কর্ণফুলীতে ২১ বছর পর খতিয়ান পেলেন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৬
কর্ণফুলীতে ২১ বছর পর খতিয়ান পেলেন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এখলাছুর রহমান এর পরিবার দীর্ঘ ২১ বছর পর কোটি টাকার সম্পত্তি ও খতিয়ার ফিরে পেলেন। এমনকি কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরীর বিচক্ষণতায় ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পুনরায় পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও।


জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এখলাছুর রহমান ২০০২ সালে সরকারের কাছ থেকে ১০০ টাকা মূল্যে ১৮ গণ্ডা খাসজমি লিজ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সে জমি ভোগ করতে পারেননি এখলাছুর রহমান। স্থানীয় প্রভাবশালী শেখ মোহাম্মদ জমিটি দখল করে রেখেছেন। দেড় বছর আগে মারা যান এখলাছুর রহমান। ওই সময় তিনি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। এখলাছুরের মৃত্যুর পর সম্প্রতি তার নাম বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে তালিকাভুক্ত হয়।


স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি চাইলেও তাদের সম্পত্তি দখলে নিতে পারতো না। যদিও তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দীর্ঘ ২১ বছর অপেক্ষা করেছেন। প্রথম থেকেই তারা জমির প্রকৃত মালিক ছিল। কিন্তু জমিটি প্রভাবশালীরা দখলে নেন।


বড়উঠান এলাকার ইউপি সদস্য মো. ফরিদ বলেন, ‘বিষয়টি অকল্পনীয়। কোথা থেকে কি বের হলো আশ্চর্য জনকভাবে। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও জীবন দশায় এখলাছুর রহমান ছিলেন দৌলতপুর স্কুলের দপ্তরি। তার নামে সরকার তৎসময়ে ৩৭ শতক জমি বন্দোবস্ত দলিল করে দেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য কোটি টাকার উপরে। বর্তমান এসিল্যাণ্ড সাধারণ মানুষের সেবায় স্বচ্ছ ও দুর্নীতি মুক্ত ভূমি সেবার মানকে জনকল্যাণে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন। যার ফলে, মুক্তিযোদ্ধা পরবারটি ২১ বছর পর হলেও খতিয়ান অর্জন করে‌ছেন।’


বড়উঠানের ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম জানান, ‘এই জমি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ঝামেলা চলে আসছিল। অবশেষে সকল সমস্যার অবসান ঘটিয়ে কর্ণফুলী এসিল্যাণ্ড সকল কাগজপত্র দেখে জমির প্রকৃত মালিককে খতিয়ান বুঝিয়ে দিয়েছেন।’


২১ বছর পর জমির খতিয়ান পেয়ে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মোছানা বেগম (৪০) জানান, ‘কর্ণফুলী উপজেলার বর্তমান এসিল্যাণ্ড এর উপর ভরসা ও আস্থা ছিলো। তারই প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ২১ বছর পরে হলেও ৩৭ শতাংশ জমির খতিয়ান পেয়েছি। যার মৌজা দৌলতপুর। সৃজিত খতিয়ান নম্বর ৪৪৯১। দাগ নম্বর ১৫৮। এজন্য আমরা কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার এর প্রতি চির কৃতজ্ঞ।’


তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাবার পর থেকে মানে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও তিনি পাননি। এমনকি নিজ জমি ছেড়ে দৌলতপুর রাস্তার ধারে ৪ সন্তান নিয়ে বসবাস করেছি। এসিল্যান্ড স্যার তাৎক্ষণিক বিষয়টি জেনে, উপজেলা সমাজসেবা অফিস ও সংশ্লিষ্ট দফতরে বিষয়টি জানিয়ে পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেন।’


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘এটা নিয়ে আমার তেমন বলার কিছু নেই। আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্বটুকু পালন করেছি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ২১ বছর পর হলেও জমির খতিয়ান দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’


প্রসঙ্গত, মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি বড়উঠান (২নং ওয়ার্ড) ফাজিলখাঁর হাট দৌলতপুর গ্রামের বুধু মাঝির বাড়ি। তিনি দেশের জন্য সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করেছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরী কর্তৃক দেয়া পরিচয়পত্রে তার মুক্তিবার্তা নং-০২০২০৪০৩৯৬।


মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত তালিকায় কর্ণফুলী উপজেলায় তার ক্রমিক নং- ৬৫। যার পরিচিতি নম্বর-০১১৫০০০৯৮৬৯। বেসামরিক গেজেট নম্বর-৭৩৬৮। পিতার নাম মৃত কামাল উদ্দিন। মাতার নাম গোল বাহার খাতুন। জাতীয় পরিচয় নং-১৫১৬১১৮৮৮৫১৪৬।


বিবার্তা/জাহেদ/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com