শুক্রাণু-ডিম্বাণু-গর্ভ ছাড়াই মানব ‘ভ্রূণ মডেল’ গঠন বিজ্ঞানীদের
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:২২
শুক্রাণু-ডিম্বাণু-গর্ভ ছাড়াই মানব ‘ভ্রূণ মডেল’ গঠন বিজ্ঞানীদের
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শুক্রাণু, ডিম্বাণু বা মায়ের গর্ভ ছাড়াই মানুষের ভ্রূণের মতো দেখতে শারীরিক সত্তা গঠন করেছেন ইসরায়েলের বিজ্ঞানীরা।


ইসরায়েলি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের বিজ্ঞানীদের দল বলেছে, স্টেম সেল ব্যবহার করে ‘ভ্রূণের মডেল’ গঠন করা হয়েছে।


ইসরায়েলের বিজ্ঞানীরা বলছেন, পাঠ্যবইয়ে ১৪ দিন বয়সী সত্যিকারের ভ্রূণ যে রকম থাকে, এই ভ্রূণ মডেল দেখতে অনেকটা তারই মতো। এমনকি এ ভ্রূণ মডেল হরমোন নিঃসরণ করেছে। এ হরমোনের কারণে গর্ভধারণ পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে।


সাধারণত শুক্রাণুর সংস্পর্শে আসা ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা যায়। গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ের মধ্যেই গর্ভপাত ও জন্মগত ত্রুটির মতো ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। তবে এ সময়ে এসব বিষয় সম্পর্কে খুব কমই ধারণা পাওয়া যায়। তবে ভ্রূণ মডেলের মধ্য দিয়ে ভ্রূণসংক্রান্ত নানা অজানা তথ্য জানা যাবে এবং জন্মগত ত্রুটিসহ বিভিন্ন সমস্যা শনাক্ত করা যাবে বলে আশা করছেন ইসরায়েলি বিজ্ঞানীরা।


বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভ্রূণের প্রথম দিকের অবস্থা বোঝার জন্য নৈতিকভাবেই এ মডেল গঠন করা হয়েছে।


সম্প্রতি ‘নেচার’ সাময়িকীতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের গবেষক জ্যাকব হান্না বিবিসিকে বলেন, ‘এটি ব্ল্যাক বক্সের মতো। এটি প্রচলিত কোনো বিষয় নয়। এ নিয়ে আমাদের জ্ঞান খুব সীমিত।’


যেভাবে ভ্রূণ গঠন করা হয়েছে
শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ব্যবহার না করে এই ভ্রূণ তৈরিতে সাধারণ স্টেম সেল ব্যবহার করা হয়েছে। স্টেম সেল হলো শরীরের একটি আদি কোষ। এ কোষ থেকে সব ধরনের কোষ তৈরি হয়। ভ্রূণ মডেল তৈরির জন্য স্টেম সেলের নমুনাকে চার ধরনের কোষে রূপান্তর করতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। ওই চার ধরনের কোষ মানুষের ভ্রূণের শুরুর দিকে দেখা যায়।


এ ধরনের মোট ১২০টি কোষের মিশ্রণ ঘটানো হয়। এরপর বিজ্ঞানীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।


দেখা যায়, পুরো মিশ্রণের প্রায় ১ শতাংশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়ো হয়ে একটি আকৃতি তৈরি করেছে। তবে এটি পুরোপুরি মানুষের ভ্রূণের মতো নয়।


ইসরায়েলি বিজ্ঞানী দলের দাবি, এটি প্রথম কোনো পূর্ণাঙ্গ ভ্রূণ মডেল। প্রাথমিক ভ্রূণের মধ্যে যতগুলো বৈশিষ্ট্য থাকে, তার সবই এর মধ্যে আছে।


অধ্যাপক হান্না বলেন, এটি সত্যিকারে পাঠ্যবইয়ে প্রকাশিত ১৪ দিনের ভ্রূণের ছবির মতো। এর আগে এ ধরনের কাজ হয়নি।


