দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিলি স্থলবন্দর। যেখান থেকে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় পেয়ে থাকে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরে সম্প্রতি দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের 'জিরো পয়েন্ট-পানামা পোর্ট গেট' পর্যন্ত ফোরলেনের কাজ শুরুর পর একমাস ধরে বন্ধ আছে। আর কয়েক দিন পরে বর্ষাকাল শুরু হবে।
বর্ষা মৌসুমের পূর্বে সড়কের কাজ শেষ না হলে বর্ষাকালে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না বলছেন এলাকাবাসী।পুরো সড়কের কার্পেটিং তুলে ফেলে একপাশে আংশিক ঢালাই করার পর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকসহ দূরপাল্লার যানবাহন, অটোবাইক, রিকশাচালকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে।
শনিবার ৪ মার্চ এলাকাবাসী, পরিবহন চালক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য জানা গেছে। বন্দরের ট্রাক চালক বাবুল হোসেন বলেন, পানামা পোর্টের গেট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত কার্পেটিং তুলে ফেলায় ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাকের স্টিয়ারিং ধরে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। এতে খুব ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক চালাতে হয়। ভারতীয় ট্রাক চালক সুনীল দাস বলেন, রাস্তায় কাপেটিং না থাকায় ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এই কারণে অনেক সময় ট্রাক একদিকে হেলে যায়। উল্টে যেতে পারে, এমন ভয় জাগে মনে। এরপরও ঝুঁকি নিয়েই বন্দরে প্রবেশ করতে হয়।
হিলি নাগরিক উন্নয়ন কমিটির প্রচার সম্পাদক এনামুল হক খান বলেন, হিলি জিরো পয়েন্ট থেকে পানামা বন্দরের গেট পর্যন্ত ৮০০ মিটার সড়কের ফোরলেন কাজ শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজও শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
হাকিমপুর হাসপাতাল, কলেজ, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, রোগীসহ বিভিন্ন কাজের জন্য এলাকাবাসীকে ওই সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের একপাশে কিছু কাজ করেছে। কিন্তু বেশিরভাগ কাজই বাকি আছে। তিনি আরও বলেন, পুরনো কার্পেটিংগুলো তুলে ফেলায় সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। বাইক, অটোবাইক, রিকশায় বসে থাকায় যায় না।
এতে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে খুব বেগ পেতে হয়। তার সঙ্গে আছে ধুলোবালিও। বর্ষাকালে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না বলছেন তিনি।সড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেপলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই)-এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টটর (এমডি) গোপাল চন্দ্র বলেন, আর্থিক সংকটের পাশাপাশি রয়েছে সড়কের দু’পাশের কিছু জমি অধিগ্রহণের সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধান হলেই সড়কের কাজ আবার শুরু করা হবে।
২ মার্চ বৃহস্পতিবার রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম হাকিমপুর উপজেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় স্থলবন্দরের সড়কের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, ফোরলেন সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণ সাত ধারার নোটিশ দেওয়া হয়েছে আর বাকি কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সড়কের নির্মাণ কাজ হঠাৎ বন্ধের বিষয় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত সম্পূর্ণ করার বিষয়ে আশ্বাস দেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাবিরুল ইসলাম।
দিনজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী অনফ সরকার বলেন, হিলি বন্দরের জিরো পয়েন্ট থেকে পানামা পোর্ট গেট পর্যন্ত ৮০০ মিটার সড়ক ফোরলেনে উন্নতিকরণের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই। এর প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ফোরলেন সড়কের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। অনফ সরকার আরও বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ করে রেখেছে। কবে নাগাদ আবার কাজ শুরু হবে, এ ব্যাপারে কোনো কিছুই বলতে পারেননি তিনি।
বিবার্তা/রব্বানী/জবা/এমএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]