আগের ছয়টি ফাইনাল কান্না ছাড়া কিছুই দেয়নি বাংলাদেশকে। তাই সবার প্রত্যাশা ছিল সপ্তম ফাইনালকে ঘিরে। অবশেষে সেভেন বাংলাদেশের জন্য লাক হিসেবেই ধরা দিল। বাংলাদেশ আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্য দেশ তথা টেস্ট খেলিয়ে দলের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা ঘরে তুললো। তাও আবার বৃষ্টি আইনের গ্যাড়াকলে পড়ার পরও।
অবিশ্বাস্য, দুর্দান্ত কিংবা অনবদ্য কোনো শিরোনামেই আসলে বাঁধা যায় না এই রাতকে। সৌম্য-মোসাদ্দেকের সাহসী উইলোতে ভর করে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। অসাধারণ এই বিজয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
শুক্রবার ডাবলিনের মালাহাইডে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে পারেননি।
উদ্বোধনী জুটিতে শাই হোপ ও সুনীল অ্যামব্রিস ২০ ওভারেই স্কোরবোর্ডে তোলেন ১৩১ রান। এরপরই বৃষ্টির আঘাত। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ম্যাচ শুরু হলে উইন্ডিজ ২৪ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায়।
২২.৪ ওভারে দলীয় ১৪৪ রানের সময় ব্যক্তিগত ৭৪ রানে মোসাদ্দেকের ক্যাচ বানিয়ে ফেরত পাঠান মেহেদি হাসান মিরাজ। ৭৪ রান সংগ্রহ করতে হোপ ৬৪ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছয়ের মার মারেন।
এরপর অ্যামব্রিস ও ব্রাভো অবিচ্ছিন্ন থেকে নির্ধারিত ওভারে সংগ্রহ করেন ১৫২ রান। অ্যামব্রিস ৭৮ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৬৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন।
বৃষ্টির কারণে ২৪ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ উইকেটে করেছে ১৫২ রান। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ২০ ওভার ১ বলে তারা করেছিল বিনা উইকেটে ১৩১ রান। বৃষ্টির পর ৩ ওভার ৫ বলে ১ উইকেট হারিয়ে করেছে ২১ রান।২৪ ওভারে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ২১০ রান।
জয়ের জন্য ২১০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনাই করেছিল বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকারের উড়ন্ত সূচনার পর ৫.৩ ওভারেই তারা গড়ে ফেলে ৫৯ রানের জুটি। ১৩ বলে ১৮ রান করে আউট হয়ে যান তামিম ইকবাল।
তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন সাব্বির রহমান। কিন্তু যে কারণে তাকে আগে নামানো হলো, সেটা মোটেও কাজে লাগলো না। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে কোনো রান না করেই ফিরে গেলেন সাব্বির রহমান। সাকিব আল হাসান না থাকার অভাবটা ভালোই টের পাওয়া গেলো। চার নম্বরে ব্যাট করতে নামেন মুশফিকুর রহিম।
২২ বলে দুটি করে চার ও ছক্কায় মুশফিক করেন ৩৬ রান। পেসার রেমন্ড রাইফারের মিডল স্টাম্পের বল লেগ সাইডে ব্যাটে খেলতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। বল আঘাত হানে তার প্যাডে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের আবেদনে এলবিডব্লিউয়ের আউট দেন আম্পায়ার।
এরপর মিথুন মাঠে নেমে ১৪ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় মিথুন করেন ১৭ রান। দলীয় ১৪৩ রানে বাঁহাতি স্পিনার অ্যালেনের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন মিথুন।
এরপর শুধুই মোসাদ্দেক নামা। মিথুনের বিদায়ের পর ৪৮ বলে দরকার ৬৫ রান। জয়ের স্বপ্ন যখন ধূসর হওয়ার সংশয়, তখনই আবির্ভাব মোসাদ্দেকের। বৃষ্টির পর ঝড় উঠালেন মোসাদ্দেক। ১৮ বলে যখন দরকার ২৭ রান ম্যাচটা নিজেদের হাতের মুঠোয় আনলেন মোসাদ্দেক। অ্যালেনের করা ২২তম ওভারে ৬, ৬, ৪, ৬, ২, ১—২৫ রান তুলে এক ঝটকায় সমীকরণ করে ফেললেন একেবারে সহজ। এরই ফাঁকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডও গড়লেন মোসাদ্দেক।
বাকিটা সারেন দায়িত্বশীল ব্যাটিং করা সাইলেন্ট কিলার মাহমুদুল্লাহ। বাউন্ডারিতে শেষ করে আসেন ম্যাচ।
ক্যারিবীয়দের পক্ষে গ্যাব্রিয়েল ও রেইফার দুটি এবং অ্যালেন একটি উইকেট লাভ করেন।
২০ বলে ফিফটি করে ম্যাচ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় মোসাদ্দেক হোসেন হন প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ। আর সিরিজে দুর্দান্ত ব্যাট করা শাই হোপের হাতে উঠে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৪ ওভারে ১৫২/১ (হোপ ৭৪, আমব্রিস ৬৯*, ব্রাভো ৩*; মাশরাফি ৬-০-২৮-০, সাইফ ৫-০-২৯-০, মুস্তাফিজ ৫-০-৫০-০, মোসাদ্দেক ২-০-৯-০, মিরাজ ৪-০-২২-১, সাব্বির ২-০-১২-০)।
বাংলাদেশ: ২২.৫ ওভারে ২১৩/৪ (তামিম ১৮, সৌম্য ৬৬, সাব্বির ০, মুশফিকুর ৩৬, মিঠুন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৯*, মোসাদ্দেক ৫২*; নার্স ৩-০-৩৫-০, হোল্ডার ৪-০-৩১-০, রোচ ৫-০-৫৭-০, গ্যাব্রিয়েল ৩-০-৩০-২, রিফার ৩.৫-০-২৩-২, অ্যালেন ৪-০-৩৭-১)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: শেই হোপ
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]