এক দশক পর সৌরজগতে নতুন প্রজাতির নক্ষত্রের সন্ধান
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩৮
এক দশক পর সৌরজগতে নতুন প্রজাতির নক্ষত্রের সন্ধান
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রায় এক দশক পর রাতের আকাশে পৃথিবীর আশ্রয়স্থল অর্থাৎ মিল্কি ওয়ে’র কেন্দ্রে নতুন এক ধরনের নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। রাতের আকাশের এই নক্ষত্র দেখতে অনেকটা ধোঁয়াসদৃশ বলে জানিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা এ নক্ষত্রগুলোর ডাকনাম দিয়েছেন ‘ওল্ড স্মোকার্স’। এর কারণ হল, নক্ষত্রগুলো থেকে ‘গ্যাসের মেঘ’ বেরোতে দেখা গেছে।


চলতি মাসের ২৫ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের সৌর-গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি (আরএএস)।


নতুন সন্ধান পাওয়া বিশালাকার এ নক্ষত্রের অবস্থান মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কাছাকাছি। নক্ষত্রগুলো দশকের পর দশক ধরে অনাবিষ্কৃত ছিল। সৌরজগতে যুগ যুগ ধরে এদের অবস্থান রয়েছে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।


জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে এবারই প্রথম সৌরজগতে এমন নক্ষত্রের খোঁজ পাওয়া গেছে। সৌরজগতে এমন প্রায় ১০০ কোটি নক্ষত্র রয়েছে, যা খালি চোখে দেখা যায় না। চিলির আন্দিজের এক এলাকা থেকে টেলিস্কোপের সাহায্যে এ পর্যবেক্ষণ চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।


মহাবিশ্বে বিভিন্ন এমন লাল রঙের বিশাল নক্ষত্র রয়েছে, যেগুলো আকারে মাঝারি কোনো নক্ষত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মূহুর্তে এমন চেহারা পায়। তবে, এর আগে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ার কারণে সেইসব মৃত নক্ষত্রয় হাইড্রোজন ফুরিয়ে যায়।


‘ওল্ড স্মোকার্স’ নক্ষত্রগুলো খুঁজে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ হার্টফোর্ডশায়ার’-এর অধ্যাপক ফিলিপ লুকাস।


যুগান্তকারী এ অনুসন্ধানের আগে ১০ বছর রাতের আকাশে জরিপ চালিয়ে প্রায় একশ কোটি নক্ষত্রের ইনফ্রারেড আলো পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকরা।


‘ভিস্তা ভ্যারিয়েবলস ইন দ্য ভায়া ল্যাকটি’ বা ‘ট্রিপল ভি’ নামে পরিচিত এক দীর্ঘ মেয়াদী জরিপের অংশ ছিল এ প্রকল্প।


এ গবেষণার অংশ হিসেবে গবেষকরা মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের কাছাকাছি এমন ২১টি লাল রঙের নক্ষত্র খুঁজে পেয়েছেন, যাদের উজ্জ্বলতায় রহস্যময় তফাৎ দেখা গেছে।


অধ্যাপল লুকাস ব্যাখ্যা করেছেন, এই ২১টি নক্ষত্র অগ্ন্যুৎপাত সৃষ্টিকারী কোনো ‘প্রোটোস্টার’ অথবা নবজাতক নক্ষত্রের ঝাঁকুনিতে গঠিত হয়েছে কি না বা নক্ষত্রের সামনে কোনো ডিস্ক বা ধুলোর খোসার আবরণ তৈরি হয়েছে কি না, সে বিষয়গুলো আমরা নিশ্চিত ছিলাম না। আর তৃতীয় ধারণা হল, এগুলো এমন পুরোনো বিশাল নক্ষত্র ছিল, যেগুলো নিজের জীবনকালের শেষ দিকে তামাকখোর বুড়োদের মতো গ্যাস ছাড়ছে। তবে, নক্ষত্রগুলোর ওপর বিশ্লেষণ চালিয়ে গবেষকরা বলছেন, এগুলো নতুন এক ধরনের ‘রেড জায়ান্ট’।


ট্রিপল ভি জরিপের প্রতিষ্ঠাতা ও চিলির আন্দ্রেস বেলো ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক দান্তে মিনিটি বলেন, বেশ কয়েক বছর বা দশক ধরে এইসব পুরোনো নক্ষত্র নিরবে অবস্থান করে পরবর্তীতে একেবারে নতুন উপায়ে ধোয়ার মেঘ ‘ফুঁকে থাকে’। অনেক বছর ধরেই এরা দেখতে খুবই অনুজ্জ্বল ও লালচে হওয়ায় আমরা অনেক সময় এদের একেবারেই দেখতে পাই না। নক্ষত্রগুলো মিল্কিওয়ে’র সবচেয়ে গভীর এলাকায় ঘনীভূত অবস্থায় ছিল, যেটি ‘নিউক্লিয়ার ডিস্ক’ নামেও পরিচিত। এটি এমন এক এলাকা, যেগুলোর নক্ষত্রয় অন্যান্য জায়গার তুলনায় ভারী উপাদানে সমৃদ্ধ হতে থাকে।


বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলে বিভিন্ন লাল দৈত্যাকার নক্ষত্রের অপেক্ষাকৃত শীতল বাইরের স্তরগুলোতে গ্যাস থেকে ধূলিকণা ঘনীভূত করার প্রক্রিয়া সহজ হয়ে ওঠে। নক্ষত্রগুলো কীভাবে ঘন ধোয়া ছাড়ার অবস্থায় যায়, তা এখনও গবেষণা দলটির কাছে রহস্য।


গবেষকদের বিশ্বাস, নিউক্লিয়ার ডিস্ক ও অন্যান্য ছায়াপথের ধাতু-সমৃদ্ধ এলাকাগুলোয় বিভিন্ন উপাদান ঠিক কী উপায়ে ছড়িয়ে পড়ে, সে বিষয়ে প্রচলিত ধারণায় পরিবর্তন আনতে পারে নতুন এ অনুসন্ধান।


এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যুক্তরাজ্য, চিলি, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, জার্মানি ও ইতালির জোতির্বিদরা, যেখানে নক্ষত্র গবেষণা চালাতে ব্যবহার করেছেন যুক্তরাজ্যে তৈরি ‘ভিজিবল অ্যান্ড ইনফ্রারেড সার্ভে টেলিস্কোপ (ভিসতা)’ নামের টেলিস্কোপ। আর এর অবস্থান চিলির আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত ‘সেরো প্যারানাল অবজার্ভেটরি’তে।


ওল্ড স্মোকার্সের পাশাপাশি ‘প্রোটোস্টার’ নামে পরিচিত ডজনখানেক বিরল নতুন নক্ষত্র খুঁজে পেয়েছে গবেষণা দলটি, যেগুলো নতুন কোনো সৌরজগৎ গঠনের অংশ হিসেবে কয়েক মাস, বছর এমনকি দশক ধরে ভারী বিস্ফোরণ সহ্য করে থাকে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com