আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিদ্যালয়ে নিয়োগের অভিযোগ
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩, ১৬:৪৮
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিদ্যালয়ে নিয়োগের অভিযোগ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বড়গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে গোপনে বিএনপি-জামায়াতকর্মীদের নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।


সংশ্লিষ্ট পদে অবেদন করে যাদের প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি বা নিয়োগ বোর্ডে ডাকা হয়নি তাদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থী প্রতি মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এলকাবাসী ও অভিভাবকগণ।


নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায় মো. বাবুল আক্তার মিঠু ও মো. ইসরাফিল হোসেন যৌথভাবে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দৌলতপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও তারা কোন প্রতিকার না পেয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হন। কুষ্টিয়া জজ আদালত নিয়োগে নিষেধাজ্ঞার
জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পরও ওই বিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থিত প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুল হক গত মঙ্গলবার (৬ জুন) গোপনে তার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন বলে নিয়োগ বঞ্চিতরা অভিযোগে জানিয়েছেন।


অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের বড়গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থিত প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুল হক স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতকর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার শর্তে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ ৩টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেন। কিন্তু মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এসব পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করেন আড়িয়া এলাকার বিএনপিকর্মী মো. জামাত আলী মণ্ডলের ছেলে মো. সুমন আল মামুন ও ওমরপুর এলাকার মো. বজলুর রহমানের ছেলে ফয়সাল আহমেদসহ নিকট আত্মীয়দের।


বিষয়টি জানাজানি হলে গোপন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবী জানিয়ে বড়গাংদিয়া এলাকার মো. জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন সচেতন নাগরিক দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দৌলতপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগদেন। একইসাথে তিনি বর্তমান উন্নয়নের সরকারের বাইরে ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াত নেতা, কর্মী ও ক্যাডারদের নিয়োগ না দেয়ার দাবী জানান। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে গোপন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে গত ১৩ এপ্রিল আবারও একই পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুল হক। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মো. বাবুল আক্তার মিঠু, মো. ইসরাফিল হোসেন, মামুনার রশিদ, বিদ্যুৎ খানসহ আরো অনেকে আবেদন করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তার পছন্দের প্রার্থীদের মাঝে প্রবেশপত্র সরবরাহ করলেও আবেদনকারী মো. বাবুল আক্তার মিঠু, মো. ইসরাফিল হোসেন, মামুনার রশিদ, বিদ্যুৎ খানসহ অনেককে প্রবেশপত্র দেননি। প্রবেশপত্র না পেয়ে তারা দৌলতপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহম্মদ আবু সালেকের কাছে অভিযোগ দেন।


অভিযোগ দেয়ার পরও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি ৬ জুন দুপুরে মিরপুরে একটি স্কুলে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হয়ে প্রধান শিক্ষকসহ নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িতদের মনোনিত প্রার্থীদের নিয়োগ দেন।


এরআগে নিয়োগ বন্ধ ও স্থগিতাদেশ চেয়ে বড়গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আল মামুন দৌলতপুর সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন যার নং ২০৭/২০২৩। মামলাটি খারিজ হলে পরবর্তীতে তিনি কুষ্টিয়া জজ আদালতে আপিল করেন যার নং ৯৯/২৩। কুষ্টিয়া জজ আদালত আপিল শুনানির জন্য আগামী ১৮ জুন দিন ধার্য করেন এবং ওইদিন সকলকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।


একই আদালত গত ৫ জুন নিয়োগে কেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেন। আদালতের কারণ দর্শানোর নোটিশ ও আপিল শুনানির দিন ধার্য হওয়ার পরও তড়িঘড়ি করে গত ৬ জুন বড়গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হকসহ নিয়োগ কমিটি তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। যা আদালত অবমাননার সামিল।


নিয়োগের বিষয়ে জানতে বড়গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।


স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্রদের নিয়োগের বিষয়ে বড়গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মামলার বাদী ফিরোজ আল মামুন বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও বড়গাংদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিএনপি ঘরনার প্রধান শিক্ষক তার পছন্দের ও মনোনিত লোকজনকে গত ৬ জুন নিয়োগ দিয়েছেন বলে শুনেছি। আবার আবেদন করার পরও অনেককে তিনি প্রবেশপত্র দেননি। কিভাবে এসব অনিয়ম দুর্নীতি করা হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।


নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও দৌলতপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহম্মদ আবু সালেক বলেন, বড়গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নিয়োগের বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কোন কাগজপত্র আমরা পাইনি। ৬ জুন ডিজির প্রতিনিধির উপস্থিতিতে আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরবর্তী
কার্যক্রমের জন্য কমিটির কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি।



বিবার্তা/শরীফুল/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com