রমজানে তওবা করার আমল ও উপকারিতা
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৬
রমজানে তওবা করার আমল ও উপকারিতা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রমজান মাস হলো গুনাহ মাফ করানোর সর্বোত্তম সময়। কোরআন ও হাদিসের আলোকে কীভাবে রমজানে গুনাহ মাফ করানো যায়, তা নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো এ লেখায়।


১. খাঁটি তওবা করা (তাওবাতুন নাসুহা)


আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো। (সুরা আত-তাহরিম: ৮) হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে তওবা করে, আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে এমনভাবে ক্ষমা করে দেন যেন সে কখনো গুনাহ করেনি। (ইবনে মাজাহ: ৪২৫০)


তওবার শর্তসমূহ:
১. গুনাহ থেকে সত্যিকারভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
২. আবার সে গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
৩. গুনাহ থেকে তৎক্ষণাৎ ফিরে আসা।
৪. যদি কারও হক নষ্ট করা হয়, তাহলে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া


২. রমজানের রোজা রাখা। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমাদানের রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ২০১৪, সহিহ মুসলিম: ৭৬০)


রোজার গুরুত্ব:
রোজা মানুষের পাপ দূর করে এবং তাকওয়া অর্জনে সহায়তা করে (সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)। গুনাহ মাফের সুযোগ লাভ হয়।


৩. কিয়ামুল লাইল বা তারাবিহ পড়া


রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমাদানে কিয়ামুল লাইল (তারাবিহ) আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ২০০৮, সহিহ মুসলিম: ৭৫৯)
কিয়ামুল লাইলের ফজিলত
রাতের নামাজ আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এটি গুনাহ মোচনের অন্যতম মাধ্যম।


৪. লাইলাতুল কদরে ইবাদত করা


আল্লাহ বলেন, লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। (সুরা আল-কদর: ৩)


রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও সওয়াবের আশায় ইবাদত করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ২০১৪, সহিহ মুসলিম: ৭৬০)


কীভাবে ইবাদত করবেন?


বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত। নফল নামাজ। জিকির ও দোয়া।


৫. বেশি বেশি দোয়া করা। বিশেষত এই দোয়াটি পড়তে হবে


اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি। অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি: ৩৫১৩)
৬. কুরআন বেশি বেশি পড়া ও তাফসির বোঝা।


রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়। (সহিহ বুখারি: ৫০২৭)
কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত:
প্রতিটি অক্ষরের জন্য ১০ নেকি পাওয়া যায় (তিরমিজি: ২৯১০)। এটি গুনাহ মাফের মাধ্যম।
৭. দান-সদকা করা
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দান-সদকা গুনাহ মোচন করে যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়। (তিরমিজি: ৬১৪)
৮. আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা।


রসলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে, আল্লাহ তার প্রতি রহমত করেন, আর যে তা ছিন্ন করে, আল্লাহ তাকে নিজের রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেন। (বুখারি: ৫৯৮৪)


৯. পাপ কাজ ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা


রমাদানে গুনাহ মাফ করানোর জন্য গুনাহ পরিত্যাগ করাও জরুরি। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করে না, আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই যে সে তার পানাহার ত্যাগ করল। (বুখারি: ১৯০৩)


১০. বেশি বেশি জিকির করা


রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি দিনে ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ পড়ে, তার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়। (বুখারি: ৬৪০৪, মুসলিম: ২৬৯১)
রমাদানের একটা বিশেষ আমল হল ইস্তিগফার। ইস্তিগফারের ২০ টি উপকারিতা রয়েছে যা-


১) আল্লাহ তায়ালার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। ২) রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় আমল। ৩) গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার মাধ্যম। ৪) জান্নাত লাভের মাধ্যম। ৫) অন্তরের অন্ধকার দূর করে। ৬) এর দ্বারা আত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়। ৭) আল্লাহ তা'য়ালার রহমত নাজিল হয়। ৮) কবরের সর্বোত্তম প্রতিবেশী। ৯) এর দ্বারা সবরকম শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ হয়। ১০) হালাল রিজক বৃদ্ধি হওয়ার বিশাল আমল। ১১) নফসকে দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, হতাশা, অবৈধ যৌনক্ষুধা, কুমন্ত্রণা গুনাহের আবর্জনা থেকে পবিত্র করে। ১২) নেক সন্তান লাভের মাধ্যম। ১৩) সর্বরোগের চিকিৎসা। ১৪) এর দ্বারা দুনিয়ায় মানুষের সর্বোত্তম জীবন লাভ হয়। ১৫) এটা গ্রহণযোগ্য আমলের নিরাপত্তা।


১৬) এর দ্বারা বিপদাপদ দূর হয়। ১৭) এর বরকতে মানুষের নিজস্ব আসল মর্যাদা এবং ফজিলত লাভ হয়। ১৮) উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ হয়। ১৯) অন্তর চক্ষু খুলে যায়। ২০) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল - আল্লাহ তা'য়ালার সাথে বান্দার সম্পর্ক ঠিক হয়। (ইলা মাগফিরাহঃ পৃষ্ঠা ৩২২,৩২৩)


রমজান মাস হলো গুনাহ মাফ করানোর শ্রেষ্ঠ সময়। খাঁটি তওবা, রোজা, কিয়ামুল লাইল, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করার মাধ্যমে আমাদের গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই রমাদানে গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার তাওফিক দান করুন, আমিন!


বিবার্তা/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com