারা আসেন তারা সকলেই সন্তুষ্ট বলে জানা যায়।


এক সময় ভূমি অফিসের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সাধারণ মানুষ ভূমি অফিসে আসতে ভয় পেত। আর দালালদের উৎপাত ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এখন সবই অতীত। সব সিন্ডিকেট ভেঙে সাধারণ মানুষের সেবায় কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিস উন্মুক্ত দ্বার।


সাধারণ মানুষ এখন যেকোনো অভিযোগ দিতে সরাসরি সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরীর রুসে আসছেন। নিজেদের অভিযোগ- সমস্যার কথা নিজেরাই কর্মকর্তার কাছে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা/সেবা পাচ্ছেন।


এতে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে ভূমি অফিসে খোলা হয়েছে সেবা সহায়তা কেন্দ্র, সুবিন্যস্ত রেকর্ড রুম, তথ্য বাতায়ন, সিটিজেন চার্টার, ওয়েটিং রুম, ডিজিটাল সাইনবোর্ড, শুনানির মাধ্যমে জবাবদিহিতাসহ তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া এক আলোকোজ্জ্বল ভূমি সেবা।


এছাড়াও রেকর্ডরুম সুন্দরভাবে বছরওয়ারী সাজানো হয়েছে। আগে অতীতের কোন তথ্য উপাত্ত বা মামলার নথিপত্র দেখতে অনেক সময় লেগে যেত। নথি পেতে টাকা লাগতো। এখন আবেদন করলেই ফ্রিতে সমস্ত নথিপত্রের কাগজ পেয়ে যাচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। উপজেলা ভূমি অফিসের চারপাশ সুসজ্জিতভাবে সুচারুরূপে সাজানো-গোছানো। সব মিলিয়ে পাল্টে গেছে কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিস।


অফিসে সেবা পেতে আসা আলমগীর, লেয়াকত ও মোহাম্মদ আলী জানান, বর্তমান এসিল্যান্ড স্যার যোগদানের পর থেকে ধীরে ধীরে বদলে দিয়েছেন অফিসের অবস্থানসহ বিভিন্ন সেবাসমূহ। আগে করণিক ভুল ঠিক করতে হাশর কেয়ামত নামতো এখন ওয়ান স্টপে সার্ভিস পাচ্ছি। যা কল্পনার বাহিরে। আগে প্রতিটি ইউনিয়নে দখল বেদখল, মারামারি ও পরিষদে জায়গা জমি নিয়ে নানা বিচার সালিশ ছিল এখন তাও কমে গেছে।


তিনি প্রায় দেড় বছর ধরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে অফিসের সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে করে উপজেলা ভূমি অফিসে বৃদ্ধি পেয়েছে সেবার মান। সেবা পেয়ে ভুক্তভোগী জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।


যদিও বর্তমান সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। দেখা মিললেও একটা কথার জায়গায় দুইটা কথা বলা যায় না। সেখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী।


সকলে জানেন কর্ণফুলীতে ভূমি সেবা নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু বর্তমান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নানামুখী পদক্ষেপের ফলে ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে ভূমি অফিস একটি জনবান্ধব অফিসে পরিণত হয়েছে। সেবা প্রার্থীদের প্রত্যেকের সঙ্গে তাঁদের সমস্যা নিয়ে কথা বলে সমাধান দিচ্ছেন এসিল্যান্ড নিজেই।


সেবাপ্রার্থীরা আরও বলেন, ‘এসিল্যান্ড সাহেব অনেক ভালো মানুষ। তিনি আমাদের সব কথা শুনেন এবং কি করতে হবে, পরামর্শ দেন। খুব ভালো লাগছে। আগে কিছু দালালদের কারণে এসিল্যান্ড বরাবরে যাওয়া যেতো না। যেকোনো মানুষ যেকোনো সময় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে এখন কথা বলতে পারছেন। উনার সেবা ও আচরণে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট।’


স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, বিভিন্ন সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সরকারি খাস ১৩ একরের ও বেশি জমি উদ্ধার। যা বাজার মূল্য প্রায় শত কোটি টাকার উপরে। এছাড়াও নদী থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন বন্ধ, অবৈধ অনুমোদনহীন খাদ্য কারখানা বন্ধ, প্রটেকশনহীন এলপিজি গ্যাস কেনা-বেচা, অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়ানস্টিক, অপরিচ্ছন্ন হোটেল এবং সরকারি খাল দখলসহ নানা বিষয়ে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের দণ্ড ও সেবামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।


এ ব্যাপারে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক স্যারের দিক নির্দেশনায় আমাদের অফিসে আসা সকলের জন্য জনবান্ধব জনসেবা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। একজন মানুষও যাতে ভোগান্তির স্বীকার না হয় সেজন্য আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি। আমি সব সময় চেষ্টা করি সর্বোচ্চ সেবা দিতে।’


তিনি বলেন, ‘যার কাজ তাকেই সরাসরি আমার অফিসে আসতে উৎসাহ দিচ্ছি। অন্য কারো হাত দিয়ে আসা মানেই সেখানে অন্য ব্যক্তি ঢুকে পড়া। ফলে এখন সেবা গ্রহীতারা সরাসরি আমার অফিসে আসতে পারছেন।’


বিবার্তা/জাহেদ/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com