প্রমোদতরীতে উঠুন, দেখুন সাগর নদী পাহাড় ও কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫২
প্রমোদতরীতে উঠুন, দেখুন সাগর নদী পাহাড় ও কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
তাফহীমুল আনাম, কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে ভিন্ন স্ট্যাইলে দেখতে বা অন্য ভাবে উপভোগ করতে যোগ হয়েছে প্রমোদতরী। এখন জাহাজে বসে গভীর সমুদ্র থেকে পাহাড়, দ্বীপ ও সৈকত দেখছেন পর্যটকেরা। হিম শীতল, শান্ত সাগরে জাহাজে বসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যটকেরা চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।


দিনব্যাপী ভ্রমণের দায়িত্ব নিয়েছেন ‘ফারহান এক্সপ্রেস ট্যুরিজম’ নামের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে তারা সাগরে নামিয়েছে ২০০ জন ধারণক্ষমতার জাহাজ ‘এসটি শহীদ সুকান্ত বাবু’।


আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত জাহাজটি সাগরে থাকবে। এই জাহাজে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা নেই। গত সাড়ে তিন সপ্তাহে অন্তত প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটক জাহাজে চড়ে সাগরযাত্রায় মনোরম পরিবেশে অন্য রকম আনন্দ উপভোগ করেন।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুপুরের খাবারসহ ভ্রমণ করতে মাথাপিছু ভাড়া গুনতে হয় ১ হাজার ২০০ টাকা করে।



এই প্যাকেজে কী কী থাকছে?


সকাল ১০টায় জাহাজটি বিমানবন্দর সড়কের নুনিয়াছড়া তিন রাস্তার মোড় বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে যাত্রীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে। শহরের বাঁকখালী নদী, নদীতীরের মিনি সুন্দরবনখ্যাত প্যারাবন, দেশের সর্ববৃহৎ নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লি ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জল ছুঁয়ে উড়োজাহাজ নামার জন্য নির্মিতব্য রানওয়ে প্রকল্প দেখানো হয়। এরপর জাহাজটি বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির জেটিতে।


জেটির দুই পাশে ঘন সবুজ ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট। দেখতে মনে হয় একটুকরো সুন্দরবনের কূলঘেষে দাড়িয়ে আছে ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীর মৈনাক পর্বতের চুড়া। সেখানে নেমে যাত্রীরা যান ২৮৮ ফুট উঁচু মৈনাক পর্বতের চূড়ায় স্থাপিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবাদিদেব মহাদেবের তীর্থস্থান আদিনাথ মন্দির। এই পাহাড়ের অন্য প্রান্তে রাখাইন প্যাগোড়া ও প্রচীন রাখাইন ক্যাং বা বৌদ্ধ মন্দির। পাশে আছে রাখাইনপল্লি। পশ্চিম পার্শ্বে আড়াআাড়ি ভাবে বাস করে হিন্দু মুসলিম। মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে মসজিদ, মন্দির, ক্যাং ও প্যাগোড়া এক অপূর্ব সম্প্রীতির মেল বন্ধন।


এ সব দৃশ্য দেখার পর পর্যটকদের নিয়ে জাহাজ আবার আদিনাথ জেটি থেকে বঙ্গোপসাগর দিয়ে যায় সোনাদিয়া দ্বীপে । মুক্তা ও শুঁটকি উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ সোনাদিয়ার সমুদ্র৷ সৈকতে লাল কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ পর্যটকদের বিমোহিত করে।সেখানে ও ম্যানগ্রোভ ফরেষ্টের সমারোহ দেখলে মন জুড়ে যায়। অতিথি পাখীদের চারণ ভূমি এই সোনাদিয়া।



এরপর কক্সবাজার সৈকতের শৈবাল, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্টের সামনে দিয়ে জাহাজটি বেলা দেড়টা নাগাদ পৌঁছে দক্ষিণ দিকের হিমছড়ি ঝরনা এলাকায়। সেখানে পর্যটকদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন থাকে। এরপর যাত্রা করে জাহাজটি বিকেল পাঁচটা নাগাদ পৌঁছে বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে।


প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার সৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটছে। সৈকতের পানিতে নেমে গোসল, বালুচরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসহ দর্শনীয় কিছু স্থান পরিদর্শন ছাড়া বিনোদনের তেমন কিছু নেই। পর্যটকের চাহিদা পূরণে সমুদ্রবিনোদনের এ উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।


সপরিবার জাহাজে চড়ে গভীর সমুদ্র ঘুরে আসতে পেরে খুশিতে আত্মহারা চট্টগ্রামের নুরুল কদির। তিনি বলেন, মাথাপিছু ১ হাজার ২০০ টাকায় তাঁরা ভালোভাবে ভ্রমণ করতে পেরে আনন্দিত।এক সাথে সাগর পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।


পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রমোদতরিতে বসে উপকূলের গাছপালা, পাহাড় আর সমুদ্রসৈকত অন্য রকম মনে হয়েছে। এমন ভ্রমণে পরিবেশ থাকে সুরক্ষিত। সাগরে ডলফিনের বিচরণ, হাঙরের লাফালাফি জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, শেষ সূর্যাস্ত দেখা ও হয়ে যায় জাহাজে চড়ে। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা খুবই ভালো।



ঢাকার মালিবাগের কলেজ শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, অনেক দিন পর স্ত্রীসহ ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন তিনি। প্রথমেই সিদ্ধান্ত ছিল মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরসহ রাখাইন পল্লীর হাতে বুনা কাপড় কিনবেন। আসার সময় হাতে করে মহেশখালীর বিশুদ্ধ শুটকী নিয়ে আসবেন।


যখনই শুনলো মহেশখালী আদিনাথ মন্দির , সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখা যাবে উল্টোদিকে। তখনই সিদ্ধান্ত পাল্টালেন তিনি।পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে ভ্রমণের জন্য জাহাজে চরে বসলেন। গভীর সমুদ্র থেকে চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে বিমোহিত হলেন তিনি।


এ ধরনের সমুদ্র ভ্রমণ একাধিক পর্যটন স্পট দেখার এবং গভীর সাগরের উত্তাল ঢেউ পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে নিসন্দেহে। তাও আবার মাত্র ৭ থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টায়।


বিবার্তা/তাফহীমুল/বিএম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com