পূর্ণিমার জোয়ার ও নিম্নচাপের প্রভাবে মোরেলগঞ্জে ৩০ গ্রাম প্লাবিত
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ২১:৫১
পূর্ণিমার জোয়ার ও নিম্নচাপের প্রভাবে মোরেলগঞ্জে ৩০ গ্রাম প্লাবিত
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পূর্ণিমার জোয়ার ও নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষণে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৩০ গ্রাম ও পৌরসভা গত দুদিনের জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকার অন্তত সহস্রাধিক বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। পূর্ণিমার জোয়ার ও ভারী বর্ষণে হঠাৎ করে নদী-খালের পানি বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।


৩ আগস্ট, বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, প্লাবনে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম এবং পানগুছি নদীর তীরবর্তী মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের ফেরীঘাট সংলগ্ন এলাকা, বারইখালীর কাশ্মীর, বলইবুনিয়ার শ্রেণীখালী, বহরবুনিয়ার ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী, মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের নতুন করে আধা কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা ধ্বসে গেছে।


এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার নদীর তীরবর্তী ২৫ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা রাস্তা, বাড়িঘর, বেড়িবাঁধসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে রয়েছে। হুমকিতে রয়েছে হোগলাবুনিয়ার বদনীভাঙ্গা, সানকিভাঙ্গা, পাঠামারা, খাউলিয়া বাজারের ব্রিজ, অম্বিকা চরণ লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বদনীভাঙ্গা আর্দশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৮০নং বি পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বহরবুনিয়ার এসবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।


এছাড়াও পঞ্চকরনের দেবরাজের পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ১ হাজার ২০০ মিটার অস্থায়ী বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পানগুছি নদীর ভাঙ্গনের ফলে ফসলি জমি, বাড়িঘর গাছপালা বিলীন হয়ে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার।


বারইখালী গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান নান্নু, আবুল কালাম খোকন, পঞ্চকরন গ্রামের জাহানারা আক্তার, খুকি বেগম বলেন, জোয়ারের পানি ঢুকে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। চুলাায় পানি উঠায় দুপুরের রান্না করতে হয় বিকালে।


মোরেলগঞ্জ শহরের ফল ব্যবসায়ী লাল মিয়া, কাপড় ব্যবসায়ী ইব্রাহিম শেখ বলেন, দুপুর ১২টা বাজলেই পানির চাপ বেড়ে দোকানে ঢুকে পড়ে পানি। ৩ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। গ্রাম থেকে আসা ক্রেতারা চলে যায় তড়িঘড়ি করে।


ভুক্তভোগীরা অনেকে জানান, শহর রক্ষা বাঁধসহ সন্ন্যাসী হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত নদীর দুপাড়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এর একটা স্থায়ী সমাধানের দাবি করেন তারা।


এ বিষয়ে পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট মনিরুল হক তালুকদার জানান, শুধু শহর রক্ষা বাঁধ নয়, ইতোমধ্যে গাবতলা হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত স্থায়ী বেড়িবাঁধের টেন্ডার হয়েছে। ২০১৭ সালে এ প্রকল্পের প্রস্তাবনা হয়েছে। বাস্তায়নের অপেক্ষায় শহরবাসী। বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হলে এ সমস্যা থাকবে না।


এদিকে নদীর তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা, বারইখালীর চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল খান মহারাজ, হোগলাবুনিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান, বহরবুনিয়ার চেয়ারম্যান রিপন হোসেন তালুকদার বলেন, গত দুই দিনের পানির চাপে নদীর তীরবর্তী তাদের ইউনিয়নগুলো অনেক কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দেবরাজ পঞ্চকরনের অস্থায়ী বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে এক সপ্তাহ পানির চাপ থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে গ্রামবাসীরা।


বাগেরহাট জেলা পানিউন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোরেলগঞ্জ শহর সংলগ্ন রামপাল-মোংলা হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের সম্ভাব্যতা সমিক্ষার জন্য মন্ত্রানালয়ে প্রস্তাবনা রয়েছে। এছাড়াও ইতোমধ্যে পানগুছি নদীর ভাঙন হতে বাগেরহাট জেলা সদর সংলগ্ন এলাকা সংরক্ষণ এবং বিষখালী নদী পুনঃখনন শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।


বিবার্তা/রাজু/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com