ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা তার থেকেও বেশি অনিশ্চয়তা পাকিস্তানকে নিয়ে। এ জন্যই তাদেরকে বলা হয়ে থাকে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। তাদের দেয় নামটা যে কোন নিছক নয় তা আবারও প্রমাণ করলো তারা। হারতে হারতে প্রায় হারিয়েই দিচ্ছিল অস্ট্রেলিয়াকে আবার জিততে জিততে নিজেরাই গেল। এই বুঝি পাকিস্তান!
বুধবার টনটনের ছোট মাঠে টস জিতে অজিদের ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় ম্যান ইন গ্রীণরা।ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান দেখে শুনে খেলতে থাকে। ২২.১ ওভারে ১৪৬ রানের জুটি গড়ে ফিঞ্চ ও ওয়ার্নার। ১৯৭৫ সালের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার সেরা উদ্বোধনী জুটি এটি। হাফিজের বলে ক্যাচ দিয়ে ৮৪ বলে ৮২ রান করে বিদায় নেন অজি অধিনায়ক ফিঞ্চ।
এর আগে অবশ্য ক্যাচ মিসের মহড়া দেয় পাকিস্তান। কমপক্ষে তিনটি ক্যাচ ছাড়ে তারা। এ সুযোগে বল টেম্পারিংয়ের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দীর্ঘ এক বছর পর দলে ফেরা ওয়ার্নার দুই বছর পর শতরানের দেখা পান। ওয়ার্নার সবশেষ শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন ভারতের মাটিতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে।
১১১ বলে ১০৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে আউট হন তিনি। যেখানে ছিল ১১টি চার আর ১টি ছয়ের মার। ওয়ানডেতে এটি ওয়ার্নারের ১৫তম সেঞ্চুরি, বিশ্বকাপে দ্বিতীয় আর পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয়। এই শতরানের ইনিংসে তিনি উঠে এসেছেন এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দুই নম্বরে। এক নম্বরে আছে সাকিব আল হাসান।
ওয়ার্নারের বিদায়ের পর অজিদের বড় রানের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেন মোহাম্মদ আমির। একাই তুলে নেন পাঁচ উইকেট। এ নিয়ে বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী বনে গেছেন তিনি। ১০ উইকেট নিয়ে সবার ওপর এ গতিতারকা। ৮ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন নিউজিল্যান্ডের লোকি ফার্গুসন। শেষ পর্যন্ত অজিরা দুর্দান্ত শুরুর পরও পুরো ওভার খেলতে পারেনি। ৪৯ ওভারে অল-আউট হওয়ার আগে স্কোরবোর্ডে ৩০৭ রান জমা করতে সক্ষম হয়।
পাকিস্তানের হয়ে মোহাম্মদ আমির ৫টি, শাহিন শাহ আফ্রিদি ২টি ও হাসান আলী, ওহাব রিয়াজ ও মোহাম্মদ হাফিজ প্রত্যেকেই একটি করে উইকে তুলে নেন।
লক্ষ্য তাড়ায় পাকিস্তানের শুরুটা ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারেই কামিন্সের বলে থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে ফেরেন ফখর জামান। দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধের চেষ্টা চালান ইমাম-উল-হক ও বাবর আজম। উভয়ে মিলে করেন ৫৪ রান। ১০.৫ ওভারের সময় বাবরকে ৩০ রানে ফেরান কার্টার নেইল। এরপর তৃতীয় উইকেট জুটিতে মোহাম্মদ হাফিজ আর ইমামের জুটিতে ৮০ রান যোগ হলে ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান।
২৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১৩৬। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে বাকি ২৫ ওভারে দরকার ছিল ১৭২ রান। কিন্তু এরপর ছোটখাটো একটা ধসই নামে পাকিস্তানের ইনিংসে। ১৫ বলের মধ্যে তারা হারায় ৩ উইকেট!
৮০ রানের জুটি ভেঙে কামিন্স নিজের পরপর দুই ওভারে ফেরান ইমাম (৫৩) ও শোয়েব মালিককে। মাঝের ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে হাফিজকে (৪৬) ফেরান ফিঞ্চ। এই ফেরাটা বেশিক্ষণ টিকতে দেয়নি সরফরাজ আর ওহাব রিয়াজ। এই দুইয়ের জুটি থেকে আসে ৬৪ রান। পাকিস্তান জিতেই যাচ্ছিল ওহাবের ব্যাটে ভর করে।
কিন্তু পারলো না। আনপ্রেডিক্টেবল বলেই হয়তো! ওহাবকে ৪৫ রানে ফেরান মিচেল স্ট্রাক আর সরফরাজকে রান আউট করে সাজঘরে ফেরান ম্যাক্সওয়েল। এখানেই শেষ পাকিস্তানের জয়ের স্বপ্ন। ৪৫ ওভার ৪ বলে অল-আউট হয়ে যায় ২৬৬ রানে। ৪১ রানের জয়ে পয়েন্ট তালিকায় দুই নম্বরে উঠে এলো পাঁচবারের বিশ্বকাপ জয়ীরা।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্যাট কামিন্স ৩টি, মিচেল স্টার্ক ও রিচার্ডসন ২টি এবং কার্টার নেইল ও অ্যারন ফিঞ্চ একটি করে উইকেট নেন। অজিদের হয়ে দুর্দান্ত শতরান করা ডেভিড ওয়ার্নার প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ৪৯ ওভারে ৩০৭ (ফিঞ্চ ৮২, ওয়ার্নার ১০৭, স্মিথ ১০, ম্যাক্সওয়েল ২০, মার্শ ২৩, খাওয়াজা ১৮, কেয়ারি ২০, কোল্টার-নাইল ২, কামিন্স ২, স্টার্ক ৩, রিচার্ডসন ১*; আমির ১০-২-৩০-৫, আফ্রিদি ১০-০-৭০-২, হাসান ১০-০-৬৭-১, ওয়াহাব ৮-০-৪৪-১, হাফিজ ৭-০-৬০-১, মালিক ৪-০-২৬-০)
পাকিস্তান: ৪৫.৪ ওভারে ২৬৬ (ইমাম ৫৩, ফখর ০, বাবর ৩০, হাফিজ ৪৬, সরফরাজ ৪০, মালিক ০, আসিফ ৫, হাসান ৩২, ওয়াহাব ৪৫, আমির ০, আফ্রিদি ১*; কামিন্স ১০-০-৩৩-৩, স্টার্ক ৯-১-৪৩-২, রিচার্ডসন ৮.৪-০-৬২-২, কোল্টার-নাইল ৯-০-৫৩-১, ম্যাক্সওয়েল ৭-০-৫৮-০, ফিঞ্চ ২-০-১৩-১)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৪১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভিড ওয়ার্নার
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]