শিরোনাম
দেশে দেশে রমজান পালনের বিচিত্র রীতি
প্রকাশ : ০৯ মে ২০১৯, ১৫:১৫
দেশে দেশে রমজান পালনের বিচিত্র রীতি
আদনান হোসাইন সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

বছর ঘুরে ফিরে আসে পবিত্র রমজান মাস। শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সব বয়সী মুসলিমের অন্তরে এক অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসে রমজান। ইবাদতে ফিরে আসে অপার্থিব স্বাদ। পবিত্র রমজানের আগমনের অপেক্ষায় থাকে পৃথিবীর সব মুসলিমরা। তাই রমজান আসার আগমুহূর্ত পর্যন্ত চলতে থাকে রমজানপূর্ব প্রস্তুতি। সবার হৃদয়ে বিরাজ করে রমজান বরণের আবেগ-ভালোবাসা। ভাষা, সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহারের ভিন্নতা থাকলেও পৃথিবীর সব মুসলিমের মনেই এ সময়ে আনন্দ-মুগ্ধতা থাকে পূর্ণ মাত্রায়। তবে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশে থাকে বৈচিত্র্যময়তা।


মধ্যপ্রাচ্যে রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয় শাবান থেকে:
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় উপসাগরীয় দেশগুলো থাকে আনাবিলের আনন্দে ভরপুর। পরিবারের ছোট-বড় সবার মুখে থাকে দ্বীপ্তিমান হাসি। আনন্দে ভরে ওঠে প্রতিটি ঘর। বিশেষত, সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনার দুই প্রধান মসজিদ কেন্দ্রকরে তৈরি হয় আধ্যাতিক পরিবেশ। বইতে থাকে পুণ্যার্জনের হাওয়া। ওমরা পালনকারীদের পদভারে মুখরিত থাকে মক্কা ও মদিনার পথ-প্রান্তর।


শাবানের শেষভাগ থেকেই শুরু হয় রমজানের প্রস্তুতি। তাই পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে বিশেষ আয়োজনে মেতে ওঠে। শাবানের শেষ দশকে বিনোদনকেন্দ্র বা সাগর-নদীর তীর কিংবা কোনো সবুজ-শ্যামল গ্রামে আয়োজন করা হয় ‘শাবানিয়া’ নামের অনুষ্ঠান। বিদায় জানানো হয় আহারপর্ব। তাছাড়া রাস্তা-ঘাট ও সড়কগুলোতে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে টাঙানো হয় বড় বড় ব্যানার।


ফিলিস্তিনের মসজিদগুলোতে ইফতার-সাহরির ব্যবস্থা:
ইসরাইলের অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন থাকলেও রমজানে ফিলিস্তিনের মসজিদ ও পথ-প্রান্তরে ইফতার, সাহরি ও বিশেষ খাবার হালুয়ার ব্যবস্থা থাকে। এতে অংশগ্রহণ করে নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মুসলিমরা। কোরআন তেলাওয়াত ও রাতব্যাপী সালাত আদায়ের এক মায়াবী পরিবেশ যুগ যুগ ধরে সেখানে বিরাজমান।


সিরিয়ায় রমজানে নতুন সাজ:
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া রমজানে সেজে ওঠে নতুন সাজে। রাস্তাঘাটে বিভিন্ন বিলবোর্ড ও ব্যানারের মাধ্যমে মুসলিমদের রমজানের শুভেচ্ছা জানানো হয়। নানা বর্ণের আলোর প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয় ও বাড়ির ফটক ও পথ-ঘাট। কিশোর-কিশোরীরা মেতে ওঠে আলোর প্রদীপ জ্বালাতে। নানা রকম খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও হালুয়া যাতীয় বিশেষ খাবারের প্রতি এমনিতেই সবার চাহিদা। স্বাদে-গুণে অনন্য এ খাবারের প্রতি সবার আগ্রহও বেড়ে যায় এ মাসে।


মিশরে বিরাজকরে উৎসবমুখর পরিবেশ:
রমজান মাস বরণে মিশরে বিরাজকরে উৎসবমুখর পরিবেশ। রমজানের চাঁদ দেখা গেলে শিশু-কিশোর এমনকি বড়রাও ফানুস হাতে নিয়ে গাইতে থাকে রমজানের গান। সুন্দর জামা পরে একে অপরের সঙ্গে দেখা করে। বলতে গেলে, পুরো রমজানব্যাপী ঈদের আমেজ বিরাজ করে তাদের মাঝে।


