
উত্তরের জেলা নীলফামারীতে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় বেড়েছে ভুট্টার আবাদ। তবে সেই ভুট্টা ক্ষেতেই এবার আক্রমণ করেছে পোকা, এতে হতাশায় ভুগছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। অথচ তাদের এই ক্রান্তিলগ্নে কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা মিলছে না। দিশেহারা কৃষকরা ছুটছেন কীটনাশক বিক্রেতাদের কাছে। কীটনাশক বিক্রেতার ওষুধেও মিলছে না সুরাহা।
সদর উপজেলার অনেক কৃষকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। নষ্টের পথে শতবিঘা জমির ভুট্টা ক্ষেত। কৃষকরা বলছেন, দিনের আলোতে এই পোকার আক্রমণ কম। এই পোকার আক্রমণ শুরু হয় রাতে। ছোট গাছের গোড়া পর্যন্ত কেটে ফেলছে এই পোকা। এভাবে ভুট্টাক্ষেত নষ্ট হওয়ায় ফসল ঘরে তোলার আশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেক কৃষক। এই সমস্যার সমাধান না পেলে ক্ষতি পোশাতে বিকল্প আবাদের কথা জানান কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, বীজ পরিশোধন করে ভুট্টা চাষ করলে পোকার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ দুই হাজার ৮০১ মেট্রিক টন। এর মধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলায় ২ হাজার ৮৩২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হয় নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের আকাশকুড়ি এলাকার কৃষক পরেশ রায়ের সঙ্গে। পরেশ রায় জানান, এ মৌসুমে তিন বিঘা ভুট্টা লাগিয়েছেন তিনি। তবে ভুট্টা ক্ষেতে অতিরিক্ত পোকার আক্রমণ ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে হতাশায় ভুগছেন তিনি।
পরেশ রায় আরও বলেন, গতবার ভুট্টা খেতে যখন পোকার আক্রমণ হয়েছিল তখন একবার স্প্রে করেই পোকা মরেছে। তিন থেকে চারবার কীটনাশক স্প্রে করেও মিলছে না প্রতিকার। তবে তার অভিযোগ- পরামর্শের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে নিযুক্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সহ কাউকেই পাশে পাননি।
উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের দোগাছি এলাকার কৃষক আসাদুল ইসলাম বলেন, এই পোকা গাছের মূল কাণ্ডটা কেটে দেয় আর এই পোকাটা সন্ধ্যার পর বের হয়। স্থানীয় দোকান থেকে কীটনাশক নিয়ে এসে চার-পাঁচ বার স্প্রে করছি কিন্তু কোনো কাজ হয় না। এই কীটনাশক কিনতে কিনতে প্রচুর টাকা শেষ করছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।আমাদের এখানকার কৃষি কর্মকর্তা এসে যে আমাদের ভুট্টা খেত দেখবে, আমাদের পরামর্শ দেবে তা তিনি কোনোদিন করেননি। মাঠপর্যায়ে তাকে কোনো দিন দেখা যায়নি। বাজারে যে কীটনাশক-সার-বীজের দাম তাতে করে আমাদের খরচের অর্ধেক টাকাও উঠবে না।
একই এলাকার প্রফুল্ল রায় নামে আরেক কৃষক আক্ষেপ নিয়ে বলেন, গতবারও একই জমিতে আবাদ করেছিলাম, বিঘায় ৪০ মন ভুট্টা পাইছিলাম। আর এবার যে অবস্থা মনে হয় না ৫ মণ ভুট্টা পাব। পোকা সব শেষ করে দিচ্ছে। পোকার এত আক্রমণ যে, কীটনাশক স্প্রে করে কাজ হচ্ছে না। এখন ভুট্টাগুলা তুলে ফেলে ধান আবাদ করা ছাড়া উপায় নেই।
পোকার আক্রমণের কথা স্বীকার করে নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, আগে যেটা দেখেছিলাম ভুট্টার জমিতে রোগবালাই কম হতো এজন্য কৃষকরা ভুট্টা বেশি করে আবাদ করতেন। ইদানিং যেহেতু বেশি আবাদ হচ্ছে আবার একই জমিতে পরপর কৃষকরা ভুট্টা আবাদ করছেন, এ কারণে ভুট্টায় পোকার আক্রমণটা বাড়ছে। সেই জন্য কৃষকদের আমরা বীজ শোধন করে রোপণ করার পরামর্শ দিয়েছি। বিশেষ করে সিনজেনটা ফরতেনজা এই ওষুধটি বা এ জাতীয় ওষুধ দিয়ে বীজ শোধন করে রোপণ করলে চারা গজানোর সাথে সাথে যে কাটই পোকার আক্রমণ হয় সেটা কমে যায়। যেসব কৃষক বীজ শোধন করে রোপণ করেছেন তাদের ভুট্টাখেত ভালো আছে, যারা বীজ শোধন করেননি তারা এই আক্রমণে ভুগছেন। যাদের জমিতে এই পোকার আক্রমণ হয়েছে তারা কাটই পোকা দমনে যে ওষুধগুলো রয়েছে কার্যকর মাত্রায় অবশ্যই বিকেল বেলা স্প্রে করতে হবে। তাহলে আশা করছি কাজ হবে।
বিবার্তা/জামান/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]