উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ
খুলনায় ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীকে হাসপাতাল থেকে অপহরণ
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:৪৩
খুলনায় ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীকে হাসপাতাল থেকে অপহরণ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা এক কলেজশিক্ষার্থীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।


২৮ জানুয়ারি, রবিবার বিকেল ৫টার দিকে হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর তাকে অপহরণ করা হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যরা।


এর আগে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে অনেক দিন ধরে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার। শনিবার রাত সোয়া ১১টায় ওই শিক্ষার্থী নিজেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন।


রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় ওসিসি থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর আগেই সেখানে উপস্থিত হন গণমাধ্যমকর্মী ও আইনজীবীরা।


ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাংলাদেশ মানবাধিকবার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে আইনি সহায়তা দিতে তাদের ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার বিকালে হাসপাতালের ওসিসিতে যান। সেখানে অপরিচিত এক ব্যক্তি ওই শিক্ষার্থীর ছাড়পত্র নিচ্ছিলেন। তার পরিচয় জানতে চাইলে ওসিসির দায়িত্বরত ব্যক্তিরা সবাইকে বাইরে বের করে দেন। বাইরে বের হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ১৫/২০ জন ব্যক্তি জোর করে ওই শিক্ষার্থী ও তার মাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় দুই সাংবাদিক আহত হন।


তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার নারীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল ওসিসি। সেখান থেকে ভিকটিমকে যেভাবে অপহরণ করা হলো তাতে আমরা আতংকিত। পুরোটা সময় ওসিসির নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ সদস্যরা নীরব ছিলেন। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।


খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপকমিশনার তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা তাকে অপহরণের সংবাদ পেয়েছি। পুলিশের একাধিক ইউনিটকে সতর্ক করা হয়েছে। অপহরণে যারা জড়িত সবাইকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে স্থানে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে, সেটা জেলা পুলিশের আওতাধীন এলাকা। তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে।


খুলনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসিফ ইকবাল বলেন, আমাদের কাছে এ পর্যন্ত ওই নারী বা তার পরিবারের কেউ আসেননি। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা তাকে আইনি সহায়তা দিতে বাধ্য।


খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক এবং ওসিসির কো-অর্ডিনেটর সুমন রায় বলেন, গতকাল শনিবার রাতে ওই নারী ইমার্জেন্সিতে আসেন। পরে তাকে ওসিসিতে আনা হয়। আমরা আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে ছাড়পত্র দিয়ে পরিবারের কাছে তুলে দিয়েছি। তার মা এবং ভাই তাকে নিতে এসেছিলেন। এর আগে আমরা পুলিশকে জানাই। ডুমুরিয়া থানা থেকে আমাদেরকে বলা হয়, এ বিষয়ে কেউ থানাতে কোনো অভিযোগ দেয়নি। আমরা তখন তাকে জিজ্ঞাসা করি, তিনি থানাতে মামলা করবেন কি না। তখন নারী বলেন, থানার ওপর তার ভরসা নেই। তিনি আদালতে মামলা করবেন।


ডাক্তার সুমন রায় আরও বলেন, তাকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি আমরা। তখন ডুমুরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) এসে তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। আমরা নারীর সব সার্পোটিং আলামত রেখেছি। আদালত চাইলে তা হস্তান্তর করব।


ওই কলেজশিক্ষার্থীর ভাই অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান শনিবার রাতে মোবাইল করে তার বোনকে শাহপুর এলাকায় চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অফিসে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। রাত সোয়া ১১ টায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয় এবং আজ বিকেলে তাকে অপহরণ করা হয়।


তিনি আরো জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনেকদিন ধরে তার বোনকে ধর্ষণ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।


অভিযোগ বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।


বিবার্তা/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com