ইস্তিগফারে মিলমে যে ফজিলত
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪০
ইস্তিগফারে মিলমে যে ফজিলত
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ইস্তিগফার মানে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। আল্লাহর দরবারে নতিস্বীকার করা। আস্তাগফিরুল্লাহর অর্থ ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।’ আল্লাহ মহান। দয়াশীল। অনুগ্রহশীল। করুণাময়। তার দয়ার কোনো সীমা নেই। তিনি দয়াবান। পরম ক্ষমাশীল। অতি দয়ালু। তিনি ভুলত্রুটি, পাপতাপ যাবতীয় অপরাধ ক্ষমা করেন। দয়া ও করুণা বর্ষণ করেন। বান্দা যখন আল্লাহর দ্বারস্থ হয়, তখন তিনি ক্ষমা ও দয়ার কুদরতি হাত প্রসারিত করেন। বান্দা ইস্তিগফার করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। বান্দা আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ সাড়া দেন।


ইস্তিগফারের ফজিলত


ইস্তিগফার মানে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। আল্লাহর দরবারে নতিস্বীকার করা। ভুল-ত্রুটি ও অন্যায়-অপরাধগুলো ক্ষমা করতে কাকুতি-মিনতি করা। আস্তাগফিরুল্লাহর অর্থ ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।’


কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি, যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে।’ (সুরা: ত্বহা, আয়াত ৮২) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’ (সুরা: নিসা, আয়াত ১১০)


ইস্তিগফার হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূর করে
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, যদি কেউ বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাআলা তাকে সকল প্রকার দুর্দশা থেকে মুক্তি দান করেন, হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ দান করেন। তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (আবু দাউদ)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি তার পাপাচারের জন্য ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিয়মিত আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাইবে, আল্লাহ তাআলা তার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেবেন। তাকে সব বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে সচ্ছলতা ও নিরাপত্তা দান করবেন। সে আল্লাহর রহমতে এমন উৎস থেকে রিজিকপ্রাপ্ত হবে, যা সে চিন্তাও করেনি।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের কোনো গুনাহ ছিল না। তিনি ছিলেন নিষ্পাপ। এরপরও তিনি দিনে-রাতে প্রচুর পরিমাণ ইস্তেগফার পাঠ করতেন। আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে দোয়া করতেন।
হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামকে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর কসম! আমি প্রত্যহ আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তেগফার ও তাওবা করে থাকি।’ (বুখারি, হাদিস ৬৩০৭)
সাইয়েদুল ইস্তিগফারের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যদি কেউ সকাল-সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সঙ্গে সায়িদুল ইস্তেগফার পাঠ করে, সে যদি ওই দিন রাত্রে বা দিবসে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতি হবে।’
রাসুল সা. আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ়বিশ্বাসের সঙ্গে সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে পাঠ করে সারা দিনের কোনো অংশে যদি সে মারা যায়, তবে সে জান্নাতি হবে তাদের প্রতি রাতে পাঠ করে তাহলে রাতে মারা গেলেও সে জান্নাতি হবে। অর্থাৎ সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকাল-বিকাল দুবার পাঠ করলে সারা দিনে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে থাকে তবে সে জান্নাত লাভ করবে।
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের উচ্চারণ
সাইয়েদুল ইস্তেগফার, ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া। মানবজাতি নানা রকম ভুল পাপাচারে লিপ্ত হয়। মহান আল্লাহ তাআলা এসব পাপ ও ভুলগুলো ক্ষমা করার জন্য মানবজাতিকে বিভিন্ন দোয়া ক্ষমা প্রার্থনার নিয়ম শিখিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সবচেয়ে উত্তম একটি দোয়া সাইয়েদুল ইস্তেগফার।



اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْت


সাইয়েদুল ইস্তেগফার আরবি উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আউজু বিকা মিন শাররি মা-সানাআ’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলি। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনবা ইল্লা আনতা।


সাইয়েদুল ইস্তেগফার অর্থ
হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই; আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনারই গোলাম, আর আমি আছি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আমার সাধ্যমতো; আমি আপনার কাছে পানাহ ও আশ্রয় চাই আমার অনাসৃষ্টির অকল্যাণ এবং অপকার ও ক্ষতি হতে। আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি আপনার সব নিয়ামত, আরও স্বীকার করছি আপনার সমীপে আমার সকল অপরাধ; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন, আর অবশ্যই আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই (বুখারি ৬৩২৩ ও মুসলিম)।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার কখন পড়তে হয়
ক্ষমা প্রার্থনার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যখনই পাপের জন্য অনুতপ্ত হবে তখনই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। তবে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে ও রাতে এই দুই সময় পড়া সবচেয়ে উত্তম। রাসুল সা. বলেন, ‘সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে পাঠ করে কেউ যদি দিনে মারা যায় তবে সে জান্নাতি, কেউ যদি রাতে পাঠ করে ওই রাতে মারা যায় তাহলে সে জান্নাতি। এর থেকে বোঝা যায়, সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে ও রাতে দুবার পাঠ করা উচিত।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com