আলজেরিয়ায় আগেই বাড়ি-ঘর রং করা হয়:
আলজেরিয়াতে রমজানের আসার আগেই নতুনভাবে রং করা হয় বাড়ি-ঘর। পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন রাখা ঘরের আঙিনা। শাবানের শেষ দিন সন্ধায় চাঁদের সন্ধানে থাকে সবাই। অনেক স্থানে এ সময় ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করা হয়। অনেকে রমজান শুরু হলে ইশার নামাজ আদায় করে পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখতে যায়। অনেক পরিবারে বড়দের থেকে শুরু করে ছোটরা পালাক্রমে ইফতারের আয়োজন করে। এতে তৈরি হয় পারিবারিক বন্ধন ও ভালোবাসা। সবার বিরাজ করে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য।


মৌরিতানিয়ায় কোরআন খতমের জন্য সমবেত হয় সবাই:
মৌরিতানিয়ার মুসলিমরা রমজানের প্রতিদিন পবিত্র কোরআন খতমের জন্য সমবেত হয়। প্রত্যেক এলাকায় তৈরি হয় প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব। তাছাড়া পুরুষরা রমজানের আগেই কেটে ফেলে মাথার চুল। রমজানের প্রথম দিন থেকে নতুনভাবে চুল ওঠা শুরু করে। নিজেদের সন্তানদের বিয়ে দেয় রমজান মাসে। এ সময়ে দাম্পত্যজীবন শুরু করা সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে হয় তাদের কাছে।


চাঁদের ঘোষণা এলে তুর্কিরা আনন্দে মেতে ওঠে:
তুরষ্কে রমজানের চাঁদের ঘোষণা এলে ঘরে ঘরে তৈরি হয় আনন্দরোল। আর ঘরে প্রবীণ বয়সের কেউ থাকলে উৎসবের মাত্রাও হয় খুব বেশি। মেশকের সুবাসে ভরে ওঠে চারিদিক। বাড়ি-ঘর, বাগ-বাগিচা ও পথে-ঘাটে ছেটানো হয় গোলাপের পানি। ফুলের সুঘ্রাণে মেতে ওঠে চারপাশ।


মরক্কোয় একে অপরকে ‘আওশির মাবরুকাহ’ জানায়:
রমজানের চাঁদ দেখা গেলেই মরক্কোর সবাই একে অপরকে ‘আওশির মাবরুকাহ’ বলে শুভেচ্ছা দিতে থাকে। রমজানের প্রথমদিন সাত বার বাঁশি বাজিয়ে জানান দেয় সাহরির সময়। রমজানের প্রত্যেক দশক যেন বরকতময় হয় তাই আওশির মাবরুকাহ বলা হয়।


লাইবেরিয়ায় গান-বাজনা পরিহার করে সবাই:
লাইবেরিয়ায় রমজান মাসে মিউজিকেল গান-বাজনা শোনা পরিহার করে সবাই। গান শুনলে মনে করা হয় সে রোযা রাখেনি। রমজানের আগমনে বিশেষ সুরে গান গায় পুরুষরা। তা শুনে সবার মাঝে তৈরি হয় রমজানের ভাবাবেগ।


ইন্দোনেশিয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেয়া হয়:
রমজানের প্রথম সপ্তাহেই ইন্দোনেশিয়ায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্বিবিদ্যালয়গুলো ছুটি দেয়া হয়। আর বিভিন্ন সংস্থা ছাত্রদের নিয়ে আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠান। রমজানের গুরুত্ববোধ তৈরিতে অনেক প্রোগ্রাম করা হয়। অসহায় ও দারিদ্রদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। সেবামূলক এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয় ছাত্রদের মাধ্যমে।


সুদানে রোজাদারদের বরণ করতে মানুষ অপেক্ষা করেন:
সুদানে মসজিদ ও পথে-প্রাঙ্গণে থাকে ইফতারের ব্যবস্থাপনা। দূরের লোকরা সেখানে গিয়ে ইফতার সম্পন্ন করে। আবার যারা ইফতার তৈরি করতে পারেনি, তারাও সেখানে এসে ইফতার করে। সূর্যাস্তের আগ থেকেই মানুষকে ইফতারের জন্য ডাকা হয়। রোজাদারদের বরণ করতে পথে-ঘাটে থাকে অনেক দল।


ইরানের ধনাঢ্যরা দারিদ্রদের সাহায্যে এগিয়ে আসে:
রমজান মাসে ইরানের ধনাঢ্য বক্তিরা দারিদ্রদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। সবার জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা হয় শহরের বড় বড় মসজিদগুলোতে। শুধু তেহরানের নগরজুড়ে একশটিরও বেশি মসজিদে থাকে ইফতারের ব্যবস্থা। সমাজকল্যাণ প্রকল্পের আওতায় তা বাস্তবায়ন করা হয়। ‘অতিথিদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা’ লেখা থাকে মূল ফটকে।


বিবার্তা/আদনান/আকবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com