ঘর-বাড়ি ছাড়া চরফ্যাশনে বিএনপির হাজারো নেতা-কর্মী!
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ২০:১৩
ঘর-বাড়ি ছাড়া চরফ্যাশনে বিএনপির হাজারো নেতা-কর্মী!
ভোলা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী ঘর-বাড়ি ছাড়া। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ফিরে মামলা থেকে বাঁচতে কেউ বাড়ি-ঘরে থাকছেন না। আর কোনো নেতাকর্মীকেও দেখা যাচ্ছে না চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে।


চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দিতে চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি, ইউনিয়ন বিএনপি ও বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীসহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, ওলামা দল, জিয়া পরিষদ, কৃষক দল, তাঁতী দল ও মহিলা দলের কয়েক হাজার


নেতাকর্মীরা ঢাকায় যান। ওই মহাসমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশ ও বিএনপি কর্মী নিহত ও আহত হওয়ার জেরে মহাসমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়। এরপর নেতাকর্মীরা এলাকায় আসলেও গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে আবার ঢাকায় ও বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন।


ঢাকার ওই ঘটনার রেশ ধরে গত এক সপ্তাহে চরফ্যাশনের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ- বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বাসায় অভিযান চালায়। অভিযানে পুলিশ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের প্রায় ২০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছেন।


পুলিশের অব্যাহত অভিযানের কথা নেতাকর্মীদের মধ্যে জানাজানি হলে তারা নিরাপদে অবস্থান করছেন। এমনকি বিএনপির ডাকা চলমান সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচিতে কোনো নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। দলীয় কার্যালয়টিও রয়েছে বন্ধ।


উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ফিরে মামলার ভয়ে বাড়িতে থাকছি না। অন্যত্র অবস্থান করছি, কবে বাড়ি-ঘরে যেতে পারব বলতে পারছি না।


উপজেলার শশীভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা হাজী রফিকুল ইসলাম বেপারী বিবার্তাকে বলেন, মহাসমাবেশ থেকে পুলিশি হয়রানির ভয়ে এখনো বাড়িতে আসিনি।


গত এক সপ্তাহে শশীভূষণে বিএনপির ৪ নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে আদালতে পাঠিয়েছে। এবং আ’লীগের হামলায় আহত হয়েছেন ৫ নেতাকর্মী। ফলে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন এসব নেতাকর্মীদের পরিবারগুলো।


চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সিকদার হুমায়ুন কবির বিবার্তাকে বলেন, গত ২ নভেম্বর চরফ্যাশনে একটি মটরসাইকেল পোড়ানোর নাটক সাজিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ১৩ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এবং গত ৪ নভেম্বর মধ্য রাতে চরফ্যাশন বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়কসহ বিএনপির ৪ নেতাকর্মীকে আটক করে ওই গাড়ি পোড়ানো মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। আমরা এসব মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।


চরফ্যাশন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. শহিদুল ইসলাম প্রিন্স মহাজন বিবার্তাকে বলেন, বাড়ি-ঘরে থাকলে পুলিশ গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করবে। ওই কারণে এখন আর আমরা বাড়ি-ঘরে থাকি না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়িতে না থেকে নিরাপদে অবস্থান করে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে বলেছি।


চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আরিফ ফরাজী ও সদস্য সচিব কাজী অনিক বিবার্তাকে জানান, আমাদের অনেক নেতাকর্মীরা ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে চরফ্যাশন ফিরে গ্রেফতারের ভয়ে অন্যত্র অবস্থান করছে। প্রতিদিনই পুলিশ কোনো না কোনো নেতাকর্মীর বাড়িতে হানা দিচ্ছে।


চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন টিপু বিবার্তাকে বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ফিরে মামলার ভয়ে প্রায় সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখন বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছেন না। পুলিশ গত এক সপ্তাহে চরফ্যাশনে প্রায় ২০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে আদালতে পাঠিয়েছে। সরকার আমাদের যতই হয়রানি করুক না কেন, আমরা রাজপথে ছিলাম, এখনো আছি। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাব না।


চলমান অবরোধে আপনাদের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, আমরা মাঠেই আছি।


চরফ্যাশনে পুলিশি হয়রানি, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার এবং আ’লীগ কর্মী সমর্থকদের হামলা, মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন।


চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাখাওয়াত হোসেন বিবার্তাকে বলেন, আমরা কাউকে অহেতুক হয়রানি করছি না। যাদের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।


এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (চরফ্যাশন সার্কেল) মো. মেহেদী হাসান বলেন, পুলিশ কোন দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। ওয়ারেন্ট ও বিভিন্ন মামলার আসামি গ্রেফতার পুলিশের রুটিন কাজ। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করছেন।


আ’লীগ নেতাকর্মীদের হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ কোন থানায় কেউ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও এই কর্মকর্তা জানান।


বিবার্তা/শাহীন/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com