অধ্যাপক হান্না বলেন, ‘আমি এই কোষগুলোকেই বড় কৃতিত্ব দিতে চাই। আপনাকে কোষগুলোর মিশ্রণ সঠিকভাবে করতে হবে এবং সঠিক পরিবেশে কাজটি করতে হবে। তাহলেই সাফল্য পাওয়া যাবে।’


ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার ১৫ দিন পর সত্যিকারের ভ্রূণ যে অবস্থায় থাকে, সে রকম অবস্থায় না পৌঁছানো পর্যন্ত ভ্রূণ মডেলকে বাড়তে দেওয়া হয়। অনেক দেশেই স্বাভাবিক ভ্রূণসংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে এটি বৈধ।


কী কাজে লাগবে
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভ্রূণ মডেলের মাধ্যমে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের কোষের আচরণ সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। মানবদেহের অঙ্গগুলো গঠনের প্রাথমিক ধাপগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন তাঁরা। এ ছাড়া বংশগত রোগগুলো সম্পর্কেও জানা যাবে।


ইতিমধ্যে ইসরায়েলি বিজ্ঞানীদের করা গবেষণাটিতে দেখা গেছে, প্রাথমিক গর্ভফুলের কোষগুলো ভ্রূণকে না ঘিরে ফেলা পর্যন্ত ভ্রূণের অন্য অংশগুলো গড়ে উঠবে না।


অনেকে বলছেন, এর বদৌলতে আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে সাফল্যের হার বাড়বে। কারণ, ভ্রূণ মডেলের মধ্য দিয়ে বোঝা যাবে, কেন কিছু ভ্রূণ অকার্যকর হয়। গর্ভকালীন ওষুধ সেবন নিরাপদ কি না, তা–ও পরীক্ষা করা যাবে।


ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটে ভ্রূণ তৈরি নিয়ে গবেষণা করেন অধ্যাপক রবিন লোভেল ব্যাজ। বিবিসির প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এ ভ্রূণ মডেল দেখতে বেশ ভালো মনে হচ্ছে এবং এটিকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা ভালো। এটি বেশ ভালোভাবে তৈরি করা হয়েছে। এটি খুব কার্যকর হবে। আমি এ নিয়ে খুব মুগ্ধ।’


তবে বর্তমানে ৯৯ শতাংশ যে অকার্যকারিতার হার, তার উন্নয়ন ঘটানো প্রয়োজন বলে মনে করেন লোভেল ব্যাজ। তাঁর মতে, বেশির ভাগ সময়ে ভ্রূণ মডেলটি যদি নিজের কোষগুলোকে জড়ো করে রাখতে না পারে, তাহলে গর্ভপাত কিংবা সন্তান জন্মদানে অক্ষমতাসংক্রান্ত গবেষণা কাজ কঠিন হয়ে পড়বে।


বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন
ভ্রূণ মডেল সত্যিকারের ভ্রূণের চেয়ে আলাদা। এটি অবৈধ নয়। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক লোভেল ব্যাজ বলেন, কেউ কেউ এ কাজকে স্বাগত জানাবেন। আবার কেউ কেউ এটা না–ও পছন্দ করতে পারেন। এসব মডেল যত বেশি সত্যিকারের ভ্রূণের মতো হবে, ততই নৈতিকতা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলবে।


এগুলো স্বাভাবিক মানুষের ভ্রূণ নয়, কেবলই ভ্রূণের মডেল। তবে এ মডেল অনেকটাই সত্যিকারের মডেলের কাছাকাছি।


বার্সেলোনাভিত্তিক পম্পেও ফাব্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলফোনসো মার্তিনেজ আরিয়াস মনে করেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণা। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এ কাজের মধ্য দিয়ে পরীক্ষাগারে স্টেম সেল থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো (মানব ভ্রূণ) তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মানব দেহের গঠনসংক্রান্ত গবেষণাগুলোর দুয়ার খুলেছে।’


গবেষকেরা বলছেন, এ ভ্রূণ মডেল ব্যবহার করে গর্ভধারণ অসম্ভব। ভ্রূণকে সফলভাবে গর্ভে স্থাপনের চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের কাজ ১২০টি কোষকে একসঙ্গে জড়িয়ে রাখা।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com