শিরোনাম
জিলহজ্ব মাসের আমল
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০১৯, ২১:২৪
জিলহজ্ব মাসের আমল
মাহাবুব আলম
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ২৮ জিলকদ। আর এক-দুইদিন পরেই জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উঠবে।আরবি এই মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ।এটা হলো মুসলিমদের সবচেয়ে বড় মিলন হজ এবং কোরবানির মাস।এ মাসে বেশ কিছু ইবাদত রয়েছে।যে সব ইবাদত আমরা খুব সহজেই করে অনেক সওয়াব অর্জন করতে পারি।


বিশেষ করে, এ মাসের প্রথম দশ দিন মুমিনের জন্য অত্যন্ত ফযিলতের।সহীহ বুখারীতে এসেছে রাসূল (স.) বলেন, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট যত প্রিয় আর কোনো দিনের আমল তার নিকট তত প্রিয় নয়।সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (স.) আল্লাহর পথে জিহাদও কি এ দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে প্রিয় নয়?


তিনি বললেন, না, আল্লাহর পথে জিহাদও প্রিয় নয়। তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে ব্যক্তি নিজের প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে জিহাদে গেল এবং কোনো কিছুতেই আর ফিরে এলো না।(বুখারী)


অন্য হাদিসে তিনি বলেন, দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ফযিলতের দিন হল জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিন।(হাদিসটি সহীহ, হায়সামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)


তাই আল্লাহ তা‘আলার নিয়ামত ও বিশেষ অনুগ্রহ মনে করে এই দশকে সাধ্যমতো নেক আমলের চেষ্টা করা একান্ত প্রয়োজন।সকল প্রকার ইবাদতই নেক আমল।ফরজ ইবাদত তো সঠিক সময়ে সঠিকভাবে করতেই হবে।পাশাপাশি অন্যান্য নফল ইবাদতের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে।যেমন, যিকির দু’আ, ইসতিগফার, নফল নামায, নফল রোযা, কুরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা ইত্যাদি।


হাদিস শরীফে বিশেষ করে তিন প্রকার ইবাদত এ দিনগুলিতে পালনের জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে।যথা- কিয়ামুল্লাইল বা রাতের নামায, সিয়াম বা রোযা, বেশি বেশি যিকির করা।


জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত যত দিন সম্ভব নফল রোযা রাখা আর রাতের বেলা বেশি বেশি ইবাদত করা।


এ সম্পর্কে মহানবী (স.) বলেন, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদত তুলনায় বেশি প্রিয়, প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায়।(তিরমিজী)


অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-এই দশ দিনের আমল অপেক্ষা অন্য দিনের আমল প্রিয় নয়।(বুখারী)


দেখুন, মাত্র একদিনের রোযা এক বছরের রোযার সমান, আবার এক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের সমান সওয়াব।তাই এই দশদিন আমরা বেশি বেশি ইবাদত আর রোযার মাধ্যমে কাটানোর চেষ্টা করব।


দ্বিতীয়ত, যারা কোরবানী করার ইচ্ছে পোষণ করছেন, তারা জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে হাত পায়ের নখ, মাথার চুল ও অবাঞ্ছিত চুল ইত্যাদি কাটবেন না, অর্থাৎ জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানি করার আগ পর্যন্ত কোনো ধরনের পশম, নখ ইত্যাদি না কাটা, বরং কোরবানি করার পর কাটা।


হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স.) ইরশাদ করেছেন যে, যখন জিলহজ্বের প্রথম ১০ দিনের সূচনা হয়, আর তোমাদের কেউ কোরবানির ইচ্ছে কর সে যেন, তার নখ বা পশম না কাটে। অন্য হাদিস দ্বারা জানা যায় এরুপ আমল যারা করবে তাদের কোরবানি করার সওয়াব অর্জন হবে।তাই আমাদের যার যা কাটা প্রয়োজন তা চাঁদ উঠার আগেই কেটে নিব।


তৃতীয়ত, যারা হজে যায়নি, তাদের জন্য জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখ রোযা রাখা।এটি নফল রোযা।তবে ফজিলত অনেক। এ সম্পর্কে মহানবী (স.) বলেছেন, হযরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স.) ইরশাদ করেছেন, আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোযা তার পূর্বের ও পরের এক বৎসরের গোনাহ মুছে ফেলবে।অর্থাৎ ইদের আগের দিন রোযা রাখার কারণে আগের এবং পরের এক বছরের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। তাই অবশ্যই আমরা সেই দিন রোযা রাখার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।


আর একটি আমল হল, তাকবীরে তাশরীক বলা। যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে।


তাকবীর হল-আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।এই তাকবীর ইদের আগের দিন ফজর নামায থেকে ইদের তৃতীয় দিন আসর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাযে আমরা অবশ্যই পড়ব।


হাদিসে আছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) আরাফার দিন তথা ৯ জিলহজ্বের ফজর থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন পর্যন্ত তথা ১৩ জিলহজ্ব আসর নামায পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পড়তেন। (সুনানে বায়হাকী কুবরা)


আরেকটি বিশেষ আমল হল, ঈদুল আজহার রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা।এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিস যদিও একটু দুর্বল, তবে জরুরি মনে না করে নফল ইবাদত করা যায়।হাদিসটি হলো- যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাতে সওয়াবের নিয়তে রাত জেগে থেকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবে, তাহলে যে দিন অন্যান্য দিল মরে যাবে সেদিন তার দিল মরবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ)


তাই আমরা দৃঢ় সংকল্প করি যেন এ সমস্ত ইবাদত সুন্দর ভাবে করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আল্লাহ তা'আলা সেই তাওফিক আমাদের দান করুন। (আমিন)


বিবার্তা/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com