রাতে ঘুমানোর আগে প্রিয় নবী (সা.)-এর বিশেষ কিছু সুন্নত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম অজু করে ঘুমানো। ঘুমানোর আগে অজু করা সুন্নাত।
তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। রাত্রিকে করেছি আবরণ। দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়।’ (সুরা নাবা : আয়াত ৯-১১) মানুষ দিনের বেলায় দুনিয়ার যাবতীয় কাজ-কর্মে ব্যস্ত সময় পার করে। রাতে ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে বাসায় ফিরে। বিশ্রামের জন্য শয্যাগ্রহণের সুফল ও ফজিলতে রয়েছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ হাদিস।
যা তুলে ধরা হলো-
عَنْ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ .
হজরত বারাআ ইবনু আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন নামাজের অজুর মতো অজু করে নেবে। তারপর ডান পাশে শুয়ে বলবে (সঠিক আরবি উচ্চারণ কোনো আলেম থেকে অবশ্যই শিখে নিতে হবে) : ‘আল্লাহুম্মা আসলামতু ওয়াজহিয়া ইলাইকা, ওয়া ফাউওয়াদতু আমরি ইলাইকা, ওয়া আলজা’তু জহরি ইলাইকা, রুগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইকা, লা মালজাআ ওয়া লা মানজা মিংকা ইল্লা ইলাইকা। আল্লাহুম্মা আমাংতু বিকিতাবিকাল্লাজি আংজালতা, ওয়া বিনাবিয়্যিকাল্লাজি আরসালতা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমার জীবন তোমার কাছে সমর্পণ করলাম। আমার সব কাজ তোমার কাছে অর্পণ করলাম এবং আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করলাম তোমার প্রতি আগ্রহ ও ভয় নিয়ে। তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোনো আশ্রয়স্থল ও পরিত্রাণের স্থান নেই। হে আল্লাহ, আমি ঈমান আনলাম তোমার অবতীর্ণ কিতাবের ওপর এবং তোমার প্রেরিত নবীর প্রতি।’
হজরত বারা ইবনে আযিব হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি শয্যা গ্রহণ করবে, তখন নামাযের অজুর ন্যায় ওযু করবে। (বুখারি ও মুসলিম)
অতঃপর যদি সে রাতেই তোমার মৃত্যু হয় তবে ইসলামের ওপর তোমার মৃত্যু হবে। এ কথাগুলো তোমার সর্বশেষ কথায় পরিণত করো। (বুখারি, হাদিস : ২৪৭) প্রিয় নবী (সা.) আমাদের ঘুমানোর আগে অজু করার নির্দেশ দেয়ার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে।
১. ঘুম অনেকটা মৃত্যুর মতোই। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু দেন এবং দিনে তোমরা যা কামাই করো তিনি তা জানেন। তারপর তিনি তোমাদের দিনে পুনরায় জাগিয়ে তোলেন, যাতে নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করা হয়। তারপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর তোমরা যা করতে তিনি তোমাদের সে বিষয়ে অবহিত করবেন। (সুরা : আনআম, আয়াত : ৬০) তাই ঘুমানোর আগে পবিত্রতা অর্জন করে নেওয়া জরুরি। কেননা কোনো কোনো হাদিসে এমনও এসেছে যে অজু অবস্থায় ইন্তেকাল করলে তাকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হবে।
২. যদিও ঘুমানোর আগে মুমিনের নিয়ত থাকে শুধু রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ, তবে এর কিছু পার্থিব উপকারিতাও রয়েছে; যেমন—অজুর মাধ্যমে প্রশান্তি অনুভূত হয়, ফলে হতাশা দূর হয়ে যায়, যা সাধারণত ঘুমাতে গেলেই মানুষকে চেপে ধরার চেষ্টা করে।
অজু করার আরো উপকার
অজু আমাদের মুখের তৈলাক্ততা দূর করে। অজুর মাধ্যমে মুখে জমে থাকা ছত্রাকগুলো দূর হয়ে যায়। ফলে ঘুমানোর আগে অজু আমাদের ত্বকের জন্যও ভালো। বিউটি এক্সপার্টরা ঘুমানোর আগে ভালোভাবে মুখ ধোয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
অজুর মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সালামত আজিজ বলেন, অজু হৃদরোগ আরোগ্য হওয়ার একটি উত্তম উপায়। পাশ্চাত্যের মনস্তত্ত্ববিদরা প্রতিদিন অজুর মতো করে কয়েকবার দেহে পানি লাগানোর পরামর্শ দেন। (পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানে মুহাম্মদ (সা.), পৃ. ১১২)
সুতরাং মানুষের যখনই শয্যা গ্রহণের প্রয়োজন হবে বা ইচ্ছা পোষণ করবে তখন অজুর সহিত ঘুমালে আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত লাভ হবে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে ক্ষমা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]