হিলি বন্দরে কমছে না কাঁচামরিচের ঝাল
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৩, ২০:৩৬
হিলি বন্দরে কমছে না কাঁচামরিচের ঝাল
হিলি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের বাজারে কাঁচামরিচের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দেয়। ফলে দীর্ঘ ১০ মাস পর গত ২৬ জুন হিলি বন্দর দিয়ে আবারও কাঁচামরিচের আমদানি শুরু হয়েছে। কিন্তু হিলি স্থলবন্দর বাজারসহ দেশের বাজারে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে এই পণ্যটির দাম।


বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমের কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে কাঁচামরিচ আমদানিতে সরকারি শুল্ক কমানোর দাবি বন্দরের আমদানিকারকদের। বর্তমানে বন্দরের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি। হঠাৎ করে বাজারে পণ্যটির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিন্ম আয়ের মানুষ। সেই সাথে বিক্রিও কমেছে বিক্রেতাদের।


১ জুলাই, শনিবার হিলি বন্দরের কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের অধিকাংশ দোকানেই কাঁচা মরিচ মিলছে না। দু-একটি দোকানে অল্প পরিমাণে কাঁচা মরিচ বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। বাড়তি দামের কারণে দোকানিরা কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন না। বাজারে ক্রেতাদেরও কাঁচা মরিচ কেনার তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। পণ্যটির হঠাৎ দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রেতাদের বিক্রিও কমে গেছে।
হিলি বাজারে কাঁচামরিচ কিনতে আসা গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন বলেন, কাঁচা মরিচ সব পরিবারে কম বেশি লাগে। তাই ঈদের পরে বাজারে আসছি কাঁচা মরিচ কিনতে। বাজারে এসে দেখি কাঁচা মরিচের যে ঝাল তাতে কিনা তো দূরের কথা হাত দেওয়া যাচ্ছে না। মনে মনে ভাবতেছি কাঁচা মরিচ খাওয়া বাদ দিতে হবে। আজ প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা দাম শুনলাম কিন্তু নেওয়ার সাহস পেলাম না।


হিলি সবজি বাজারে আসা আরাফাত হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে করে আমাদের মতো সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। বাজারে আসলে হঠাৎ পণ্যের দাম বৃদ্ধি শুনে নিজেই অবাক হয়ে যাই। কোন কিছুতে হিসাব মিলাতে পারি না। ঈদের আগের দিন বাজার থেকে কাঁচা মরিচ কিনে নিয়ে গেলাম ২৪০-২৫০ টাকা। আজ আবার বাজারে শুনতেছি প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৫০০ টাকা। কিভাবে হিসাব মিলাই। কাঁচা মরিচ না নিলে বাড়িতে বউ রাগ করবে তাই উপায় না পেয়ে অল্প একটু নিলাম।


হিলি বাজারের সবজি বিক্রেতা মইনুল ইসলাম বলেন, রাগ করে দোকানে কাঁচা মরিচ উঠাইনি। রাতারাতি মরিচের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ক্রেতাদের সাথে বেশি কথা বলতে হয়। তাতে অনেক সময় বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। দাম বেশি হলে বিক্রিও কম হয়। সব মিলে দোকানে কাঁচা মরিচ উঠাইনি অনেক ভালো আছি।


হিলি বাজারের আর এক সবজি বিক্রেতা আব্দুল খালেক বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ থাকলেও দেশি কাঁচা মরিচ দিয়েই দেশের বাজারে সাধারণ মানুষের চাহিদা মিটছিল। দীর্ঘ দিন পর আবারও বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচের আমদানি শুরু হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঁচা মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারে কাঁচা মরিচের যে চাহিদা সেই তুলনায় সরবরাহ কমের কারণেই দাম বাড়ছে। আর মাত্র দুই দিন পরে বন্দর দিয়ে আমদানি শুরু হলে দাম অনেক কমে আসবে বলে আশা করছি।


তিনি আরো বলেন, মোকামে প্রায় প্রতিদিনই কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে। আমরা যখন যে দামে কিনছি সেই মোতাবেক বাজারে বিক্রি করছি। আমরা ঈদের আগে কাঁচা মরিচ ২২০ টাকা কেজিতে কিনে বাজারে বিক্রি করেছিলাম ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। আজ সেই কাঁচা মরিচ মোকামেই ২৫ কেজি কিনলাম ১০ হাজার টাকা দিয়ে। মানে কিনতেই আমাদের ৪০০ টাকা কেজি পড়লো। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ রয়েছে। নষ্টসহ অন্যান্য কিছু মিলিয়ে ৫০০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করছি।


হিলি স্থলবন্দরের কাঁচা মরিচের আমদানিকারক সততা বাণিজ্যলয়ের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব বাবলু রহমান বলেন, দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম সহনশীল রাখতে সরকার গত ২৫ জুন ভারত থেকে আমদানির অনুমতি (আইপি) দেয়। বন্দরের কয়েকজন আমদানিকারক বেশ কয়েক হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি পায়। সেই মোতাবেক আমিও কাঁচা মরিচ আমদানির জন্য এলসি খুললে দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধের পর ২৬ জুন আমদানি শুরু হয়। ওই দিন গত ২৬ জুন তিনটি ট্রাকে আমার ১৭ মে. টন কাঁচা মরিচ বন্দরে প্রবেশ করেছে। এসব বন্দরের ভিতরে ট্রাক সেল হিসেবে ২০০-২২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে। তবে মাত্র একদিন বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। এরপর ঈদের ছুটির কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের ছুটি শেষে আবারও আমদানি শুরু হলে দাম কমে আসবে বলে আশা করছি।


তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ভারতের মোকামেই কাঁচা মরিচের দাম বেশি। এর ওপর রফতানি শুরু হওয়ায় কেজিতে আরও ২০ টাকা করে বেড়েছে দাম। এতে ভারত থেকে ওই দামে কাঁচা মরিচ কিনে এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়া যোগ হচ্ছে। এছাড়া ১ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানিতে শুল্ক দিতে হচ্ছে ৩৫ টাকা। তাই ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি ক্ষেত্রে সরকারি শুল্ক কমানোর জোড় দাবি জানাচ্ছি।


হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাপ বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে আমদানির অনুমতি না থাকায় ১০ মাস বন্ধের পর গত ২৬ জুন থেকে আবারও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়। এদিন বন্দর দিয়ে পাঁচটি ট্রাকে ২৭ হাজার ১৬৬ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি হয়।
তিনি আরও বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি উপলক্ষে ২৭ জুন থেকে ২ জুলাই রবিবার পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩ জুলাই সোমবার থেকে বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানিসহ সকল কার্যক্রম পূর্বের নিয়মে চালু হবে।


বিবার্তা/রব্বানী/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com