হিলিতে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:৪৬
হিলিতে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা
হিলি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুর হিলি উপজেলায় সরিষার হলুদ ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌয়ালরা। উপজেলার সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন তারা।


মৌয়ালরা জানান, এতে আর্থিকভাবে তারা যেমন লাভবান হচ্ছেন, বেকারত্বও দূর হচ্ছে। অন্য দিকে উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, একদিকে মৌয়ালরা মধু বিক্রি করে যেমন আয় করছেন, অন্যদিকে ক্ষেতের পাশে মধু চাষ করায় আগামীতে সরিষার ফলন আরও বাড়বে।


মৌয়ালরা জানান, তারা সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। বাক্সের ভেতর রাখা হয় একটি রানি মৌমাছি। রানি থাকায় অন্য মৌমাছিরা আসতে থাকে ওই বাক্সে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌয়ালরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। এতে মৌয়ালরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে তাদের দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এসব মধু স্থানীয়ভাবে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন তারা।


হাকিমপুর হিলি পৌরসভার ছাতনী গ্রামের সড়কের পাশে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন সাতক্ষীরা জেলা সদর থেকে আসাদুজ্জামান।


তিনি সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে বাক্স তৈরি করা হয়। বাক্সে উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে। ভেতরে কাঠের তৈরি ৭টি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় এক ধরনের সিট লাগানো থাকে।


বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে ফাঁকা জমিতে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছির দল। রানি মৌমাছির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে পুরুষ মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে প্রায় ১ থেকে দেড় হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে।


মৌয়াল আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। বাকি আট মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পুষিয়ে রাখতে হয়। ডিসেম্বর মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়।


তিনি আরও বলেন, আমি এখানে গত ১০ জানুয়ারি এসেছি কিন্তু কনকনে শীত ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কাঙ্ক্ষিত মধু সংগ্রহ করতে পারছি না। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া যায় সেখানে ৪ থেকে ৫ কেজি পাচ্ছি। আগামীতে আশা করছি কাঙ্ক্ষিত মধু সংগ্রহ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।


আমি এই মাঠে ৮০টি বাক্স ফেলে রেখেছি। প্রতি কেজি মধু বিক্রি খুচরা বিক্রি করছি ৪০০ টাকা দরে।


মধু কিনতে আসা উপজেলার হাবিবপুর ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা মো. হাসমত আলী বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে আমার মাদ্রাসায় যাই। মধু সংগ্রহের লোক দেখে আজ নামলাম। কারণ এখানে খাঁটি মধু পাওয়া যাবে। মধু তো মহা ওষুধ তাই নিজের পরিবারের জন্য এক কেজি ৪০০ টাকা দিয়ে কিনলাম। সরাসরি সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা তাই খুব সুস্বাদু।


হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, এবার হাকিমপুর হিলি উপজেলায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। চাষিরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ৩টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সরিষা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।


আরজেনা বেগম আরও বলেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ গুণ বেড়ে যায়। এতে সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহও লাভ জনক ব্যবসা। এর ফলে একদিকে মৌয়ালরা মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে সরিয়া ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে। আগামীতে সরিষার আবাদ বেশি হলে এসব মৌয়ালরা আরও মৌয়ালদের ডেকে আনবে বলে আশা করছি।


বিবার্তা/রববানী/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com